ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাইজিংবিডিতে দুই বছর

নিয়াজ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২৫ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাইজিংবিডিতে দুই বছর

নিয়াজ মাহমুদ

নিয়াজ মাহমুদ : হঠাৎ মোবাইল সেটটা বেজে উঠল। রিসিভ করার পরে অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসল-আপনি কি নিয়াজ মাহমুদ? হ্যাঁ, বলে জেনে নিলাম তার পরিচয়। তিনি বললেন, আগামীকাল সকালে আপনার একটা সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) নিয়ে আমাদের অফিসে চলে আসেন।

 

যথারীতি রাইজিংবিডির অফিসে আসার মিশন শুরু। ডেটলাইন বেলা ১১টা। দৈনিক বাংলা মোড়ে প্রিন্টার্স ভবনের ১০তলায় অফিস। অস্বাভাবিক যানজট মোকাবিলা করে আসতে হলো। তাও আবার অফিস পর্যন্ত না। অফিসের নিচ পর্যন্ত। হাতে সময় আছে ৭ থেকে ৮ মিনিট। নিশ্চিন্ত হলাম। কারণ যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারার আভাস পাওয়া গেল।

 

ভবনের নিচে এসে দেখলাম, যান্ত্রিক কারণে লিফটে মানুষ উঠা-নামানোর মহৎ কাজটি বন্ধ রয়েছে। এখন হাতে সময় মাত্র ৬ থেকে ৭ মিনিট। টেনশন একটু বেড়ে গেল। কারণ যথাসময়ে উপস্থিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা। যদিও গতকালের ফোনালাপে বলা ছিল না জাস্ট ১১টায় উপস্থিত থাকতেই হবে। কিন্তু আমি স্থির করলাম ১১টায় উপস্থিত থাকা চাই।

 

আমার নিজের নির্ধারণ করা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া যাবে না। লক্ষ্য অর্জনে ভবনটির ১০তলায় আনুমানিক ৫-৬ মিনিটের মধ্যে হেঁটে উঠে যাই। অভ্যর্থনা কক্ষের ঘড়িটায় বেলা ১১টা বাজতে আরো ৫০ সেকেন্ড বাকি। যাক, কষ্ট স্বার্থক হলো। আত্মতৃপ্তি পেলাম। একক প্রতিযোগিতায় প্রথম হলাম! তবে পুরস্কার তো আজও পেলাম না!

 

মিনিট ১৫ অপেক্ষার পরে উদয় হাকিম ভাই ডাকলেন তার কক্ষে। মিডিয়া অঙ্গনে উদয় হাকিমকে পরিচিত করিয়ে দেওয়াটা মোটেও ঠিক হবে না। তার পরেও বলতে হবে, তিনি একজন সৃজনশীল মানুষ। কর্মঠ ও বুদ্ধিদীপ্ত মহান ব্যক্তিত্ব। সেদিনই এই পাহাড়সম হৃদয়বান মানুষটির সঙ্গে প্রথম পরিচয়। পরিচয় পর্ব শেষে তিনি আমাকে বললেন, আপনি আপনার আগের অফিস থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তবে বেতন, আপনি যেখানে আছেন তার চেয়ে বেশি হবে। কিন্ত কত হবে তা নির্ভর করবে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টের ওপর।

 

কী সেই বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট? জানার অভিব্যক্তি পেশ করলাম রাজিংবিডির সম্মানীত সম্পাদক ও জনকের নিকট। তিনি বললেন, বেসরকারি খাতের একটি (নাম উল্লেখ করলাম না) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সাক্ষাৎকার নিতে হবে। যথারীতি কথা দিয়ে বের হলাম। কিন্তু উদীয়মান এই নিউজ পোর্টালটিতে যোগদান করব কিনা, তা তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম না। তবে এটুকু স্থির করলাম যে, সাক্ষাৎকারটি নিতে হবেই। ওই দিন বিকেলেই কাজটি সেরে ফেললাম। যথারীতি আমার অফিসে (সাবেক অফিস) যাওয়া। কাজের ফাকেঁ উদয় ভাইয়ের দেওয়া কাজটি শেষ করে নিলাম।

 

পরের দিন দুপুর বেলা। রাইজিংবিডির অফিসে। উদয় হাকিম ভাইয়ের কক্ষে। প্রিন্ট করা সাক্ষাৎকারটি হাতে তুলে দিলাম। এখন একটু আনন্দিত লাগছে। আবার ঠিকমতো হলো কিনা, সেজন্য বেশ অস্তিরতাও বোধ করছিলাম। তিন পৃষ্ঠার সাক্ষাৎকারটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিমেষেই পড়ে নিলেন সম্পাদক মহোদয়।

 

নাম সম্বোধন করে তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি আপনার কাছে থেকে এটা আশা করিনি।’ আমি হতাশ। মনে মনে বললাম, স্বল্প সময়ের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার জমা দিলাম। অথচ তিনি এটা আশা করেননি। নিজেকে একটু ছোট মনে হলো।

 

