অনন্যার অনন্য বাবা
ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বাবা মানেই কর্মব্যস্ত মানুষ। সকালে বেরিয়ে পড়েন আর ফিরেন গভীর রাতে। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভালোবাসা খুনসুটি সব থাকে মাকে ঘিরে।
তবে এমন বাবাও রয়েছেন, যারা শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানের সব দ্বায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। যাদের সন্তানের প্রতি ভালোবাসা থাকে পাহাড়সম। তেমনি একজন বাবা হচ্ছেন, আজম খান। তার একমাত্র কন্যা অনন্যার (১৩) পুরো দেখাশুনার দ্বায়িত্ব তার ওপর। তিনি শুধু বাবা নয়, একই সঙ্গে তিনি মায়ের দায়িত্বও পালন করেন। আজ বাবা দিবসে অনেকের কাছে তিনি হতে পারেন অনুসরণীয় আদর্শ বাবা।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আজম খান। স্বপ্ন দেখেছিলেন, ঘরে আসবে এক ফুটফুটে রাজকন্যা। যাকে গড়ে তুলবেন নিজের মতো করে, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে। যার ভাবনায় থাকবে মানুষের কল্যাণ। গড়ে উঠবে সেবার মানসিকতা। অবশেষে রাজকন্যার আগমন ঘটে ২০০৪ সালে। নাম রাখা হয় ‘অনন্যা’। সেদিন টগবগে যুবক আজম খানের কোলে তার ফুটফুটে প্রিয় শিশুকন্যা। তার কাছে সেটা ছিল জীবনের এক অন্যরকম আনন্দের দিন। কন্যাকে আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন আজম খানের।
তাই কখনো পিতার মমতা, কখনো মায়ের স্নেহ নিয়ে কন্যার পাশে থাকেন তিনি। কন্যার সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাবার থাকছে মূখ্য ভূমিকা। সন্তানের বেড়ে ওঠার পথে স্বপ্ন দেখানো জরুরি বলে মনে করেন আজম খান। তাই তো কন্যার আদর্শ জীবনবোধ গড়তে তিনি কন্যাকে ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখান। বাবার ছায়ায় ভর করে বেড়ে ওঠে কন্যা।
অনন্যার যথাযথ শিক্ষা গ্রহণে সর্বক্ষণ সজাগ বাবা। ভালো স্কুল, ভালো শিক্ষক, ভালো গাইড। তবেই তো ভালো রেজাল্ট। অনন্যা এবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সানি ডেল স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও কন্যার লেখাপড়ায় বাবা নজর রাখেন। কন্যাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, টিচারের কাছে নিয়ে যাওয়া, স্কুলে প্যারেন্টস মিটিংয়ে যোগ দেওয়া, এমনকি কন্যার সহপাঠীদের জন্মদিনের কেককাটা অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকেন আজম খান। সুশিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কন্যার মনোবল বাড়ানো আর সাহস যোগাতে বাবা থাকেন সচেষ্ট।
ঠিক নিজের মতোই সৃজনশীল আর তথ্যসমৃদ্ধ একজন মানুষ হিসেবে কন্যাকে বড় করার ইচ্ছা আজম খানের। তাই তো কন্যার আবদারে ‘না’ নেই বাবার। দেশে-বিদেশে বহু দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন বাবা-কন্যা। ভারতের দার্জিলিং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাবার সঙ্গে ঘুরেছে অনন্যা। দেশের সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ খুব কম দর্শনীয় স্থানই রয়েছে, যা এই বাবা-কন্যা ঘুরেননি। বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কন্যার পছন্দই আজম খানের পছন্দ। এ তো গেল, বাইরের ভ্রমণের কথা। বাবা এবং কন্যার খুব কম ছুটির দিনই থাকে, যা তারা ঘরে বসে কাটান। ছুটির দিন আসার আগেই পরিকল্পনা তৈরি হয়ে যায়, কোথায় যাবেন বাবা-কন্যা। আজম খান মনে করেন, একজন সমৃদ্ধ মানুষের জন্য দেশ ও বিশ্বকে জানাটা অত্যন্ত জরুরি। তথ্যসমৃদ্ধ হতে আর সৃজনশীল মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই।
বাবা। কন্যার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বেড়ে ওঠার পাশে অকৃত্রিম বন্ধু। হাজারো প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করে কন্যাকে বড় করে তোলেন। কন্যা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে বাবার কাছে, আবার বাবাও স্বপ্ন দেখেন কন্যাকে নিয়ে। এই সম্পর্ক যেন ছাড়িয়ে যায় সকল সম্পর্ককে। বাবা আজম খান আর কন্যা অনন্যার বেলায় এই কথাগুলো একেবারেই সত্যি।
‘বাবা তুমি কোথায়? বাবা তুমি কখন আসবা? বাবা তুমি কী গাড়িতে? গাড়ি কী চলছে? রাস্তা কী ফাঁকা? বাবা তুমি কী বাসাতেই আসছ, নাকি অন্য কোথাও যাচ্ছ?’ ফেসবুক স্ট্যাটাসে কন্যার এই কথাগুলো প্রায়ই হুবহু তুলে দেন বাবা আজম খান। তিনি আরো জানিয়েছেন, রাত ৮টার পর থেকে অনন্যা ফোনে এইসব প্রশ্ন করতে শুরু করে। ঠিক একই চিত্র বাবার বেলায়ও। শত ব্যস্ততার মাঝেও কন্যার জন্য সময় বের হয়ে যায় তার। কন্যার পছন্দের গুরুত্ব দেয়া, কন্যার পছন্দের খাবারটি নিয়ে বাসায় ফেরা, এসব যেন আজম খানের প্রিয় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় ‘বাবা দিবস’। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে এই দিবসটি পালনের প্রচলন শুরু হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল, এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসের পালন শুরু হয়। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৮ এর ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান এক গির্জায় পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে ‘বাবা দিবস’ পালন করা শুরু করেন। পরবর্তীতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার ‘বাবা দিবস’ হিসেবে গৃহীত হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুন ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন