ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পালংশাক জানাবে ল্যান্ডমাইনের উপস্থিতি

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পালংশাক জানাবে ল্যান্ডমাইনের উপস্থিতি

মো. রায়হান কবির : শীতের সবজি হিসেবে পালংশাক আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। পালংশাক খেতে যেমন দারুন তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক। কিন্তু সম্প্রতি এই পালংশাকের অন্য আরেকগুণের কথাও জানা গেল।

এটা এমন একগুণ যা বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। তবে এর সঙ্গে বেশকিছু প্রযুক্তিগত ব্যাপারও যুক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা পালংশাকের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক টিউব যা কার্বন ন্যানো টিউব নামে পরিচিত, যুক্ত করে একে ল্যান্ডমাইন বা মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা শনাক্তকরণের উপযুক্ত করে তুলেছেন। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে বা অন্যান্য শত্রুতার কারণে কেউ যদি মাটিতে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখে আর সেখানে যদি লাগানো থাকে এই ‘বায়োনিক’ পালংশাক তবে এই পালংশাকই আপনার হাতে থাকা বিশেষ ডিভাইস কিংবা স্মার্টফোনে আপনাকে সিগন্যাল দেবে অমুক জায়গায় মাইন পোঁতা আছে।

বিখ্যাত টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি যা বিশ্বজুড়ে এমআইটি নামেই পরিচিত, তাদের গবেষকরা আবিস্কার করেছেন এই অভুতপূর্ব প্রযুক্তি। যাকে এই ইনস্টিটিউটের গবেষকরা নাম দিয়েছেন প্লান্ট ন্যানোবায়োনিকস। কেননা এটি একটি বায়োনিক শাকই বলা চলে।

এই শাকের পাতায় বিজ্ঞানীরা খুব ছোট ছোট কার্বন ন্যানো টিউব স্থাপন করেছেন, যা মাটির পানিতে থাকা বিশেষ একটি রাসায়নিককে শনাক্ত করতে পারে। আর এই রাসায়নিকই সাধারণত থাকে ল্যান্ডমাইনে বা অন্যান্য পুঁতে রাখা বোমায়। যা নাইট্রোঅ্যারোমেটিক নামেই পরিচিত। অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে রাখা বোমায় অবশ্যই নাইট্রোঅ্যারোমেটিক থাকে যা মাটির পানিতে মিশে থাকে।

আর বায়োনিক পালংশাকে স্থাপন করা কার্বন ন্যানো টিউব এবং অন্যান্য প্রযুক্তি এই নাইট্রোঅ্যারোমেটিককে শনাক্ত করতে পারে। ফলে এটা ইনফ্রারেডের সহায়তায় একটি সিগন্যাল পাঠাতে সম্ভব আপনার হাতে থাকা ডিভাইসে। যা আপনাকে অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।


অনেক সময় আমরা দেখি কোনো কোনো কনসার্টে বা মাহফিলে অথবা রাজনৈতিক কোনো সমাবেশে এ ধরনের বোমার ব্যবহার। তাই ডগ স্কোয়াড বা অন্যান্য বোমা ডিটেকশন যন্ত্র হয়তো সকল জায়গায় নেয়া সম্ভব হয়না। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেসব অঞ্চলে যদি এ ধরনের বায়োনিক পালংশাক চাষ করা যায়, তবে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

তবে এই গবেষণার মূল বিষয় ছিল এই ন্যানো টিউবের ব্যবহার। আসলে এই ন্যানো টিউবের ব্যবহার সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই ন্যানো টিউব এরপর থেকে অনেক সূক্ষ্ কাজে ব্যবহার করা যাবে। কেননা একে প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির এক যুগান্তকারী মেলবন্ধন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রাকৃতিক পাতায় প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে যদি এই ধরনের সুবিধা এনে দিতে পারে। তবে সামনে এর বিশাল ব্যবহার হয়তো আমাদের আরো বিস্ময় উপহার দেবে। সত্যি বলতে কি, ন্যানো টিউব একসময় আমাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণাই বদলে দেবে। তা সেটা চিকিৎসা ক্ষেত্রেই হোক কিংবা অন্যকোনো ক্ষেত্রে, অনাগত ভবিষ্যতে এর অপার বিস্ময় দেখার জন্যে অপেক্ষায় থাকুন।

মাইকেল স্ট্র্যানো, এই গবেষণার নেতা এবং এমআইটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক বলেন, এই প্রযুক্তি অনেক মহৎ কাজেও ব্যবহার যাবে। যেমন, গাছের বা পাতার শক্তি ব্যবহার করে আমরা আরো অনেক তথ্য পেতে পারি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খরা। তাই সত্যি সত্যি যদি মানুষ আগে থেকে খরা বা বৃষ্টিহীনতার আভাস পায় তবে সে ব্যাপারে আগে থেকেই সচেতন হতে পারবে এবং তা নিবারণের ব্যবস্থাও নিতে পারবে।

এখন দেখা যাক, এই প্রযুক্তি আমাদের আর কি কি বিস্ময় উপহার দেয়।
 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়