ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জিএসপি নিয়ে তোফায়েল-বার্নিকাটের ভিন্ন বক্তব্য

আব্দুল্লাহ আল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১২ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিএসপি নিয়ে তোফায়েল-বার্নিকাটের ভিন্ন বক্তব্য

আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুর থেকে ফিরে : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি পাওয়ার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য  দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আর এতে উদ্যোক্তারাও আছেন আশংকায়।

 

রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি ফিরিয়ে দিচ্ছে না বলে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা সব শর্তই পূরণ করেছি। এরপরেও তারা আমাদের জিএসপি ফেরত দিচ্ছে না।’

 

এছাড়া জিএসপি ফিরিয়ে না দিলেও বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

জিএসপি না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন,  ‘যেখানে বারাক ওবামা নাইরোবিতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন, সেখানে সামান্য জিএসপি না পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করার কারণে হয়তো দিচ্ছে না।’

 

তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের কারণে ২০১৩ সালে আমাদের জিএসপি স্থগিত করা হয়। তখন জিএসপি ফিরে পেতে আমাদের ১৬টি শর্ত দিয়েছিল। সব শর্তই বাংলাদেশ পূরণ করে। কিন্তু তার পরও জিএসপি দিচ্ছে না। বাংলাদেশকে তারা রাশিয়ার কাতারে দাঁড় করিয়েছে। অথচ পাকিস্তানে কিছুই নাই। তারপরও তাদের জিএসপি দেওয়া হয়েছে।’

 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার নতুন কোনো দেশকে জিএসপি দেওয়া হয়নি। বরং আগে যে ১২২টা দেশ ছিল তাদেরই আবার এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘জিএসপির জন্য আমাদের অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’

 

তবে জিএসপি নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যুটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।

 

বুধবার গাজিপুরে কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিএসপি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। রাজনৈতিক কারণে সেটি স্থগিত করা হয়নি। আমি আবারো বলি এটা রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নয়।’

 

তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে বাংলাদেশ জিএসপি পাওয়ার উপযুক্ত ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর এর উপযুক্ততা হারিয়েছে। এখন কারখানার পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভালো পরিবেশে কাজ করছে। এ দেশের অনেক কারখানাই এখন আন্তর্জাতিক মানের।  কিন্তু বাংলাদেশ জিএসপির শর্ত এখনো পূরণ করতে পারেনি। তবে ক্রেতা ও উৎপাদক একসঙ্গে কাজ করলে তা ফিরে পাওয়া সম্ভব। আশাকরি বাংলাদেশ পরবর্তী রিভিউতে জিএসপি পাবে।’

 

এ ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করে উদ্যোক্তারা বলেন, জিএসপি ফিরে না পেলে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। এ সুবিধা না পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে চরম ইমেজ সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। এতে বায়াররা বাংলাদেশের পোশাককে অবমূল্যায়ন করবে।

 

এ বিষয়ে তৈরি পাশাক কারখানা ইপিলিয়ন গ্রুপের  পরিচালক মো. জুনায়েদ আবু সালে মুসা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিকমানের পোশাক তৈরি করি। শ্রমিকদের উপযুক্ত বেতন দেই। বায়ারদের দেওয়া সব শর্তও পূরণ করি। তাই জিএসপি ফিরে পাওয়া আমাদের অধিকার।’

 

ইউটা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সাত্তার বলেন, ‘বায়ারদের সব শর্তই আমরা মানি। কিন্তু তারা পণ্যে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সঠিক বিচার করেন না। আমাদের থেকে যে পণ্য ৬ ডলারে কিনে; ঠিক একই মানের পণ্য চীন ও ভিয়েতনাম থেকে ৭ ও ৯ ডলারে কিনে। অথচ এই পণ্য তারা ৬৪ ডলারে বিক্রি করে। এমনিতেই তারা দাম কম দেয়, তার উপর আবার জিএসপি সুবিধাও দেয় না। জিএসপি না দিলে তাদের উচিৎ পণ্যের দাম বেশি দেওয়া।’

 

বিজিএমই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন,  ‘রানা প্লাজা ধসে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। রফতানিকারকরা সে ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কাজের পরিবেশ ও মানের দিক থেকে বর্তমানে কারখানা অনেক উন্নত হয়েছে। কর্মীদের বেতন বোনাস নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে জিএসপি সুবিধা না পাওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য ক্ষতি। কারণ এ সুবিধা না পেলে আমরা ইমেজ সংকটে পড়বো। এতে আমাদের পণ্যে বায়ারদের নেতিবাচক প্রভাব আরো বাড়বে। আশা করি যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ আগস্ট ২০১৫/মামুন/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়