ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কাজে সফল হওয়ার জাদুকরী পদ্ধতি

আনোয়ার সাদাৎ কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৮, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:৫৭, ২৯ জুলাই ২০২১
কাজে সফল হওয়ার জাদুকরী পদ্ধতি

পৃথিবীতে যত ব‌্যস্ত মানুষ আছে, তাদের কাজের পদ্ধতি সাধারণত অন‌্য অনেকের সঙ্গেই মিলে যায়। সামনে যখন কোনো কাজ আসে, আমরা সেটা দ্রুত করে ফেলি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা যখন কোনো বাধার সম্মুখীন হই, তখনই সেটি সমাধান করার চেষ্টা করি এবং সামনে এগিয়ে চলি। কিন্তু সেই সমাধানের পদ্ধতি সহজ না কঠিন, সেটা অনেক সময় আমরা ভাবি না। যারা সহজ পদ্ধতিটা জানেন, তারা সফল হন।

আমরা সবাই সফল হতে চাই। তাই কাজ করার সর্বাধিক সহজ এবং দ্রুত ফল লাভের পদ্ধতিটি আমাদের জানতে হবে। এটি আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ‌্যে পৌঁছে দেবে। কোন কাজ থেকে আমরা কী ধরনের ফল পাবো, তা যদি আগে থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, তাহলে কাজটি করা খুবই সহজ। এমন কিছু পদ্ধতি আছে, যেগুলো জানা থাকলে বা কাজে প্রয়োগ করলে যে কোনো ধরনের কাজ সফলভাবে করে ফেলা যায়।

উদাহরণ হিসেবে আমরা দুই ধরনের মানুষের কথা বলতে পারি। এক ধরনের মানুষ আছেন, যাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। তারা জানেন তারা কী করছেন এবং তাদের কাজের সম্ভাব্য পরিণাম কী হবে। তারা নিজে থেকেই উৎসাহী হয়ে অনুপ্রেরণা নিয়ে সহজেই কাজগুলো করতে পারেন। আরেক ধরনের মানুষ আছেন— যারা নিজেরাই জানেন না তারা কী করছেন। এই শ্রেণির মানুষের জন্য কাজটি করা খুবই কঠিন। তারা সম্ভাব্য ফল বয়ে আনতে পারেন না। এখানে আমি কিছু জাদুকরী পদ্ধতির কথা বলবো। এসব পদ্ধতি আপনাকে যে কোনো কাজ দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পাদন করতে সহায়তা করবে।

কাজ যত ছোট হোক বা বড়, অল্প সময়ের জন্য হোক বা দীর্ঘ সময়ের জন্য— কাজের ফল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। এজন্য আমাদের কাজ শুরুর আগেই চিন্তা করতে হবে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি- পৃথিবীর মাত্র তিন ভাগ মানুষ কাগজের ওপর চিন্তা করেন। তারা পরিষ্কারভাবে জানেন তারা কী করছেন। এখন চলুন, কাগজের ওপর চিন্তা বিষয়ক কিছু মজাদার এবং কার্যকরী পদ্ধতি শিখে নেওয়া যাক:

আপনি কী চান নির্ধারণ করুন

প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে প্রত্যেকটি কাজ থেকে আমি কী ধরনের ফল আশা করি। আমি যদি চাকরিজীবী হই, আমাকে জানতে হবে আমার কাছ থেকে ঊর্ধ্বতনরা কেমন ধরনের ফল আশা করেন।

আপনি বসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আগামী সপ্তাহে, আগামী তিন মাসে, আগামী ছয় মাসে, এমনকি বছর বা পাঁচ বছরে আপনার কাছ থেকে, আপনার ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে আপনার বস কেমন ফল আশা করেন সে বিষয়ে তার সঙ্গে পরিষ্কার আলোচনা করতে পারেন।

কাজের পদ্ধতি নিয়ে কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে বসের সঙ্গে পরিষ্কার আলোচনা করে বুঝে নিতে পারেন। এতে আপনার চিন্তাভাবনার একটি পরিষ্কার পথ আপনি পেয়ে যাবেন।

