ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কবিগুরুর বিয়ের গল্প

হাবিবুর রহমান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবিগুরুর বিয়ের গল্প

কবি ও কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী

হাবিবুর রহমান স্বপন: রবীন্দ্রনাথের প্রতিভায় দীপ্ত হয়েছে বাংলা সাহিত্য, বাঙালির সংস্কৃতি। কিন্তু ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে স্বীকার করে নিতে হয়েছে তাঁর বংশের উত্তরাধিকার। সেইসঙ্গে যাপন করতে হয়েছে বংশানুক্রমিক ধারায় সামাজিক জীবন। তাঁর উত্তরাধিকার এবং স্বীয় জীবনবৃত্তের সঙ্গে যশোর জেলার ফুলতলা থানার দক্ষিণডিহি গ্রাম (১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে খুলনা জেলার অন্তর্গত) অবিচ্ছিন্নভাবে সম্পৃক্ত। এই গ্রামের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক। কারণ কবির পূর্বপুরুষ বর্তমান খুলনা জেলার রূপসা থানার পিঠাভোগ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। দক্ষিণডিহি গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কারণে কবির পূর্বপুরুষকে আবাসভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সে অন্য প্রসঙ্গ। এটকু শুধু জানিয়ে রাখি, এই গ্রামে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও (তিনি তখনও মহর্ষী হয়ে ওঠেননি)বিয়ে করেছিলেন। পরে কবি নিজেও এ গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেন।

এই ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার আগে দক্ষিণডিহি সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক মনে করছি। গ্রামটির নামকরণ সম্পর্কে দু’টি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সতীশচন্দ্র মিত্রের লেখা ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থে। সতীশচন্দ্র মিত্রের বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে- ‘ডিহি’ শব্দটি ফার্সি দিহি শব্দের অনুপত্তিজাত উচ্চারণ। এর আভিধানিক অর্থ এক তৌজিভুক্ত কয়েকটি মৌজা বা গ্রাম সমষ্টি। দক্ষিণডিহির পূর্ব নাম ছিল ‘পয়োগ্রাম’। এই গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির মৃত্যুর পর, তার দুই পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কারণ পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি। দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার জন্যে পয়োগ্রামের দুই অঞ্চলে দুই ভাই বাস করতে থাকেন। বড় ভাই দক্ষিণানাথ রায়চৌধুরী গ্রামের দক্ষিণাংশে এবং ছোট ভাই নাগনাথ রায়চৌধুরী পয়োগ্রামের উত্তরাংশে বসতি স্থাপন করেন। দক্ষিণানাথ পয়োগ্রামের যে অংশে বসতি স্থাপন করেন সেই অংশটি ক্রমে ‘দক্ষিণডিহি’ নাম ধারণ করে।

গ্রামটির নামকরণের অপর ব্যাখ্যা হচ্ছে, খানজাহান আলী খুলনা অঞ্চলে আসার পর পয়োগ্রামে একটি কসবা বা শহর প্রতিষ্ঠা করেন। শহরের প্রধান রাস্তাটি পয়োগ্রামের ভিতর দিয়ে সোজা পূর্ব দিকে চলে যাওয়ায় রাস্তার উত্তর দিক উত্তরডিহি এবং দক্ষিণ দিক দক্ষিণডিহি নামে চিহ্নিত হয়। এবং সেখান থেকেই নামের উৎপত্তি। গ্রামটির নামকরণ নিয়ে হয়তো আরো অনেক কিংবদন্তী থাকতে পারে। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, এই গ্রামে দক্ষিণানাথ রায়চৌধুরী ছিলেন এবং পরে তাঁর চার পুত্রের কথাও জানা যায়। তারা হচ্ছেন কামদেব রায়চৌধুরী, জয়দেব রায়চৌধুরী, রতিদেব রায়চৌধুরী এবং শুকদেব রায়চৌধুরী। খানজাহান আলী যখন সেই অঞ্চলে যান তখন এই চার ভাই রায়চৌধুরী বংশের প্রধান পুরুষ। দক্ষিণানাথ তখন পরলোকে। অর্থাৎ খানজাহান আলীর আগমনের পূর্বেই গ্রামটি দক্ষিণডিহি নামে পরিচিতি লাভ করে। যাই হোক, এই চার ভাইয়ের মধ্যে রতিদেব এবং শুকদেব ছিলেন পিরালি ব্রাহ্মণ। শুকদেব তার কন্যাকে পিঠাভোগের জমিদার জগন্নাথ কুশারীর সঙ্গে বিয়ে দেন। পিরালি ব্রাহ্মণ ঘরে বিয়ে করার অপরাধে জগন্নাথ কুশারী নিজ সমাজে পতিত হন এবং পিঠাভোগ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি গ্রাম ছেড়ে শ্বশুরের গ্রাম দক্ষিণডিহিতে এসে বসতি স্থাপন করেন। এই জগন্নাথ কুশারী যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ, সে তথ্য প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবনী’র প্রথম খণ্ডে উল্লেখ করেছেন।

