ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কালা মিয়ার দাঁতের মাজন

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০০, ৫ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কালা মিয়ার দাঁতের মাজন

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

রণজিৎ সরকার : গাড়িতে বসে আছি বাঁ পাশের সিটে। বাসস্ট্যাডে যাত্রীরা নামছে-উঠছে। এভাবেই চলছে গাড়ি। গাড়িতে অনেক যাত্রী। ভেতরে প্রচণ্ড গরম। ফার্মগেটে এসে গাড়ি জ্যামে আটকে গেল। বেশ কিছু যাত্রী বিরক্ত হয়ে নেমে গেল। কিছু যাত্রী জ্যাম নিয়ে নানা রকমের কথা বলতে শুরু করল। এর মধ্যে এক হকার উঠল গাড়িতে।

 

উঠেই বলতে শুরু করল, রমজান মাসে বিরক্ত করার জন্য আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে শুরু করছি। কালা মিয়ার কালা দাঁতের মাজন। এই মাজনে দাঁত মাজলে দাঁতে কোনো পোকা হবে না, পুঁজ হবে না, মাঢ়ী ব্যথা হবে না, দাঁত থাকবে বেলি ফুলের মতো সাদা, লোহার মত মজবুত।  দিমু নাকি ভাই একটা, দাম মাত্র ১০ টাকা। কিন্তু কোম্পানির প্রচারের জন্য আমি ১০ টাকা নিচ্ছি না। দাম নিচ্ছি মাত্র পাঁচ টাকা, পাঁচ টাকা, পাঁচ টাকা...

 

প্রচণ্ড গরম যদিও অতিষ্ঠ, তার পরও হকারটার কথাগুলো ভালো লাগছে। কিন্তু কখনো এদের জিনিস কিনি না আমি। হকারটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

 

হঠাৎ এক যাত্রী রেগে বলল, ‘ওই মিয়া, বন্ধ করো তোমার প্যানপ্যান। গরমে অবস্থা কাবাব। নির্দিষ্ট সময় পৌঁছাতে পারছি না। এর মধ্যে প্যানপ্যান শুরু করেছো। যাও গাড়ি থেকে নেমে যাও।’

 

হটারটা খেপে বলল, ‘এটা কি আপনার গাড়ি। গাড়িতে তো আরো অনেক যাত্রী আছে। তারা তো কিছু বলে না। আপনি কেন নামতে বলেন?’

 

লোকটি সিটে থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল, ‘কী! হকার হয়ে এত বড় কথা। এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেব।’

 

মাজন বিক্রেতা চেঁচিয়ে বলল, ‘দাঁত ফেলে দেবেন! এত সোজা। আমি ব্যবহার করি কালা মিয়ার কালা মাজন। এই মাজনে দাঁত মাজলে দাঁতে কোনো পোকা হবে না, পুঁজ হবে না, মাঢ়ী ব্যথা হবে না, দাঁত থাকবে বেলি ফুলের মতো সাদা, লোহার মতো মজবুত। দেব নাকি একটা? মাত্র পাঁচ টাকা। মজা পেলে লাইক দেবেন। আমার কাছে থেকে কালা মিয়ার কালো দাঁতের মাজন নেবেন।’

 

লোকটি হঠাৎ থেমে গেল। আর কোনো কথা বলল না। সে হয়তো বুঝতে পেরেছে, হকারদের সঙ্গে কথায় বলে পারা যাবে না।

 

হকারটা তিনটি দাঁতের মাজনের প্যাকেট বিক্রি করে নেমে গেল।

 

হকারটা নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওনার পাশে বসা লোকটা বলল, ‘হকাটাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি আপনার। কারণ কী জানেন, এটা তো ওর ব্যবসা। এই ব্যবসা করেই জীবনযাপন করে ও।’

 

লোকটা বলল, ‘গরমে আর জ্যামে বসে ভালো লাগছে না। সেজন্যই তো মাথা খারাপ হয়েছে। অধৈর্য হয়ে রাগে বলে ফেলেছি। বুঝতে পারার পর চুপ থাকলাম।’
‘ঠিক করেছেন।’

 

আমার পাশে বসা লোকটা বলল, ‘পাবলিক গাড়িতে যে কবে ওঠা বন্ধ করতে পারব। তবেই শান্তি। কিছু দিনের মধ্যে একটা প্রাইভেট কার কিনব।’

 

লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম, প্রাইভেট কারের জন্যই ঢাকা শহরের এত জ্যাম।
‘আপনি কি আমাকে প্রাইভেট কার কিনতে মানা করছেন।’

মানা করছি না। আপনি একটু সামনে-পেছনে তাকিয়ে দেখেন, কতগুলো গাড়ি। এর মধ্যে পাবলিক গাড়ি কয়টা আর প্রাইভেট কার কয়টা?

 

লোকটা গাড়ির জানালা দিয়ে না তাকিয়ে বলল, ‘আমি তো জানি, আমাকে বলতে হবে না।’
সরকার যদি প্রাইভেট কার চলাচল বন্ধ করে দিত, তাহলে ঢাকা শহরে জ্যাম হতো না।
‘তা অবশ্যই ঠিক বলেছেন। কিন্তু তাই কি কখনো সম্ভব?’

 

সম্ভব। সরকার যদি সবার জন্য নির্দিষ্ট করে পাবলিক গাড়ি দিত। নির্দিষ্ট সময় গাড়িতে উঠবে-নামবে সবাই...

 

‘ঠিক বলেছেন। শুধু ঢাকা শহরের ভেতর করলে ভালোই হতো। কিন্তু আইনটা কে করবে।’
সরকার করবে।

 

‘ভাই, এত সহজ না। এক শ্রেণির মানুষ কখনো মেনে নেবে না এটা।’

 

আজ মেনে না নিক। একটা সময় ঠিকই মেনে নিতে হবে। এই পদ্ধতি ছাড়া ঢাকা শহর চলবে না।
সেই আশায় থাকি। কী আর করা, আমি-আপনি তো কিছু করতে পারব না। আমরা শুধু গাড়িতে বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছু করার নেই।

 

‘কী করবে। যাদের ভাবার কথা তারাই ভাবুক।’
কবে যে তারা ভাববে!
সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। সামনের দিকে চলতে শুরু করল গাড়ি।


 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৫/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়