এগুলো অবশ্যই লিখে রাখবেন। না হলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি ছোট্ট একটি উদাহরণ দিতে পারি, যখন কোনো বিল্ডিং বানানো হয়, তখন দেখবেন একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়, যেটাকে আমরা ওই বিল্ডিং-এর নকশা বলি। ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয় বিল্ডিং তৈরি হওয়ার অনেক আগে। পরে দেখা যায় ব্লু প্রিন্টে যেমন আছে, বিল্ডিংটিও তেমনই হয়েছে। আমরা এখান থেকে একটি বিষয় খুব সহজে বুঝতে পারি। প্রতিটি জিনিস দুই বার সৃষ্টি হয়। একবার আমাদের মস্তিষ্কে আমাদের চিন্তা ভাবনায়, পরবর্তীতে আমাদের ধরা-ছোঁয়ার পৃথিবীতে।

এ কারণেই আমাদের কাগজের ওপর চিন্তা করা শিখতে হবে। আপনার চিন্তাভাবনা এবং আপনার সম্ভাব্য উদ্দেশ্যগুলো আপনি কাগজের ওপরে লিখুন। সেটি রিমাইন্ডার হিসেবে প্রতিনিয়ত চেক করুন। এটি হতে হবে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইলের মতো, যা আপনি প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ইনপুট দিয়ে সমৃদ্ধ করছেন।

প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করা

আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজ করি। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, আমরা অফিসে যাওয়ার পর নিজেদের কাজের একটি প্যাটার্ন তৈরি করে কাজ শুরু করি। যদি আমরা আগের রাতে কাজের তালিকা তৈরি করে ফেলি এবং সেটি আমাদের পরের দিন এক্সিকিউট করি, তবে আমাদের কাজের ফল অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে।

এই তালিকা তৈরির কাজে যদি আমরা মাত্র ১০ মিনিট সময় ব্যয় করি, তাহলে সপ্তাহ শেষে দেখা যাবে, কাজের তালিকা করা সপ্তাহের ফল তালিকা না করা সপ্তাহের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। এই ১০ মিনিট সময়ের জন‌্য দেখবেন আপনার কাজের গতি ও প্রকৃতি পুরোটাই বদলে গেছে।

তাই কাগজের ওপর চিন্তার অভ‌্যাস করুন। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যখন আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো কাগজের ওপর নিয়ে আসবেন, তখন আপনার উদ্দেশ্য এবং চিন্তাভাবনা পরিষ্কার হবে।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে সময় বেঁধে নিন

কাজ যত ছোট বা বড় হোক না কেন, প্রতিটি কাজের নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে নিজেই সময় বেঁধে নিন। যদি সময় নির্ধারণ করেন, তবে কাজ শেষ করতে আপনার ভেতর থেকেই এক ধরনের তাড়না আসবে। কাজ সম্পাদনের জন্য আপনি আরও বেশি উৎসাহী হবেন।

যদি সময় নির্ধারণ না করেন, তবে আপনার ভিতরে কাজ শেষ করার জন্য কোনো ধরনের উৎসাহ তৈরি হবে না। মনে হবে, কাজ শেষ করতে হাতে প্রচুর সময় রয়েছে। কোনো না কোনো টালবাহানায় কাজটি থমকে যাবে।

এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো— ছোট-বড় প্রতিটি কাজের জন্যই একটি সময় নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী কাজে লেগে পড়া। আমরা আজকে থেকেই শুরু করতে পারি এবং আমাদের কাজগুলো কত দ্রুত শেষ হচ্ছে সেটা নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারি।

কাজ সম্পাদনের জন্য সম্ভাব্য পথ নির্ধারণ

যখন আপনি সম্ভাব্য কাজের লিস্ট তৈরি করবেন, তখন একইসঙ্গে আপনি চিন্তা করতে পারেন—কাজটি আপনি কীভাবে সম্পাদন করবেন। আমাদের মস্তিষ্ক খুবই ক্ষমতাধর। আপনি যখনই চিন্তা শুরু করবেন, প্রথম দিকে আপনার একটু সময় লাগতে পারে। চিন্তা করা যখন আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে, তখন দেখবেন আপনি অনেক দ্রুত কাজ করার সহজতম পথ বের করে নিতে পারছেন। এটি খুবই সহজ এবং মজাদার একটি পদ্ধতি। আজ থেকেই শুরু করুন, আপনি সত্যিই খুব মজা পাবেন।