কুশারী বংশের দশম পুরুষ জগন্নাথ কুশারী। তার দ্বিতীয় পুত্র পুরুষোত্তম কুশারী থেকেই ঠাকুর বংশের উৎপত্তি। পুরুষোত্তম কুশারীর প্রপৌত্র পঞ্চানন কুশারী জ্ঞাতিদের সঙ্গে কলহ করে পৈতৃক বাড়ি ত্যাগ করে কলকাতার দক্ষিণে গোবিন্দপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। এ সময় ইংরেজদের বাণিজ্য জাহাজ গোবিন্দপুর গ্রামের গঙ্গার তীরে এসে ভিড়ত। পঞ্চানন কুশারী এই জাহাজের মালপত্র নামানো ওঠানোর ঠিকাদারি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই কাজে তিনি স্থানীয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করতেন। শ্রমিকেরা তাকে ‘ঠাকুরমশায়’বলে ডাকত। এ ভাবেই জাহাজের ক্যাপ্টেনদের কাছে পঞ্চানন কুশারী ‘পঞ্চানন ঠাকুর’নামে পরিচিত হন।

পঞ্চানন ঠাকুরের পুত্র জয়রাম ঠাকুর আমিনের চাকরি করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। জয়রাম ঠাকুরের পুত্র নীলমণি ঠাকুর ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা শহরের মেছুয়া বাজার এলাকায় বৈষ্ণবচরণ শেঠের জমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করেন। নীলমণি ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বাড়িটিই কালক্রমে ‘জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। নীলমণি ঠাকুরের তিন পুত্রের মধ্যে রামলোচন ঠাকুর ছিলেন নিঃসন্তান। তার ভাই রামমণি ঠাকুরের পুত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরকে নীলমণি দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। রামলোচন ঠাকুরের মৃত্যুর পর দ্বারকানাথ বৈষয়িক জীবনে যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন সে ইতিহাস রবীন্দ্র সাহিত্যের পাঠকদের অজানা নয়।


দ্বারকানাথের তিন পুত্রের মধ্যে দুই পুত্র অকালে মারা যায়। জ্যেষ্ঠ পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বারো বছর বয়সে ১২২৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে দক্ষিণডিহি গ্রামের পিরালি ব্রাহ্মণ রামনারায়ণ রায়চৌধুরীর ছয় বছরের কন্যা সারদা দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। সারদা দেবীর গর্ভে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পনেরোটি সন্তান জন্মলাভ করে। পঞ্চদশ সন্তানটি অবশ্য বাল্যকালেই মৃত্যুবরণ করে। রবীন্দ্রনাথ তাদের চতুর্দশ সন্তান। দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথের মাতুলালয় এ সম্পর্কিত তথ্য রবীন্দ্র জীবনীকারদের সকলেই উল্লেখ করেছেন। যদিও রবীন্দ্রনাথের মামা বাড়ির প্রকৃত অবস্থান দক্ষিণডিহি গ্রামের কোথায় তা আজো জানা সম্ভব হয়নি।

