ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিচারকের প্রতি অনাস্থার আদেশ পিছিয়ে বুধবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচারকের প্রতি অনাস্থার আদেশ পিছিয়ে বুধবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন পিছিয়ে বুধবার ধার্য করেছে আদালত।

মঙ্গলবার রাজধানীর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত নবগঠিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।

গত সোমবার আসামি মনিরুল ইসলাম খান এবং জিয়াউল হক মুন্না বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিষয়ে উচ্চ আদালতে যেতে যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার ১১টা ২০ মিনিটে বিচারক বিচারকাজ শুরুর জন্য এজলাসে ওঠেন।

শুরুতে দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকাজে আদালতকে সহযোগিতা না করে একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। আদালতের প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই অনাস্থা জানিয়েছেন। এটা তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা জামিন বাড়াতে আদালতে আসেন। কিন্তু যুক্তি উপস্থাপন করবেন না। তাদের আচরণ স্ববিরোধী। এই অবস্থায় আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন।

আইনে যুক্তিতর্কের বিধান নেই, উল্লেখ করে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি আমরা করেছি। আসামিপক্ষও আংশিক যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। মামলাটি ৯ মাস যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আছে। আইনে যেখানে যুক্তিতর্কের বিধান নেই, সেখানে আসামিদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দিয়ে মনে হচ্ছে আমরা ভুল করেছি। তারা যুক্তিতর্ক না করলে আমরা মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করতে আদালতের কাছে অনুরোধ করব।

খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা প্রসঙ্গে এ প্রসিকিউটর বলেন, কারাগারে থাকলে কোনো আসামি বলতে পারেন না, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। কিন্তু খালেদা জিয়া বলছেন। তিনি তার অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব না। তিনি এ সুযোগ  নিচ্ছেন। এভাবে চললে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, এ মামলায় আমরা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যুক্তি উপস্থাপন করতে চাচ্ছি না। তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। খালেদা জিয়া একা চলতে পারেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে গেছেন। তার চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।

এ আইনজীবী আরো বলেন, আমরা গত ২০ সেপ্টেম্বরই বলেছি, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। হাইকোর্ট এখন বন্ধ। খুললে আমরা রিভিশন আবেদন করব। তিনি আগে সুস্থ হোক, এরপর আদালতে আসবেন। সে পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি চান তিনি।

এরপর আসামি মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী মো. আক্তার হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা করব।

এ সময় তিনি বিচারকের প্রতি কোনো আসামি অনাস্থার আবেদন দিলে উচ্চ আদালতে ওই বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার কার্যক্রম আর এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই মর্মে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত দাখিল করে যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মূলতবির আবেদন করেন।

এরপর প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল, আইনজীবী আক্তার হোসেন উচ্চ আদালতের ওই সিদ্ধান্ত চ্যারিটেবল মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে উল্লেখ করে আইনানুগ আদেশ প্রার্থনা করেন।

এরপর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক আদেশ প্রদান করে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) অনাস্থার বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য থাকলেও এদিন দুদক এবং আসামির পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য আদেশে উল্লেখ থাকার প্রয়োজনে ওই আদেশ বুধবার দেওয়া হবে। খালেদা জিয়া জামিনে থাকবেন। তবে তার অনুপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক স্থগিত রাখার আবেদন নামঞ্জুর। আদালত ৩০ মিনিট বিরতি থাকবে এরপর উঠে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুনবে।

এরপর বেলা ১টার সময় পুনরায় বিচারক এজলাসে ওঠার পর খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়াসহ সিনিয়র আইনজীবীরা ১১ মামলায় আসামি। তারা জামিনের জন্য হাইকোর্টে আছেন। তাই মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন সম্ভব নয়। বুধবার পর্যন্ত সময় দিন।

অপর আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে আইনজীবী আক্তার হোসেন কারাগারে ডিভিশন ও দুই দর্শনার্থীকে দেখা করার অনুমতির আবেদন করেন।

এরপর বিচারক খালেদা জিয়ার আইনজীবী মেজবাহর উদ্দেশে বলেন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার সকালে জামিন চাইলেন। তাকে বললাম, বিরতির পর আপনার যুক্তি উপস্থাপন শুনব। উত্তরে আইনজীবী মেজবাহ বলেন, উনি তো হাইকোর্টে চলে গেছেন। জবাবে বিচারক বলেন, তাহলে উনি কি শুধু জামিন চাইতে আদালতে এসেছিলেন। যা হোক সিনিয়র আইনজীবী নেই, ওই কারণে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করলাম। আর আসামি মুন্নার ডিভিশন ও দর্শনার্থীর দেখা করার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

উল্লেখ্য, মামলাটিতে এ আসামির পক্ষে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ওই আদালতে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করা হয়। তবে তার পক্ষে মৌখিক যুক্তি উপস্থাপন বাকি আছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর একই বিচারক বিচার বিলম্বের জন্য খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসছেন না, উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় তার উপস্থিতি মওকুফ করেন। তবে আইনজীবীরা চাইলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবে বলে আদালতের আদেশ রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়