ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মানুষের থুতু দিয়ে চলবে ব্যাটারি!

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানুষের থুতু দিয়ে চলবে ব্যাটারি!

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : আধুনিক বিজ্ঞান সম্প্রতি এক আশ্চর্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে। আর তা হলো, বিজ্ঞানীরা এমন একটি অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যেখানে মানুষের মুখের থুতু থেকেই একটি ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যাবে।

ব্রিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি কাগজভিত্তিক ব্যাকটেরিয়া চালিত ব্যাটারি তৈরি করেছেন। মুখের এক ফোটা লালা দিয়েই এই ব্যাটারিটিকে সক্রিয় করা সম্ভব হবে, যা দিয়ে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য এলইডি আলো পাওয়ার জন্য যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।

ব্রিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রটির সহ-লেখক সেউখুন চই বলেন,   ব্যাটারিটিতে ‘এক্সোইলেক্ট্রোজেনস’ নামে একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া কোষ রয়েছে যার ইলেক্ট্রোড এর বাইরের দিক থেকে বহিরাগত ইলেকট্রন উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য, এ সমস্ত ব্যাকটেরিয়াল কোষগুলোকে ব্যবহার না হওয়া পর্যন্ত ফ্রিলে শুকানো হয়। এই ব্যাটারিটি মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশগত অবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

‘এক্সোইলেক্ট্রোজেনস’ মূলত এক ধরনের অণুজীব যাদের একটি ইলেক্ট্রোড সেল দেয়াল এর বাইরেও ইলেক্ট্রন স্থানান্তর করার ক্ষমতা রয়েছে। এ জন্য তাদের যা দরকার তা হলো তাদেরকে খেতে দিতে হবে। চই-এর এই নতুন ব্যাটারিতে লালার দুটি ফাংশন রয়েছে। আর তা হলো, এটি এসব ফ্রোজেন সেলদের নিদ্রা থেকে বিরত রেখে বিক্ষুদ্ধ অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে এবং এটি অণুজীবদের খাদ্য প্রদান করে। ‘এক্সোইলেক্ট্রোজেনস’ এর ওপর থুতু ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যাটারিটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে শুরু হয়। চই বলেন, এই ডিভাইসটি মানব শরীরের কোনো তরল পদার্থ দ্বারা তৈরি হওয়া প্রথম কাগজভিত্তিক জৈব ব্যাটারি।

এটি একটি ডিসপোজেবল, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং পোর্টেবল বায়ো ব্যাটারি, যা কিনা ব্যাকটেরিয়াল বিপাক থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। এই ব্যাটারিটি বায়ো-সেন্সর গুলোর মতো অন্যান্য ডিসপোজেবল কম বিদ্যুত অ্যাপ্লিকেশনের জন্য চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য লালার মতো মানুষের শরীরের তরল পদার্থ ব্যবহার করতে সক্ষম।

এই ডিভাইসটি গর্ভাবস্থার পরীক্ষা, এইচআইভি পরীক্ষা, গ্লুকোজ সেন্সর এবং অন্যান্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে এটি একটি বিশাল সুবিধা নিয়ে আসবে, যেখানে মানুষজন প্রচলিত ব্যাটারি কিনতে অনেক সময় সমর্থ্য হয় না।

এই ব্যাটারিটিতে মাত্র কয়েকটি উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। কাগজ, কার্বন এবং মুদ্রণ মোম দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিটি সহজেই তৈরি করা সম্ভব। চই এর এই কাগজের ব্যাটারি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধবও বটে।

চই গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন এই ব্যাটারি তৈরির লক্ষ্যে যাকে অরিগামি আকারে ভাঁজ করে রাখা যাবে। তিনি বৃহত্তর ডিভাইসগুলোতে আরো ক্ষমতা প্রদান করার জন্য একসঙ্গে ব্যাটারিগুলোকে সংযোগ স্থাপন করতে কাজ করে আসছিলেন। চই বলেন, ব্যাটারি তৈরিতে এই কাগজের ব্যবহার করার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্যটি হল যে, আপনি সহজেই এটি ভাঁজ করতে পারবেন।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়