ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যপদ নিয়ে ক্ষোভ

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যপদ নিয়ে ক্ষোভ

ছবির কোলাজ

আমিনুল ইসলাম শান্ত : আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে শিল্পকলা একাডেমিতে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারকা অভিনয় শিল্পীরা সমবেত হচ্ছেন সেখানে। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি জমিয়ে আড্ডাও দিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন সদস্য নিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। আগে সদস্য সংখ্যা ছিল তিনশ। এবার আরো চারশ জনের বেশি যোগ হয়েছে। বর্তমানে অভিনয় শিল্পী সংঘের মোট সদস্য ৭শত ১৮জন। এর মধ্যে ভোটার ৬৬৫জন।

কিন্তু নতুন সদস্যপদ নিয়ে তরুণ ও প্রবীণ অভিনয় শিল্পীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেও সদস্যপদ পাননি। এদিকে সম্প্রতি সদস্য সংগ্রহের সময়ও শেষ।  

এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম না বলার শর্তে এক অভিনেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি সমস্ত শর্ত পূরণ করেই সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সদস্যপদ পাইনি। আমি দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে কাজ করি। টেলিভিশন নাটকেও নিয়মিত কাজ করছি। শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্যাও নেই তবু অজানা কারণেই আমাকে সদস্যপদ দেয়া হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিনয়শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৯৯৯ সাল থেকে টেলিভিশন নাটকে কাজ করি। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে এখনো নিয়মিত। অভিনয় করছি বড় পর্দাতেও। নির্ধারিত সময়ে আমি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন করেছিলাম কিন্তু আমাকে সদস্যপদ দেয়া হয়নি। এটার কারণ একটাই আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অনুরোধ করতে যাইনি। কারো পেছন পেছন ঘুরিনি। জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাই সদস্যও হতে পারিনি।’

কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবার অনেকে অভিমান করে নিরব রয়েছেন। তাদের মতে, অভিনয় শিল্পী সংঘ শিল্পীদের ভালো মন্দ দেখবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ এতদিন কাজ করেও ন্যুনতম এইটুকু পেলাম না। এবার সদস্যপদ দেয়ার বিষয়ে অনেক প্রার্থীরাই তাদের কাছের লোকজনকে সদস্যপদ দিয়েছে শুধু ভোটের জন্য। যারা সদস্যপদ পেয়েছে তাদের চেয়ে, যারা সদস্যপদ পায়নি তাদের যোগ্যতা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এ কাজ করেছেন।    

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন- শহিদুল আলম সাচ্চু। এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘আসলে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। এই সময়ে এই ক্ষোভ নিয়ে কিছু বলার নেই। আমি যদি ক্ষমতায় আসি, আমাকে যদি শিল্পীরা নির্বাচিত করেন তবে যারা সদস্য তারা এবং যারা সদস্য হতে পারেননি তাদের নিয়ে বসব এবং এই সমস্যার সমাধান করব। কারণ যারা সদস্য হতে পারেননি তারাও অভিনয়ের অংশ তাই তাদের বাদ দিলে তো চলবে না।’

এদিকে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন- মীর সাব্বির। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘সব যোগ্যতা থাকার পরও সদস্যপদ না পেলে ক্ষোভ তো থাকবেই। আসলে নতুন জায়গায় নতুন শিল্পী, নতুন স্রোত দরকার। আগে ভোটার ছিল তিনশ, সেখানে দ্বিগুন হয়েছে। তাই প্রত্যাশা তো অনেকেরই থাকবে। যারা এবার হতে পারে নাই, নতুন কমিটি এসে তাদেরকে আবার আহ্বান করবে। আমরা নতুন শিল্পী নেয়ার চেষ্টা করব। ৩টি নাটকে যারা অভিনয় করেছেন, পরিচিত অভিনয়শিল্পী আবেদনকারীর ফর্মে সাইন করেছেন এমন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই কমিটি নতুন সদস্যদের বাছাই করেছেন। তবে এমনও অভিনয়শিল্পী রয়েছেন যারা দুইশ কিংবা তিনশ নাটকে অভিনয় করেছেন কিন্তু তারাও সদস্য নন। আসলে এটি একটি বড় জায়গা তাই ভুল ভ্রান্তিও থাকবে। এসব ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। এবার আবেদন ফর্মে শুধু পরিচিত অভিনয়শিল্পীর স্বাক্ষর লাগত- আমার অনুরোধ থাকবে- আগামীতে শুধু পরিচিত অভিনয়শিল্পীর স্বাক্ষর নয়, থিয়েটারের বিজ্ঞজনেরও স্বাক্ষর থাকতে হবে। একজন অভিনয়শিল্পীর পরিচয় শুধু কয়েকটি টেলিভিশন নাটক হতে পারে না, তার থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ডও থাকতে হবে। এতে করে অনেক জটিলতার অবসান ঘটবে।’

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আহসান হাবিব নাসিম। এ বিষয়ে কথা হয় এ অভিনেতার সঙ্গেও। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার নতুন সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল আটশ জন। এই আটশ আবেদনের মধ্যে বেছে আমরা চারশ জনকে সদস্যপদ দিয়েছি। তুলনামূলকভাবে যাদেরকে মনে হয়েছে এদেরকে সদস্যপদ দেয়া যায়- তাদেরকে দিয়েছি। বাকি চারশ আবেদনপত্র বাদ দিইনি। সেগুলো রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে যে নতুন কমিটি আসবে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এদেরকে সদস্যপদ দিবেন।’

যারা সদস্যপদ পাননি তাদের অনেকে অভিযোগ করেছেন- অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য হওয়ার জন্য যে সব শর্ত পূরণ করতে হয় তার সবই তারাও পূরণ করেছেন তবু তারা সদস্যপদ পাননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শর্ত ছিল, পাঁচটি নাটকে অভিনয় করা, থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড কি, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি, অন্যান্য কর্মশালার ব্যাকগ্রাউন্ড কি এসব আরকি। এখন তো পাঁচটি নাটক তো যে সেই করে ফেলে, এটা পূরণ হলে আমরা তখন এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি, কর্মশালার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি, সিনেমায় অভিনয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি। এ সবকিছু্ বিবেচনা করেই মেম্বারশিপ দিয়েছি। তবে সব যে নিখুঁতভাবে হয়েছে তা বলতে পারব না। হয়তো দুই একজন এমন হতে পারে।’

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন- শহিদুল আলম সাচ্চু, শহীদুজ্জামান সেলিম, ডিএ তায়েব ও গোলাম মোস্তফা। সহসভাপতি পদে আজাদ আবুল কালাম, আদিত্য আলম, ইকবাল বাবু, তারিন জাহান, জাহিদ হোসেন শোভন, তানভীন সুইটি ও রফিকুল্লাহ সেলিম।

সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন- আহসান হাবিব নাসিম, মীর সাব্বির ও সিদ্দিকুর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিলন, আশরাফ কবির, কামাল হোসেন বাবর, নূর মোহাম্মদ, রওনক হাসান ও সুমনা সোমা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়