ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সরকারি অর্থের সুদের হার ৯ শতাংশের বেশি নয়

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি অর্থের সুদের হার ৯ শতাংশের বেশি নয়

বিশেষ প্রতিবেদক : সরকারি অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার আমানত সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখার যে বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে তা নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় এর সুদের হার ৭ থেকে ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কেউ চাইতে পারবে না।

সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য ৪২টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে ব্যাংকিং খাতের ৬০ শতাংশ সরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ফলে একটা অসম প্রতিযোগিতা দেখা যায়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকট কাটাতে সরকারি অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান করা হয়েছে। আগে ৭৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে এবং ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার নিয়ম ছিল।

তিনি বলেন, এ উদ্যোগ আগেও নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে তখন সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি এ বিষয়ে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমনতের সুদের হার আদায় নিয়ে নতুন করে সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি অর্থের আমানতের সুদের হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।  

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নিয়েও অর্থমন্ত্রী কথা বলেন। তিনি বলেন, সব সময় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আকর্ষণীয় রাখা হয়। তবে বর্তমান বাজারে ঋণের সুদের হার ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি হয়ে গেছে। এটা রিভিউ করা উচিত।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে, জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয় এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে। তাই এতে বিনিয়োগকারী নিম্ন আয়ের মানুষদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা যতটা খারাপ বলা হচ্ছে, ঠিক তত খারাপ নয়। তবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণটা একটু বেশি। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা একটু বেশি খারাপ। তাদের সরকারের প্রয়োজনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বিনিয়োগ করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিনিয়োগের জন্য শুধু ব্যাংকের ওপর ভরসা করা হয়। এটা রং। বিনিয়োগের জন্য ফান্ড গঠনের জন্য বিশেষায়িত একটি ব্যাংকও তো আমাদের নেই। সুতরাং এটার সমাধান হচ্ছে শেয়ারবাজার। যেটা আমাদের নেই। আমার মনে হয়, আমরা গত কয়েক বছরে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন করেছি। এখন শেয়ারবাজারে থেকে অর্থ নিয়ে বিনিয়োগের সময় এসেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারের প্রথম দিকেই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। যাতে সরকারি খাতে দুর্নীতি কমে আসে। দেশ থেকে রাতারাতি দুর্নীতি কমানো সম্ভব নয়। এখনো দুর্নীতি রয়েছে। তবে আশা কারছি, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে যাবে।

ডিসিসিআইয়ের করপোরেট ট্যাক্স সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২৫ শতাংশে নামিযে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ব্যাসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে এটা কিছুটা বিবেচনা করা হবে।

ট্যাক্স কার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে দেশে ৭ লাখ লোক কর পরিশোধ করত। বর্তমানে মাত্র ১৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের মধ্যে কর পরিশোধের হার খুবই কম। যারা কর দিচ্ছেন তাদের জন্য ট্যাক্স কার্ডের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে কর পরিশোধ করেন তার জন্য নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ সময় অর্থমন্ত্রী নবীন বিণিয়োগকারীদের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর শেষে এটি ১৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে আনুমানিক ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জ্বালানি, যোগাযোগ, শিক্ষা খাতসহ সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের স্বল্পতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, আর্থিক খাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো খাতের দুর্বলতা প্রভৃতি বিষয়সমূহ দেশের বেসরকারিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে হলে ৮-১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ হার অর্জন করতে হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়