ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ব্ল্যাক হোলের ছবির নেপথ্যে যিনি

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১২ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্ল্যাক হোলের ছবির নেপথ্যে যিনি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী প্রশংসায় ভাসছেন ২৯ বছর বয়সি এক বিজ্ঞানী, তার অ্যালগরিদমের কারণেই মহাবিশ্ব গবেষণার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) ছবি প্রকাশ সম্ভব হয়েছে।

কেটি বউম্যান নামের এই বিজ্ঞানী একটি অ্যালগরিদম (কম্পিউটার প্রোগ্রামিং) তৈরিতে নেতৃত্বে দেন, যা ব্ল্যাক হোলের ছবি প্রকাশের বিষয়টিকে সম্ভব করেছে।

পৃথিবী থেকে ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ওই ব্ল্যাক হোলের ছবি প্রকাশিত হয়েছে গত ১০ এপ্রিল। এতে করে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোল দেখতে কেমন, তা জানতে পারে বিশ্ববাসী। প্রকাশিত ব্ল্যাক হোলটির আকার প্রায় ৪০ বিলিয়ন কিলোমিটার। পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩০ লাখ গুণ বড়।

ড. বউম্যানের জন্য, ব্ল্যাক হোলের ছবি সৃষ্টি এমন উপলব্ধি যে প্রচেষ্টা এতদিন অসম্ভব বলে মনে করা হতো। নিজের ল্যাপটপে ব্ল্যাক হোলের ছবি লোড করার সেই ঐতিহাসিক সময়টি তাঁর জন্য খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)- ৮টি সংযুক্ত টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক মাধ্যমে ধারণ করা ব্ল্যাক হোলের ছবিটিকে অ্যালগরিদমের সাহায্যে তিনি কম্পিউটারে উপস্থাপন করেন।

এই অ্যালগরিদম তৈরির কাজ কেটি বউম্যান শুরু করেছিলেন তিন বছর আগে, তখন তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানে প্রকল্পটি তিনি পরিচালনা করেন এমআইটি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরি, হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অস্ট্রোফিজিকস এবং এমআইটি হায়স্টাক অবজারভেটরির একটি দলের সহায়তায়। ২৩ বছর বয়সে তিনি গবেষণা দলটির সঙ্গে যুক্ত হোন এবং ২৬ বছর বয়সে নেতৃত্ব দেন।

ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বিবিসি রেডিও ফাইভকে ড. বউম্যান বলেন, ‘আমরা এটি প্রথমবার দেখেছি, আমরা সবাই অবিশ্বাসে ছিলাম। এটি বেশ দর্শনীয় ছিল।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে সহায়ক আবহাওয়া পেয়েছি... আমরা আরো নানা দিক থেকেই ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছিলাম।’

ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে এই বিজ্ঞানীর নাম ও কাজ ভাইরাল হয়। রাতারাতি আন্তর্জাতিক তারকা বনে যান তিনি। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অস্ট্রোফিজিকস থেকে।

এমআইটি’র কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব লিখেছে, ‘৩ বছর আগে এমআইটি’র গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী কেটি বউম্যান ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি নতুন অ্যালগরিদম তৈরির নেতৃত্ব দেন। আজ, সেই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।’



ড. বউম্যান বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার ও গণিত বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার দলের সকলেই এই কৃতিত্বের সমান অধিকারী বলে তিনি জানান।

অ্যান্টার্কটিকা থেকে চিলি পর্যন্ত ৮টি টেলিস্কোপের সহায়তায় ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি ধারণের প্রচেষ্ঠায় ২০০ জনের বেশি বিজ্ঞানীদের একটি দল কাজ করেছেন। ডা. বউম্যান সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের কেউই এটি একা করতে পারত না। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিজ্ঞানীদের যৌথ চেষ্টার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।’

ড. বউম্যানের অ্যালগরিদম ব্ল্যাকহোলের ছবি সৃষ্টিতে যেভাবে সহায়তা করেছে  
ব্ল্যাকহোলের ছবি ধারণ করার জন্য কোনো একক টেলিস্কোপ যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তাই ইন্টারফেরোমেট্রি নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে আটটি টেলিস্কোপের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। টেলিস্কোপের থেকে পাওয়া তথ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টারের শত শত হার্ড ড্রাইভে রাখা হয়। টেলিস্কোপের এসব তথ্য থেকেই প্রকাশের উপযোগী ছবি তৈরি করা হয় ড. বউম্যানের অ্যালগরিদমের মাধ্যমে। অর্থাৎ, টেলিস্কোপের তথ্যকে ছবিতে রূপান্তর করা হয় অ্যালগরিদমের সহায়তায়। অ্যালগরিগমের ফলাফলগুলোর সত্যতা নিশ্চিতে বিজ্ঞানীদের চারটি পৃথক দল তা বিশ্লেষণ করে।

ডা. বউম্যান বলেন, ‘ফলাফল বিশ্লেষণে আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং প্রকৌশলীদের একটি দল এতোদিন যা অসম্ভব মনে করা হতো সেটি অর্জন করতে পেরেছে।’

প্রথমবারের মতো ছবি প্রকাশিত হওয়ায় ব্ল্যাক হোল নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণার সুযোগ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র : বিবিসি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়