বিশ বছর অতিক্রান্তের পূর্বেই ঠাকুর পরিবারের ছেলেদের বিয়ে দেওয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বয়স তেইশ হয়ে গেলেও, তাঁর জন্যে উপযুক্ত পাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে জ্ঞানদানন্দিনীর পৈতৃক বাড়ি যশোরের (বর্তমানে খুলনা) নরেন্দ্রপুরে পাত্রীর সন্ধানে এলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী ও জ্ঞানদানন্দিনী। এ প্রসঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনীর কন্যা ইন্দিরা দেবী ‘রবীন্দ্রস্মৃতি’গ্রন্থে লিখেছেন: ‘পূর্ব প্রথানুসারে রবিকাকার কনে খুঁজতেও তাঁর বউঠাকুরানীরা মানে মা আর নতুন কাকিমা (কাদম্বরী দেবী), জ্যোতি কাকা মহাশয় আর রবি কাকাকে সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যশোর যাত্রা করলেন। বলাবাহুল্য আমরা দুই ভাই বোনেও সে যাত্রায় বাদ পরিনি। যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রামে ছিল আমার মামার বাড়ি। সেখানেই আমরা সদলবলে আশ্রয় নিলুম। যদিও এই বউ পরিচয়ের দলে আমরা দুই ভাইবোন থাকতুম না। তাহলেও শুনেছি যে তাঁরা দক্ষিণডিহি চেঙ্গুটিয়া প্রভৃতি আশে পাশের গ্রামে যেখানে একটু বিবাহযোগ্যা মেয়ের খোঁজ পেতেন সেখানেই সন্ধান করতে যেতেন। কিন্তু বোধ হয় তখন যশোরে সুন্দরী মেয়ের আকাল পড়েছিল। কারণ এত খোঁজ করেও বউঠাকুরানীরা মনের মতো কনে খুঁজে পেলেন না। আবার নিতান্ত বালিকা হলেও তো চলবে না। তাই সবশেষে তাঁরা জোড়াসাঁকোর কাছারির একজন কর্মচারী বেণী রায় মশায়ের অপেক্ষাকৃত বয়স্কা কন্যাকেই মনোনীত করলেন।’

এ প্রসঙ্গে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন: ‘১৮৮৩ পূজার ছুটির সময় জ্ঞানদানন্দিনী দেবী উৎসাহী হইয়া বাস্তুভিটা দেখিবার অজুহাতে যশোহর জেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামে যান, উদ্দেশ্য কাছাকাছি পিরালি পরিবারের মধ্যে হইতে বধু সংগ্রহ। জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে কাদম্বরী দেবী, বালিকা ইন্দিরা, বালক সুরেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ চললেন পুরাতন ভিটা দেখিবেন। সেই সময় ফুলতলা গ্রামে বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীকে তাহারা দেখেন, রবীন্দ্রনাথ দেখিয়াছিলেন কি না তাহা জানি না।’
প্রভাত কুমার লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ পাত্রী দেখেছেন কি না তা তিনি জানেন না তবে রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন। ইন্দিরা দেবীও লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে সে যাত্রায় যশোরে এসেছিলেন। কিন্তু পাত্রী দেখা সম্পর্কে মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে সরাসরি অস্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ- ‘‘আমার বিয়ের কোন গল্প নেই। বৌঠানরা যখন বড়োবেশি পীড়াপীড়ি শুরু করলেন আমি বললুম, ‘তোমরা যা হয় কর, আমার কোনো মতামত নেই। তারাই যশোরে গিয়েছিলেন, আমি যাই নি।’
রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে যশোর যাবার কথা কেন অস্বীকার করেছেন সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।

যাই হোক, বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীকে রবীন্দ্রনাথের জন্য পছন্দ করে জ্ঞানদানন্দিনী শ্বশুর মহাশয়কে বিস্তারিত জানালে দেবেন্দ্রনাথ যথারীতি কূল গোত্র ইত্যাদি দেখে বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন মামা ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের পিসিমা আদ্যাসুন্দরী। ২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ, রবিবার, ইংরেজি ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। এ দিন অবশ্য ঠাকুরবাড়িতে একটি দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথের বড় বোন সৌদামিনী দেবীর স্বামী সারদা প্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় শিলাইদহে মারা যান। বিয়ের দিন রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ২২ বছর ৭ মাস ২ দিন। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছে অনুযায়ী কন্যাহ্বানে বিয়ের অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্য পাত্রীর পিত্রালয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কন্যাহ্বানের নিয়মানুযায়ী পাত্রীকে পাত্রের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করা হয়। পাত্রীপক্ষ সদলবলে কলকাতায় চলে আসেন। বেণীমাধব রায়চৌধুরী আত্মীয় স্বজনসহ কলকাতায় একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। এ জন্য কন্যা পক্ষের পাথেয় খরচ বাবদ ষাট টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ বাইশ টাকা তিন পাই খরচ বহন করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঠাকুরবাড়ির সেরেস্তার ক্যাশ বইয়ে সে হিসাব রয়েছে। সেই ক্যাশ বইয়ের হিসাবে আরো জানা যায়, বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও ছাপা হয়েছিল এবং ডাকযোগে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই দীনেশচন্দ্র সেন, নগেন্দ্র গুপ্ত প্রমুখ ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন নিজের হাতে লেখা একটি বিচিত্র রকমের পত্র লিখে। নিমন্ত্রণপত্রটি হুবহু এরকম:
 
