ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সর্বাধিক বিতর্কিত ক্রিকেটারদের একাদশ

সাজ্জাদ হোসেন রকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সর্বাধিক বিতর্কিত ক্রিকেটারদের একাদশ

সাজ্জাদ হোসেন রকি : ক্রিকেট খেলাকে ‘জেন্টালম্যান গেইম’ বা ভদ্রলোকের খেলা বলা হয়। খেলার প্রতি পরতে পরতে সুন্দর সুন্দর সব নিয়ম। খেলাশেষে সবাই করমর্দনও করেন। কিন্তু এই ভদ্রতার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে কিছু অপ্রিয় কাণ্ডও দেখা দেয়। বিভিন্ন ধরনের বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। তখন আলোচনা ছেড়ে সমালোচনার অংশ হয়ে উঠে তাদের এই কাজগুলো। আর বর্তমানে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো ন্যাক্কারজনক কাজ বেড়েই চলেছে। অনেক ক্রিকেটার এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

 

ক্রিকেট বিশ্বের তেমন সব বিতর্কিত ক্রিকেটারদের নিয়েই আজকের আয়োজন বিতর্কিত ক্রিকেটারদের সেরা একাদশ।

 

#উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান :

১. হার্শেল গিবস : সাউথ আফ্রিকার সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবস তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন।

 

২০০১ সালে ভারতের বিপক্ষে একটা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন গিবস। আর এর পেছনে প্রধান পরিকল্পনাকারি হিসেবে ছিলেন তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হেনসি ক্রোনিয়ে। তিনিই টাকার বিনিময়ে ভারতের বিপক্ষে ওডিআই ম্যাচে কম রান করার প্রস্তাব করেন গিবসকে। পরে অবশ্য এই কারণে গিবসকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারত সফরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

 

এছাড়াও ২০০১ সালে ওয়স্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে গাজা সেবনের সময় ধরা পড়েন। তার এইসব আসক্তির কারণে তাকে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়। যার ফলে ক্যারিয়ার ধ্বস নামে।

 

২. কেভিন পিটারসন : মনোমুগ্ধকর খেলা উপহার দিয়ে দর্শকদের নজর কাড়া এই ইংলিশ ক্রিকেটারও বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ছেন।

 

সাবেক ক্রিকেটার নিক নাইট এবং কোচ পিপার মরিসের মর্যাদা হানি করার জন্য টুইটারের মাধ্যমে ক্ষমাও চান। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড থেকে এইসব বিতর্কের জন্য ২০১২ সালে অবসর নেন। অবশ্য তার কিছু দিন পর অবসর ভেঙ্গে ইংল্যান্ড দলে যোগ দেন।

 

 

#মিডল অর্ডার:

৩. মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন : ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সবচেয়ে খারাপ যে কেলেঙ্কারিতে তিনি জড়িয়ে পড়েন তা হল ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত ম্যাচে এক বুকির মাধ্যমে ম্যাচ ফিক্সিং করা। ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আজহার উদ্দিনকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। অবশ্য ২০১২ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। ভারতের হয়ে তিনি ৯৯ টেস্ট এবং ৩৩৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন।

 

৪. মারলন স্যামুয়েলস : ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার ২০০৭ সালে এক বিতর্কে জড়িয়ে আইসিসি কর্তৃক ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ভারত সফরে গিয়েছিল তখন স্যামুয়েলস বুকিদের ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে তার দলের তথ্য সরবরাহ করে দিয়েছিলেন। যদিও ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু একটা ফোনালাপে দেখা যায় বাজিকরদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল।

 

এই ফোনালাপের পর মে মাসে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি স্যামুয়েলসকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন স্যামুয়েলস এবং দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন।

 

 

#অলরাউন্ডার:

৫. হেনসি ক্রনিয়ে : আজহার উদ্দিনের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হেনসি ক্রনিয়ে ২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কেরিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন ধরনের ফোন কল, টেক্সট, প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয় যে ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত সিরিজে ক্রোনিয়ে অনেক ক্রিকেটারকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০০১ সালে তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

