ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘দু’দিনের যোগী ভাতকে বলে অন্ন’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দু’দিনের যোগী ভাতকে বলে অন্ন’

সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড

বিনোদন প্রতিবেদক : ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি এখন দেশের সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় কাজ করছেন। সম্প্রতিক কালে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা শাকিব-অপুর বিয়ে। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এ দেশের পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের বেকার বলেন শাকিব খান। এছাড়া তিনি একাধিকবার নিজেকে ‘সুপারস্টার’ ও বিশ্বের কাছে নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরছেন বলে দাবি করেন।

এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি বলে আসছিলেন বাংলাদেশে কোনো ভালো টেকনিশিয়ান নেই। এ বিষয়গুলো পরিচালক সমিতিকে ছোট করা হয়েছে বলে কয়েকদিন আগে পরিচালক সমিতি থেকে একটি উকিল নোটিশ পাঠান শাকিব খানের কাছে। শুধু কি তাই! এ বিষয়টির সঠিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সকল পরিচালককে শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ না করার আহ্বান করেন। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই নির্মাতারা নানা ভাবে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন।

এসব কথার রেশ ধরে আজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস লেখেন। রাইজিংবিডি পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘কেউ যদি কলকাতায় দু-একটা ছবি করে প্রবাদ অনুযায়ী ধরাকে সরা জ্ঞান না করেন তাহলে বলতে হয় এ যেন সেই ‘দু’দিনের যোগী ভাতকে বলে অন্ন’। যারা বলেন বাংলা চলচ্চিত্র’কে বিশ্বের কাছে নিয়ে যাবেন তাঁরাই আবার বলেন বাংলাদেশে কোনো টেকনিশিয়ান নাই, ভালো কাজ হয়না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই সব কথা শুনে নীরব থাকলে তাঁদের কথাকেই সমর্থন করা হবে বলে এই লেখা-

কলকাতায় বর্তমানে যে-ক’জন স্বনামধন্য পরিচালক আছেন তাঁদের মধ্যে গৌতম ঘোষ, রাজা সেন, বুদ্ধ দাশগুপ্ত, কৌশিক, সৃজিত উল্লেখযোগ্য।

এখানে যারা কলকাতাকে নিয়ে গর্ব করে কথা বলছেন তাঁরা উল্লেখিত ওই সব পরিচালকের ছবি করার সুযোগ পেয়েছেন বলে আমার মনে হয়না। অথচ বাসু চ্যাটার্জির হঠাৎ বৃষ্টির মাধ্যমে ফেরদৌসের কলকাতায় যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ অব্দি সম্মানের সাথেই অব্যাহত রয়েছে। অথচ ফেরদৌস কোনো দিন নিজ দেশের টেকনিশিয়ানদের ছোট করে কোনো কথা কোথাও বলেছেন বলে শোনা যায়নি, শোনা যায়নি সত্যজিত রায় এর অনঙ্গ বৌ, ববিতার মুখ থেকেও। শোনা যায়নি গৌতম ঘোষের মালা তথা চম্পার মুখ থেকেও।

বর্তমানে জয়া আহসান, কলকাতায় সৃজিত এবং কৌশীকের ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন। (যদিও জয়া সৃজিতের রাজ কাহিনী ছবিতে বিতর্কিত একটি দৃশ্যে অভিনয় করে সমালোচিত হয়েছেন।)

এছাড়া মিম, রূহী, তিশা, সাবা, আমানসহ আমাদের দেশের অনেক ছেলে মেয়ে কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং করে যাচ্ছেন, তারাও কোনো দিন নিজ দেশের টেকনিশিয়ানদের কখনো ছোট করে কোনো কথা কোথাও বলেছেন বলে শোনা যায়নি। অনুরূপ কলকাতার অনেক শিল্পী বাংলাদেশে এসে আমাদের পরিচালনায় চলচ্চিত্রে কাজ করছেন, এটা তাঁদের জন্যে যেমন আহামরি কোনো বিষয় না তেমন আমাদের শিল্পীরা কলকাতায় কাজ করার অর্থ স্বর্গ লাভ নয়। অযথা বিষয়টাকে এত বড় করে দেখার কোনো কারণ দেখিনা। এইতো সেদিন ফারুকীর পরিচালনায় কাজ করে গেলেন ইরফান খান, আমার পরিচালনায় কাজ করে গেলেন সমদর্শী দত্ত, তো কি হয়েছে? একজন পরিচালক তার গল্পের প্রয়োজনে যেকোনো দেশ থেকে শিল্পী আনতে পারেন। তেমনি পরিচালকের উপর শিল্পীর আস্থা তৈরি হলে সেও এসে বা যেয়ে কাজ করতেই পারে।

আসেন এবার বলি টেকনিশিয়ান সম্পর্কে :



টেকনিশিয়ান বলতে চলচ্চিত্র নির্মাতাকেই বোঝানো হয়ে থাকে, তিনিই প্রধান টেকনিশিয়ান। একজন পরিচালকের পছন্দেই ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন অনান্য টেকনিশিয়ান এবং শিল্পী। কিন্তু কি আশ্চর্য, নিজেকে উলঙ্গ করে এসব কথা যারা বলেন তাঁরা কি নিজ দেশ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না? আরে ভাই এই দেশে জন্ম নিয়েছেন, খান আতাউর রহমান, জহির রায়হান, কাজী জহির, আজিজুর রহমান, কামাল আহমেদ, চাষী নজরুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, মোর্শেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ, সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, আবু সাঈদের মতো আরো অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

শ্রেষ্ঠ নির্মাতাসহ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরূপ যেমন, আমার রয়েছে দুটি চলচ্চিত্রে মোট নয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং চারটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তেমনি যাদের নাম উল্লেখ করেছি তাঁদের প্রত্যেকের রয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এমন অনেক অর্জন।

অন্যদিকে যারা নিজ দেশের টেকনিশিয়ানদের হেয় করে কথা বলেন তাঁদের আন্তর্জাতিক পুরস্কার না থাকলেও এই দেশের পরিচালকদের হাত ধরে আছে জাতীয় পুরস্কার বা অন্য কোনো পুরস্কার। অতএব বিষয়টা বোঝা উচিত।

এবার আসেন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে ছোট্ট করে বলি :

আজ যারা বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ব দরবারের নিয়ে যাবার কথা বলেন তাঁরা আমাদের চলচ্চিত্রকে কোন চুলায় নিয়ে যাবেন জানিনা। তবে যাদের নাম উল্লেখ করেছি খোঁজ নিয়ে দেখেন আমরা অনেক আগে থেকেই বিশ্ব দরবারে বাংলা চলচ্চিত্রকে সম্মানের সাথে পৌঁছে দিয়েছি এবং দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বরং বলতে পারি আমাদের এই যাত্রায় আপনারা নতুন শরিক হয়েছেন মাত্র।

মনে রাখবেন উপর দিকে থুথু ছোড়া ঠিক নয়, ওতে নিজের গায়েই থুথু পড়ে। ভেবে দেখুন পেছনের কোনো একদিন এই দেশের কোনো একজন পরিচালকের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আপনারও যাত্রা শুরু হয়েছিল। অতএব-যোগী সাজা ভালো, তবে জগেশ্বরকে ভুলে নয়!’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ এপ্রিল ২০১৭/রাহাত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়