আমার অবস্থা দেখে উদয় হাকিম বললেন, আমি আপনার কাছ থেকে এতটা আশা করিনি। যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে। আপনি ওই এমডির সময় নিতে পারবেন তাও আশা করিনি। গুড, এগিয়ে যান। কবে জয়েন্ট করবেন? আমি উত্তর দেওয়ার আগেই তিনি আবার বললেন, আজই জয়েন্ট করেন। আর সম্মানীর বিষয়টিও স্পষ্ট করলেন। আমি তার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে যোগদান করলাম। শুরু হলো উদয় হাকিম ভাইয়ের সঙ্গে পথ চলা।

 

এসব দুই বছর আগের কথা। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের ১০/১১ তারিখের কথা। নতুন চিন্তা, নতুন অফিস এবং নতুন সহকর্মীদের সঙ্গে শুরু হলো ভালো কিছু শিক্ষার জন্য পথ চলা। তখন অবশ্য রাইজিংবিডি২৪ ডট কম- নামে অনলাইনটি ছিল। একই মাসের ২৬ তারিখ রাইজিংবিডি ডট কম নামে যেকোনো ঘটনার সবশেষ তথ্য পাঠকদের কাছে সত্যনিষ্ঠভাবে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি শুরু হলো।

 

সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি রাইজিংবিডি হয়ে উঠেছে একটি আস্থার জায়গা। পাঠক-সংবাদকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দৃঢ় বন্ধনের। রাইজিংবিডি পরিবার সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের। এই পরিবারের একজন সদস্য হয়ে আমি গর্বিত। পরিবারটি হতে পারে ছোট। হতে পারে কনিষ্ঠ। তবে সবাই কর্মঠ।
চলার পথে পরিবারের কর্তার পরিবর্তন হয়েছে। আসছেন নতুন নতুন সদস্য। সবার কাছ থেকেই অর্জন করেছি অভিজ্ঞতা। ভালোবেসে কিংবা শত্রু মনে করে আমাকে দিয়ে বেশি বেশি কাজ করিয়েছেন। তা আমার বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। যতই কাজ করছি ততই শিখছি। শিখেই যাচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, এখনো কিছুই শিখিনি। সারা জীবনই শিক্ষানবীস হিসেবে একজন সংবাদকর্মী হয়ে কাজ করতে চাই। এ কাজে রাইজিংবিডি পরিবার অতীতের মতো হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আশাবাদী।

 

দুই বছরের মাথায় এসে আজও ভুলতে পারিনি দলনেতা উদয় হাকিম ভাইকে। একজন সফল দলনেতা। যিনি স্বল্প সময়ে অল্প কর্মী নিয়ে একটি নিউজ পোর্টালকে করেছেন জনপ্রিয়। আমার মতো অনভিজ্ঞ সংবাদকর্মীকে করেছেন অভিজ্ঞ। যদিও আমি অভিজ্ঞতার খাতায় নাম উঠাতে পারলাম না।

 

তার মতো একজন দলনেতার খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তাই আমি ধন্য। তার অনুপ্রেরণায়ই একজন ক্ষুদে সংবাদকর্মী হয়ে ওঠা। আর রাইজিংবিডি আজ দেশের প্রথম শ্রেণির অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটি।

 

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে যখন রাইজিংবিডিতে যোগদান করলাম, তখন হতাশার কালো মেঘ আমার মাথার ওপর ঘোরাঘুরি করছে। কারণ একটি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ছেড়ে সদ্য যাত্রা শুরু করা রাইজিংবিডিতে কেন যোগ দিলাম! কিন্তু উদয় হাকিমের পরিকল্পনায় অতি দ্রুত অনলাইনটি মূলধারায় চলে আসে। যা মিডিয়া বাজারে এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত। রাইজংবিডির এমন সফলতার অংশীদার তিনি একাই নন। তবে এক কথায় তার অবদান ভোলার নয়।

 

জনপ্রিয় এই গণমাধ্যমটির শুরু থেকে সঙ্গে থাকাটাও আমার জন্য সৌভাগ্যের। অবশ্য মাঝে মধ্যে অন্যান্য গণমাধ্যম থেকে কাজ করার সুযোগ এসেছে। তা গ্রহণ করিনি। কারণ বললে অবশ্যই, বর্তমান পরিচালনা পরিষদ, নির্বাহী সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদক ও সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা। এ বাঁধন যেন ছেড়ে যাওয়ার নয়। একই সঙ্গে আমার বিশ্বাস, বিন্দু থেকেই সিন্ধু হয়। সেই সিন্ধু হওয়ার যে গল্পটা তৈরি হবে তাতে আমার নামটা উল্লেখ করার জন্য ‘আমার রাইজিংবিডি’ মনে করে কাজ করে যাচ্ছি, সঙ্গে কাজ শেখারও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ধন্যবাদ রাইজিংবিডির অগণিত পাঠকদের, যাদের প্রেরণায় জণপ্রিয় হয়েছে এই গণমানুষের গণমাধ্যমটি।

 

লেখক : অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, রাইজিংবিডি ডট কম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৫/নিয়াজ/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়