ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘এরশাদ বেশি দিন জেলে ছিলেন বলে কি খালেদাকেও থাকতে হবে’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এরশাদ বেশি দিন জেলে ছিলেন বলে কি খালেদাকেও থাকতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কারাগারে কয়েক বছর থাকার প্রসঙ্গ তোলায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছেন, একজন এতদিন জেল খেটেছেন বলেই কি আরেকজনকে এতদিন জেল খাটতে হবে? এটা কোনো উদাহরণ হতে পারে না।

রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

শুনানির শুরুতেই খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিলকারী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটা লঘু প্রকৃতির দণ্ড। কোর্টের প্রথা রয়েছে, কেউ নারী হলে এবং সাজা কম হলে আদালত জামিন দিয়ে থাকে।

তিনি জামিন আবেদন থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

এরপর জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের রায় রয়েছে, এ ধরনের লঘু দণ্ডের ক্ষেত্রে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আর জামিনও দেওয়া যাবে না। আপিলকারীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তারা আদালতে দাখিল করেননি।

এ সময় আদালত বলেন, উনারা তো শারীরিক অবস্থার বিষয়টি এফিডেভিট আকারে দিয়েছেন। আপনি যদি অস্বীকার না করেন তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ঠিক আছে।

দুদকের আইনজীবী বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলার আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ২৬ ধারা বিবেচনায় নিয়ে ৪০৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ সাবেক রাষ্ট্রদূত এ টি এম নাজিমউল্লাহর মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এ বিষয়টি তো বিচারিক আদালতের আদেশের অংশে দেখতে পাচ্ছি না। যদিও বিচারক রায়ে অনেক কথাই বলেছেন।

দুদকের আইনজীবী বলেন, আগে তো দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। এরপর আসে দণ্ড দেওয়ার বিষয়টি। আপিলকারীর জামিন আবেদন থেকে দেখতে পাচ্ছি তার কাস্টডি পিরিয়ড (জেলে থাকার সময়) হচ্ছে ২ মাস ৫ দিন। আসামির কাস্টডি পিরিয়ড এবং অপরাধের গভীরতা দেখে তাকে জামিন দেওয়া যায় না। তবে খালেদা জিয়ার বয়স নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। আর জামিন দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আদালতের এখতিয়ার।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, দেশের ইতিহাসে এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে এতিমের টাকা খোয়া গেছে। আর রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে কেউ তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। খালেদা জিয়া ছিলেন সরকারপ্রধানও।

অরফানেজ মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিলম্বের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মামলাটি ২০০৮ সালে দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালে মামলাটি বাতিলের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদন ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এজন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিষ্পত্তি তো দ্রুতই হয়েছে। অনেক মামলা তো বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ, সাক্ষ্য বাতিল, পুনরায় তদন্ত এবং বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কয়েকবার হাইকোর্টে আসলেন আপিলকারী। মামলার বিচার বিলম্বিত করতে এমন কোন ধাপ নেই যে তার আশ্রয় নেওয়া হয়নি। এ কারণে সাড়ে নয় বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে। ২৩৭ কর্মদিবসের মধ্যে ১০৯ বার খালেদা জিয়া সময় নিয়েছেন। ২৬ বার দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের। ফলে এই মামলায় আজকে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলে এই মূল আপিলের শুনানি আর কখনোই সম্ভব হবে না।

তখন আদালত বলেন, এটা আপনি কীভাবে বলেন? এ মামলার দুপক্ষ, শুনানি কেন হবে না?

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি কয়েক বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এখনই খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলে বৈষম্য হবে।

আদালত বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল, এটা কোনো উদাহরণ হলো? একজন এতদিন জেল খেটেছেন বলেই কি আরেকজনকে এতদিন জেল খাটতে হবে? এটা উদাহরণ হতে পারে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের ৮৯ লাখ টাকা তছরুপের কারণে সাড়ে তিন বছর জেল হয়েছে। আর এই মামলায় ২ কোটি টাকার ওপরে অর্থ আত্মসাত হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়