ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘পুলিশ-সন্ত্রাসীর গোলাগুলিতে নিবরাসের হাতে গুলি লাগে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২০ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পুলিশ-সন্ত্রাসীর গোলাগুলিতে নিবরাসের হাতে গুলি লাগে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিন-চারজন যুবক বাইরে বের হয়ে আসে। তাদের মধ্যে একজন ব্যাগ থেকে একটি গ্রেনেড বের করে ছুঁড়ে মারে। আমি দেখে ফেলায় সরে যায়। তবে সঙ্গে থাকা প্রদীপ এবং আলমগীর গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর জখম হয়। আমার পায়েও দুই-তিনটা লেগেছিল। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে নিবরাসের বাম হাতে গুলি লাগে। তখন তারা গেট আটকে ভেতরে প্রবেশ করে।’

সোমবার রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় সাক্ষ্যে এসব কথা বলেন সেদিন হামলায় আহত হওয়া ভাটারা থানার এসআই ফারুক হোসেন।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ সাক্ষীসহ চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। অপর তিন সাক্ষী হলেন- সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের মো. সোহাগ খন্দকার এবং মিরপুর ১৪ নং পুলিশ ক্যাম্পের প্রদীপ চন্দ্র দাস। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৭ মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।

এ নিয়ে মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

এসআই ফারুক বলেন, হলি আর্টিজানের ১০০ গজ দূর থেকে সার্চলাইটের আলো দিয়ে দেখি, সন্ত্রাসীরা ভিতরে উল্লাস করছে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গেট খুলে পুলিশ প্রবেশ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশের দিকে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। গ্রেনেডের আঘাতে ৩০/৩৫ জন আহত হন। আমার পায়ে, হাতে, মুখে, মাথায় ২৬টি স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে। আমার বাম পাশে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন স্যার এবং ডান পাশে এসি রবিউল ইসলাম গ্রেনেডের আঘাতে হন। আমি ইউনাইটেড হাসাপাতাল, সিএমএইচ তারপর থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেসে চার মাস পরে দেশে আসি।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তাকে জেরা করেন। জেরায় তিনি বলেন, নিবরাসকে তদন্ত কর্মকর্তা চিনতে পারলেন না। ডিএনএ টেস্ট করে তাকে চিনতে হলো। আর আপনি তাকে দেখেই চিনলেন? এর  জবাবে এসআই ফারুক কিছু বলেননি।

এর আগে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান তার জবানবন্দিতে বলেন, হামলার খবর পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন। ডিএমপি পুলিশ কমিশনারও সেখানে উপস্থিত হয়ে ব্রিফ করেন। এরপর আমরা হলি আর্টিজান বেকারির গেট অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করি, বিল্ডিংয়ের ভিতর যাওয়া যায়নি। তখন হলি আর্টিজানের মধ্যে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমরাও নিরাপত্তা রক্ষায় পাল্টা গুলি ছুড়ি।  হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। তখন আমি আহত হই। তখন আমরা সবাই দৌড়ে পিছু হটি। বনানী থানার ওসি ঘটনাস্থলে পড়ে যান। এসি রবিউল ইসলামও পড়ে যান। একজন তাকে ধরার জন্য চিৎকার করছিল। তখন দেখি ওসি সালাউদ্দিন চিৎকার করছেন। আমি তাকে ধরি। দেখি তার শরীরে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাড়ে, গলায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ। এরপর তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিছুক্ষণ পর রবিউল ইসলামকেও নিয়ে যাওয়া হয়। তিনিও মারা যান।

এরপর ফারুক আহমেদ তাকে জেরা করেন। তিনি বলেন, চারিদিক থেকে গুলি ছোঁড়ার কারণে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জবাবে ওয়াহিদুজ্জামান সত্য নয় বলে জানান।

মামলার আসামি হলেন- মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, শফিকুল ইসলাম ওরফে খালেদ, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ও হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। এর আগে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। পরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হয়।

২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির এই মামলায় আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছর ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মে ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়