ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শরীরের যে ১৪ গন্ধকে অবহেলা করবেন না (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১১ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শরীরের যে ১৪ গন্ধকে অবহেলা করবেন না (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শরীরের গন্ধ চিকিৎসকদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করতে পারে, যেমন- ক্রন’স রোগ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, লিভার সিরোসিস, সি. ডিফিসাইল ও ক্যানসার। শরীরের ১৪ গন্ধ সম্পর্কে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব, যার  কোনোটি আপনার শরীর থেকে বের হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* বগলে দুর্গন্ধ
যদি গোসল করার পরও আপনার বগল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ না হয়, তাহলে এটি ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির একটি লক্ষণ হতে পারে। ল্যাবফাইন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও কার্ডিওলজিস্ট রবার্ট সেগাল বলেন, ‘ম্যাগনেসিয়াম আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্গানকে দুর্গন্ধমুক্ত করতে সাহায্য করে এবং এটি শারীরিক দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করতেও সহায়ক।’ যখন আমরা অত্যধিক ক্যাফেইন, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাই, আমাদের শরীরের ম্যাগনেসিয়াম মাত্রা কমে যায়। যদি আপনার শরীর থেকে বাজে গন্ধ ছড়ায় এবং অন্যান্য উপসর্গ থাকে, যেমন- মাংসেপশীর ক্র্যাম্পিং, কাঁপুনি অথবা অসাড়তা কিংবা সুঁই বিদ্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি, তাহলে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা জানতে আপনার চিকিৎসককে বলুন যে তিনি যেন আপনাকে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা দেন।

* অধিক শারীরিক দুর্গন্ধ
যদি আপনার ক্রন’স রোগ অথবা আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো ডাইজেস্টিভ ডিসঅর্ডার থাকে, তাহলে আপনি সম্ভবত জিংক ঘাটতিতে আছেন। এই খনিজটি আপনার শরীরকে আবর্জনা ও বিষাক্ত পদার্থ ব্যবস্থাপনা করতে সাহায্য করে, বলেন ডা. সেগাল। তিনি যোগ করেন, ‘যখন কারো মধ্যে ডাইজেস্টিভ ডিসঅর্ডার থাকে, শরীর ভালোভাবে জিংক শোষণ করতে পারে না।’ অত্যধিক জিংক ঘাটতির কারণে আপনার শরীর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। রক্ত পরীক্ষা অথবা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে জিংকের মাত্রা জানতে পারেন। যেহেতু এটি ডাইজেস্টিভ ডিসঅর্ডারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাই এটি কিভাবে ম্যানেজ করা যায় তা সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* ডিম পঁচা গন্ধ
যদি ফ্লসিং, ব্রাশিং অথবা সুগন্ধযুক্ত চুইংগামও এই দুর্গন্ধ দূর করতে না পারে, তাহলে আপনার সম্ভবত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন আছে, ডা. সেগাল সতর্ক করেন। এর জন্য দায়ী হতে পারে এইচ. পাইলরি নামক একটি কমন ব্যাকটেরিয়া যা আপনার পরিপাকতন্ত্রে আবাস গড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ সৃষ্টি করে না, অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি জিইআরডি, সেলিয়াক রোগ, পাকস্থলীর আলসার এবং এমনকি গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের কারণ হতে পারে। আপনার চিকিৎসক ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের জন্য আপনাকে টেস্ট দিতে পারেন এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করা যায়।

* আপেল পঁচা গন্ধ
ডা. সেগাল বলেন, ‘যখন আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না, আমাদের যকৃত কেটোন নামক কেমিক্যাল উৎপাদন করে- এটি হচ্ছে আমাদের শরীরের ইনসুলিনের ক্ষতিপূরণের উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারসাম্যহীন ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিসের সঙ্গে আপেল পঁচা গন্ধের সম্পর্ক রয়েছে। তাই আপনার শরীর থেকে এই দুর্গন্ধ বের হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যদি আপনার ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস নির্ণীত হয়ে থাকে, তাহলে আপনার রক্ত শর্করা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেটোন টেস্ট স্ট্রিপ চেষ্টা করতে পারেন। আবারো বলা হচ্ছে যে আপনার চিকিৎসক আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।

* নাকে দুর্গন্ধ
হাউসটন ইয়ার, নোজ, থ্রোট অ্যান্ড অ্যালার্জি ক্লিনিকের ক্যাথলিন আর. ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘ওরাল ক্যাভিটি এবং সাইনাস ও গলার মধ্যে ঘনিষ্ঠ নৈকট্যতা ও আন্তঃসম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে নাক থেকে গন্ধ ছড়ায়।’ তিনি যোগ করেন, ‘বিভিন্ন স্বাস্থ্য দশার কারণে নাক থেকে গন্ধ ছড়াতে পারে, যেমন- পোস্টন্যাজাল ড্রিপ, টনসিল স্টোন, দাঁতের ক্ষয়, সাইনাস ইনফেকশন ও নাকের পলিপ।’ চিকিৎসকের কাছে যান এবং প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে চিকিৎসককে আপনার সকল উপসর্গ বলুন।

* কানে দুর্গন্ধ
হ্যাঁ, আপনার কানের খইল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। ডা. ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘যদি আপনার কান থেকে প্রায়সময় দুর্গন্ধ আসে, তাহলে আপনি সম্ভত কোনো ইনফেকশনে ভুগছেন- কারণ ইনফেকশন কানকে দুর্গন্ধময় করে তোলে। দুর্গন্ধের আরেকটি কারণ হচ্ছে ইনগ্রোন হেয়ার অথবা সেবাসিয়াস সিস্ট- যখন এই ইরিটেশন বা ইনফেকশন ফেটে যাবে, তখন এর বাইপ্রোডাক্ট দুর্গন্ধ ছড়াবে।’ এই দুর্গন্ধের কারণ শনাক্ত ও চিকিৎসা করতে চিকিৎসকের কাছে যান।

* পায়ে দুর্গন্ধ
আপনার পায়ের দুর্গন্ধের জন্য আপনার জুতা দায়ী নাও হতে পারে। আমেরিকান পোডিয়াট্রিক মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, গ্রীষ্মে কিংবা শীতে প্রতিদিন পা অত্যধিক ঘেমে যাওয়া হতে পারে হাইপারহাইড্রোসিস নামক বিরল কন্ডিশন। এই কন্ডিশনের ফলে আপনার পা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। যদি আপনার পা সবসময় ঘেমে যায় এবং আপনাকে দিনে একাধিকবার মোজা পাল্টাতে হয়, তাহলে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য পোডিয়াট্রিস্টের কাছে যান।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়