ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মরা পদ্মায় অবৈধ ঘের দিয়ে মাছ চাষ

সোহেল মিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৬ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মরা পদ্মায় অবৈধ ঘের দিয়ে মাছ চাষ

মরা পদ্মা নদীতে বিশাল বাঁশের ঘের

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মরা পদ্মা নদীর উজানচর বদ্ধ জলমহালে দীর্ঘদিন ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। দুই বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য উম্মুক্ত ঘোষণা করলেও কোন তোয়াক্কা না করে তিনি মাছ চাষ করছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচলসহ কৃষি কাজ। মরা পদ্মার এ জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।

 

উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ক্যানেল ঘাট থেকে উজানচর ইউনিয়নের গাজীরডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২৬.৩৬ একর জুড়ে বিশাল এ বদ্ধ জলমহালটির অবস্থান। জলমহালের উজানচর গফুর মন্ডল পাড়া এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকমান গায়ান নামের এক ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিশাল বাঁশের ঘের তৈরি করে অবৈধ ভাবে মাছ চাষ করছেন। তিনি দক্ষিণ উজানচর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

 

২০০৯ সালের সরকারী জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী খাস জলাশয় ও জলমহালসমূহ প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এ জলমহালটির ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। জলমহালটি নিয়ে সরকার ও দক্ষিণ উজানচর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির মধ্যে কয়েক বছর ধরে মামলা চলায় উচ্চ আদালত জলমহালে মাছ চাষের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে প্রায় ৫একর জমি জাল দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করছেন লোকমান গায়ান।

 

এদিকে সাধারণ মানুষ ও জেলেদের দাবির মুখে ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সাংসদ কাজী কেরামত আলী জলমহালটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু সে ঘোষণা কোন গুরুত্বই পায়নি। লোকমান গায়ানরাই দখল করে আছেন সব।

 

দেখা যায়, প্রায় ১৫০০ বাঁশ, সুতি ও কারেন্ট জাল দিয়ে নদীতে বিশাল ঘের তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে বাঁশের তৈরি চারটি বড় বানা, তিনটি নৌকা, নিরাপত্তার দুটি চৌকি ঘর। স্থানীয় আবু সাইদ মন্ডল, মতিয়ার মন্ডল, আকমল শেখ, খালেক খান, মজনু, আরশাদ আলীসহ অনেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার জমির মালিক।

 

আবু সাইদ মন্ডল বলেন, জোরপূর্বকভাবে লোকমান গায়ান জমি দখল করে মাছ চাষ করছেন। এতে জমির মালিকরা কেউ ধান চাষ করতে পারছেন না। এ ছাড়া নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, মৎস্য দপ্তরের অনুমোদনে নদীতে সমষ্টিগতভাবে পেইন বা কেইস কালচার পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে মাছ চাষ করা যায়। দীর্ঘদিন জাল ঘিরে রাখলে তাতে আর্বজনা পচে পরিবেশ দূষণ ও নদীর মাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

লোকমান গায়ান বলেন, ‘ইতিপূর্বে জলমহালে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে মাছ ছেড়েছিলাম। ২ বছর আগে স্থানীয় সাংসদ উম্মুক্ত ঘোষণা করায় লোকসান হয়েছে।’ আদালতে মামলার ব্যাপারে তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি সমিতির পক্ষে রায় হয়েছে। কিন্তু কতটা সত্যি তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শীলা রায় বলেন, ‘বদ্ধ জলমহাল নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলায় আমাদের করার কিছু নেই। আদালত বা সংশি¬ষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে নদী আটকে বা বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা অপরাধ।’

 

 

 

 


রাইজিংবিডি/রাজবাড়ী/২৬ মে ২০১৫/সোহেল মিয়া/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়