ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ফাইনালের স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের

পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাইনালের স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের

ম্যাচের একটি দৃশ্য (ছবি: আইসিসি)

ক্রীড়া প্রতিবেদক : হলো না, স্বপ্নের ফাইনালে খেলা হলো না বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

 

আগামী রোববার মিরপুরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলবে ক্যারিবীয়রা।  

 

বৃহস্পতিবার মিরপুরে আগে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে ২২৬ রান করে বাংলাদেশ। স্বল্প পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশের বোলাররা লড়াই করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৮ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩ উইকেটে। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার স্বপ্নও তাই সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল।

 

২২৭ রান তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন গিডরন পোপ ও টেভিন ইমলাখ। দুজন মিলে ৩ ওভারেই তোলেন ৩১ রান। যেখানে পোপই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ইমলাখকে (১৪) এলবিডব্লিউ করে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো মিরাজ।

 

নিজের পরের ওভারে এসে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা পোপকেও সাজঘরের পথ দেখান বাংলাদেশ অধিনায়ক। আগের বলেই মিরাজকে ছক্কা মেরেছিলেন পোপ। তাকে বোল্ড করে তাই মিরাজের উল্লাস ছিল বাঁধন হারা। ২৫ বলে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৮ রান করেন পোপ। অবশ্য সালেহ আহমেদ শাওন ক্যাচ না ছাড়লে ব্যক্তিগত ২৩ রানেই ফিরে যেতে পারতেন এই বাঁহাতি।

 

দ্রুত ২ উইকেট হারালেও তৃতীয় উইকেটে কাচি কার্টিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার। দুজন মিলে দলকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যান। অবশেষে কার্টিককে ফিরিয়ে ৬২ রানের জুটি ভাঙেন শাওন। ২২ রান করা কার্টিকে বোল্ড করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

 

এরপর ক্যারিবীয় অধিনায়ক হেটমায়ার শামার স্প্রিঙ্গারের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে অনেকটা এগিয়ে নেন। হেটমায়ার ফিফটিও তুলে নেন। তবে দলীয় ১৪৭ রানে হেটমায়ারকে (৬০) ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। হেটমায়ারের দারুণ এক ক্যাচ নেন সাইফ হাসান।

 

পঞ্চম উইকেট স্প্রিঙ্গার ও গুলির ব্যাটে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে একই ওভারে গুলির সঙ্গে নতুন ব্যাটসম্যান কেমো পলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন সালেহ আহমেদ শাওন। গুলিকে এলবিডব্লিউ করার পর পলকে বোল্ড করেন তিনি। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ৭২ বলে ৪৬ রান, হাতে ৪ উইকেট। পরে আরো ১ উইকেট হারালেও স্প্রিঙ্গারের অপরাজিত ৬২ রানের সুবাদে ৮ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।    

 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কুয়াশায় ঢাকা ছিল মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। এর মাঝেই সবাইকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচের আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ সামলানোই হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাটিংয়ে নেমে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান ব্যর্থই বলা যায়।

 

ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে গতিময় বোলার আলজারি জোসেপের একটি বাউন্সার বল পুল করতে গিয়েছিলেন পিনাক ঘোষ, কিন্তু ব্যাটে-বলে এক করতে পারেননি। বল সোজা আঘাত হানে পিনাকের হেলমেটে। মাঠে ফিজিরও থেকে সেবা-শুশ্রূষাও নিতে হয় তাকে।

 

পরের ওভারেই আরেক পেসার চেমার হোল্ডারের শর্ট বলে শট খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন পিনাক। এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি এই বাঁহাতি। ভালো করতে পারেননি তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী সাইফ হাসানও। দলীয় ২৭ রানে জোসেপের বলে স্কয়ার লেগে গুলিকে ক্যাচ দেন সাইফ (১০)।

 

শুরুতেই উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে জয়রাজ শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ৩১ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি এ জুটিও। আরেক পেসার রায়ান জনের বলে শিমরন হেটমায়ারকে ক্যাচ দেন শান্ত। এদিন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ১১ রান।

 

৫৮ রানেই ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জাকির হাসানকে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জয়রাজ। ধীরগতিতে রান তুললেও দুজন দলকে একটু একটু করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু দলীয় ৮৮ রানে পেসার শামার স্প্রিঙ্গারের একটি স্লোয়ার বল জয়রাজের ব্যাটে লেগে স্টাম্প ভেঙে দেয়, বোল্ড। ৫৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৫ রান করেন জয়রাজ।

 

কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ২১২ রান তাড়া করতে নেমে ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের হাল ধরে দারুণ জয় এনে দিয়েছিলেন জাকির হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ জুটি। আজ সেমিফাইনালে ৮৮ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন এই দুজন। কিন্তু এদিন আগে ব্যাটিং করতে নামা দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারেনি এ জুটি। জাকিরের বিদায়ে ২৫ রানের জুটি ভেঙে যায়। হোল্ডারের বলে বোল্ড হন জাকির (২৪)।

 

১১৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তবে ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মিরাজ। এই দুজনের ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটি গড়ে ফেরার সময় ৬০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন মিরাজ। তার ৭৪ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার।

 

মিরাজের বিদায়ের পরের বলে অবশ্য সাইফউদ্দিনও বিদায় নেন। তার ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৩৬ রান। দুটি উইকেটই নেন কেমো পল। এরপর মোসাব্বেক হোসেনের ১৪ ও মেহেদী হাসান রানার ১০ রান শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশকে ২২৬ রানের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। পরে বোলাররাও লড়াই করলেন, কিন্তু ফাইনালে আর ওঠা হলো না বাংলাদেশের।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/পরাগ/আমিনুল 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়