ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শস্য বৈচিত্র্যকরণ পুষ্টিতে ইতিবাচক প্রভাব আনে

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শস্য বৈচিত্র্যকরণ পুষ্টিতে ইতিবাচক প্রভাব আনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষিতে শস্য ও খাদ্য বৈচিত্র্যকরণ পুষ্টির ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম। লানসা-ব্র্যাক পরিচালিত দেশের ১১টি জেলার ৫০০ পরিবারের মধ্যে ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, জরিপভুক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কম ওজনের জনসংখ্যা ৪.৫ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘শস্যবৈচিত্র্য, খাদ্যবৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যায়ে পুষ্টির ওপর এর প্রভাব : নির্বাচিত খানার ওপর সমীক্ষা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা অংশীদার লেভারেজিং এগ্রিকালচার ফর নিউট্রিশন ইন সাউথ এশিয়া (লানসা) ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউকেএইড।

‘বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা, ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি ম্যালকম ডিকসন প্রমুখ।

মো. কায়কোবাদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে পুষ্টিসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করা বেশ কঠিন। তাই সরকার পুষ্টির চাহিদার বিষয়টি লক্ষ রেখে উপজেলা পর্যায়ে এখন ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দুস্থ ও অসহায় মানুষদের চালের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার বিতরণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু চাল দিয়ে আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ এক্ষেত্রে আমাদের যেমন সীমিত জমিতে উৎপাদনের সমস্যা আছে, তেমনি ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক ধরনের সমস্যা আছে। তাই চালের ওপর চাপ কমাতে সরকার এখন নতুন জাতের শস্য ফলনে কৃষকদের উৎসাহিত করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, এর পাশাপাশি খাদ্য সংগ্রহের জন্য আধুনিক মজুদ ভাণ্ডার গড়ে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে।’

অধ্যাপক আব্দুল বায়েস গবেষণার সার সংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘এটা সত্যি যে, আফ্রিকাসহ কয়েকটি অনুন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে পুষ্টির ক্ষেত্রে তুলনামূলক উন্নতি ঘটেছে। তবে খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণে কৃষকদের ধান চাষের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা জরুরি।’

তিনি বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহী করে তোলার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গবেষণা জরিপটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন ল্যানসা-ব্র্যাক এর কনসালট্যান্ট ড. উত্তম কুমার দেব ও ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল বায়েস। মোট ১১টি জেলার ১২টি গ্রামের ৫০০টি পরিবার এ সমীক্ষায় অংশ নেয়।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সমীক্ষাকালীন কম-ওজনের পুরুষ জনসংখ্যা ৪.৪ শতাংশ হারে এবং নারী ৫.৩ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে স্বাভাবিক ওজনের জনসংখ্যা ২.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে স্বাভাবিক ওজনের পুরুষ জনসংখ্যা ১.৯ শতাংশ হারে এবং নারী ২.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অধ্যাপক বায়েস তার গবেষণা তথ্য তুলে ধরে বলেন, সমীক্ষাকালে বর্ষার সময় কৃষিজমির ৯৯ শতাংশেরও বেশি ধান চাষে ব্যবহার হচ্ছিল এবং বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময় ৪৫ শতাংশের বেশি জমিতে ধানবহির্ভূত ফসল চাষ হয়েছে।

সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ অনুযায়ী গবেষণা এলাকায় শস্য বহুমুখীকরণের ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় কৃষিখামারের মালিক ও তুলনামূলক বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রয়েছে এমন পরিবারের মধ্যে শস্যবৈচিত্র্যের ব্যাপারে বেশি আগ্রহ রয়েছে।

অর্থমিতির বিশ্লেষণে দেখা যায়, শস্যবৈচিত্র্য খাদ্যবৈচিত্র্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং সেটির প্রভাব পড়ে ব্যক্তির পুষ্টি পরিস্থিতির ওপরে।

তবে গবেষণায় একটি আশঙ্কার দিকও উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, সমীক্ষাকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর একটি অংশের মধ্যে ওজনবৃদ্ধির সমস্যা লক্ষ করা গেছে। এতে দেখা যায়, এসব পরিবারে অতিরিক্ত ওজনের জনসংখ্যা ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের পুরুষ জনসংখ্যা ৩.৯ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশ এবং নারী জনসংখ্যা ৯.৩ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে স্থূল জনসংখ্যা ০.৯ শতাংশ থেকে ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পুরুষ স্থূল জনসংখ্যা বেড়েছে ০.৫ শতাংশ এবং নারী স্থূল জনসংখ্যা বেড়েছে ১.৩ শতাংশ থেকে ২.০ শতাংশ।

এ ছাড়া ‘বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দুধের ভ্যালুচেইনসংক্রান্ত একটি সমীক্ষা’ বিষয়ক উপস্থাপনা দেন ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান ড. সিরাজুল ইসলাম। ‘হাওর এলাকায় শিশুপুষ্টি উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আরেকটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ইউনিটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বর্ণালী চক্রবর্তী। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) এর পক্ষ থেকে ‘গ্রামীণ বাংলাদেশে খাদ্যগ্রহণের ধরনের ওপর কৃষির প্রভাব’ শীর্ষক আরো একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা বিশ্লেষক তাওসিফ সালাহউদ্দিন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়