‘আগামী রবিবার ২৪শে অগ্রহায়ণ তারিখে শুভদিনে শুভলগ্নে আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ বিবাহ হইবেক। আপনি তদুপলক্ষে বৈকালে উক্ত দিবসে ৬নং জোড়াসাঁকোস্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে উপস্থিত থাকিয়া বিবাহাদি সন্দর্শন করিয়া আমাকে এবং আত্মীয়বর্গকে বাধিত করিবেন।
    ইতি
    অনুগত
    শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’

এই চিঠির উপরের দিকে সচিত্র অ্যাম্বুস করা ছিল, ‘আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু হায়’।

দেবেন্দ্রনাথ ব্রা‏হ্মধর্মের প্রাণপুরুষ হলেও তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল খুলনা অঞ্চলের হিন্দু বিবাহ রীতি অনুসারে। অনুমান করা হয় ঠাকুর পরিবারের আদি নিবাস খুলনা অঞ্চলে ছিল বলেই এটা হয়েছিল। বিয়ের আগে গায়ে হলুদ ও আইবুড়ো ভাতের স্ত্রী-আচার যথানিয়মে পালিত হয়েছিল। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ঘরোয়া’গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘গায়ে হলুদ হয়ে গেল। আইবুড়ো ভাত হবে। তখনকার দিনে ও বাড়ির কোন ছেলের গায়ে হলুদ হয়ে গেলেই এ বাড়িতে তাকে নিমন্ত্রণ করে প্রথম আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হতো। তারপর এ বাড়ি ও বাড়ি চলত কয়েকদিন ধরে আইবুড়ো ভাতের নেমন্তন্ন। মা গায়ে হলুদের পরে রবিকাকাকে আইবুড়ো ভাতের নিমন্ত্রণ করলেন। মা খুব খুশি, একে যশোরের মেয়ে, তায় রবির মা তার সম্পর্কের বোন। খুব ধূমধামে খাওয়ার ব্যবস্থা হল। রবিকাকা খেতে বসেছেন উপরে, আমার বড়ো পিসিমা কাদম্বিনী দেবীর ঘরে, সামনে আইবুড়ো ভাত সাজানো হয়েছে- বিরাট আয়োজন। পিসিমারা রবিকাকাকে ঘিরে বসেছেন, এ আমাদের নিজের চোখে দেখা। রবিকাকা চৌড়দার শাল গায়ে, লাল কী সবুজ রঙের মনে নেই, তবে খুব জমকালো রঙচঙের। বুঝে দেখো, একে রবিকাকা তায়, ওই সাজ, দেখাচ্ছে যেন দিল্লির বাদশা! তখনই তার কবি বলে খ্যাতি, পিসিমারা জিজ্ঞেসে করছেন, কী রে বউকে দেখেছিস, পছন্দ হয়েছে? কেমন হবে বউ ইত্যাদি সব। রবিকাকা ঘাড় হেঁট করে বসে একটু করে খাবার মুখে দিচ্ছেন। আর লজ্জায় মুখে কথাটি নেই।’

রবীন্দ্রনাথের বিয়ের সময় তাঁর মা সারদা দেবী পরলোকে। বাবা মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ মুসৌরী পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান খুব জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছিল- এমন জানা যায় না। রবীন্দ্র-মৃণা

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়