 

দুর্ভাগ্যবশত ৬৮ টেস্ট এবং ১৮৮ ওয়ানডে খেলা দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটার এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

 

৬. এন্ড্রু সাইমন্ডস : অস্ট্রেলিয়ান এই প্রতিভাবান অলরাউন্ডার বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় আসা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮ সালে টিম মিটিংয়ে উপস্থিত না থেকে মাছ শিকারে যাওয়ায় দল থেকে বহিস্কার হন। একই বছর ভারতের হরভাজন সিংয়ের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, যেটা ‘মানকি গেইট’ কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত। এছাড়াও মদ্য পানের জন্য আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে প্রত্যাখ্যাত হন।

 

২০১২ সালে ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলার পর অবসরের সিদ্ধান্ত নেন।

 

৭. ক্রিস কেয়ার্নস : নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে হেঁয়ালিপূর্ণ ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। যিনি বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছেন। তার মধ্যে ২০০৮ সালে ভারতের বিদ্রোহী লিগ ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে’ (আইসিএল) যোগদান অন্যতম।সুনিপুণভাবে চন্ডিগড় লায়নস ক্লাবে খেলার সময় ম্যাচ পরিচালনা করেন এবং তিনি যে ম্যাচ ফিক্সিং করেন তা কেউ বুঝতেই পারেনি। পরে তার টিমমেট লু ভিনসেন্টের মাধ্যমে বিষয়টা জানা যায়।

 

 

#বোলার:

৮. শেন ওয়ার্ন : অস্ট্রেলিয়ান এই বোলার মাদক, নারী কেলেঙ্কারি ও বুকিদের সাথে যোগাযোগ রাখার কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসেন। ১৯৯৫ সালে মার্ক ওয়াহের সাথে পিচ এবং আবহাওয়ার তথ্য সরবরাহের জন্য বুকিদের সাথে চুক্তি করে কেলেঙ্কারিতে জড়ান।

 

১৯৯৯ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ খেলার সময় শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুন রানাতুঙ্গাকে মর্যাদাহানিকর কথা বলে ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন। এছাড়াও ২০০৩ বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন। এতোকিছুর পরও তিনি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

 

৯. শোয়েব আখতার : ক্রিকেট বিশ্বের সর্বোচ্চ গতিতে বল করা বোলার শোয়েব আখতার। পাকিস্তানি এই পেসার তার নিচু মানসিকতা, বল টেম্পারিং এবং মাদক কেলেঙ্কারির জন্য বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে সতীর্থ ওয়াকার ইউনুসের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ে দুজনই দল থেকে বহিস্কার হন। একই বছর শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে দল থেকে বহিস্কার হন। এছাড়াও একই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার পল এডামসের সাথে খারাপ আচরণের জন্য ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন।

 

২০০৫ সালে খারাপ আচরণের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ২০০৬ সালে মাঠে মাদক নিয়ে অনুশীলন করায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে।

 

১০. এস শ্রীশান্ত : ভারতের গতি তারকা এস শ্রীশান্ত অদ্ভুত আচরণ এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য মাঠে এবং মাঠের বাইরে পরিচিত। দারুণ মেধাবী এই বোলার বিভিন্ন সময় তার নিজের কিছু স্বভাবের জন্য আলোচনায় এসেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় সতর্ক বার্তা পেয়েছিলেন আইসিসির নিয়ম ভাঙ্গার জন্য। এছাড়াও ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছ থেকেও তার কার্যকলাপের জন্য সতর্ক বার্তা পেয়েছিলেন। কেরালা ক্রিকেট এসোসিয়েশন থেকে তাকে জরিমানা করা হয়েছিল তার রাজ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচে উপস্থিত না থাকায়।

 

২০১৩ সালে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি ক্রিকেটে নিষিদ্ধ আছেন।

 

১১. মোহাম্মদ আমির : ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে ৫ বছর নিষিদ্ধ হন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইতিমধ্যে ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৬/সাজ্জাদ হোসেন রকি/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