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে পরিকল্পনা

আমাদের প্রতিদিনের কাজ একটি বৃহত্তর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই করতে হয়। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের জন্য একটি প্ল্যান করে ফেলা উচিত। বিল্ডিং তৈরির ব্লু প্রিন্টের মতো আমাদের প্রতিদিনের কাজের লিস্ট এই পরিকল্পনাকে ঘিরেই হওয়া উচিত।

যখন আমরা কোনো বড় উদ্দেশ্য সফল করতে কাজ শুরু করি— তখন দেখা যায়, আমাদের অনেক ছোটো ছোটো কাজের মধ‌্য দিয়ে এগুতে হচ্ছে। তাই কোন কাজটি আগে এবং কোনটি পরে করব তা আমাদের ভালো করে জানতে হবে এবং আগে থেকে লিখে রাখতে। আমরা যে প্ল্যান তৈরি করব, সেটি যেন অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, ধরুন ৪০ বছর বয়স্ক কোনো এক ব‌্যক্তির ওজন ১০০ কেজি। তিনি যদি মনে করেন এক মাসে ৩০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলবেন। তাহলে সেটি হবে অস্বাভাবিক এবং কঠিনভাবে বাস্তবায়নযোগ্য।

আমাদেরকে পরিকল্পনা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন সেটি সহজে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যায়। তবেই আমরা কম সময়ে নিজেদের কাজের অনেক বেশি ফলাফল আশা করতে পারব।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিদিন কিছু করা

আমাদের দেশের চাকরিজীবীদের মধ‌্যে খুব সাধারণ একটি সমস্যা দেখা যায়। একটা সময়ে এসে আমরা ভাবি ব‌্যবসা শুরু করব। এটি খুবই ভালো। তবে সমস‌্যাটা থাকে আমাদের ভাবনার ভেতরে। আমরা ভাবি অমুক বছর থেকে ব্যবসাটা শুরু করব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সময়টা চলে আসে কিন্তু ব্যবসা আর শুরু হয় না।

এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো- আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করবেন সেটা পরিপূর্ণভাবে চিন্তা করে একটি প্ল্যান তৈরি করা। সেটার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন কিছু না কিছু কাজ করা। হোক সেটা কয়েকটা ফোন কল বা কয়েকটা ছোট ছোট এসএমএস পাঠানো। প্রতিদিনই আপনার ব‌্যবসার ধরন অনুযায়ী সেটিকে এগিয়ে নিতে বা গুছিয়ে নিতে কিছু না কিছু করতে থাকা। এটি আপনার লক্ষ‌্যের দিকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দেবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ুন

শুধু পরিকল্পনা কোনো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে না। আমরা অনেকেই নিজেদের পরিকল্পনার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে ফেলি। যা আপাত দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও তা নয়। তাই পরিকল্পনা করে বসে থাকলে চলবে না, পরিকল্পনা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব কাজে নেমে পড়তে হবে।

আমরা প্রত্যেকেই সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কঠোর বাস্তবতা হলো- পৃথিবীতে সঠিক সময় বলে আসলে কিছু নেই। সবই সঠিক সময়। এই মুহূর্তে পৃথিবী জুড়ে করোনা মহামারি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। তবু মিলিওনিয়ার হওয়ার প্রতিযোগিতা থেমে নেই। সেই তালিকা বাড়ছেও। মানুষ কোনো না কোনোভাবে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নেয়। 

আপনার যদি কোনো ‍পরিকল্পনা থাকে, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে কাজটিও শুরু করুন। মনে রাখবেন, সঠিক সময় কখনই আসবে না। সঠিক সময় আসলে আপনিই নির্ধারণ করবেন। আপনার কর্মতৎপরতাই বলবে সবসময়ই আসলে সঠিক সময়। তাই নিজের সঠিক সময় নিজেকেই তৈরি করতে হবে এবং সেটিই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তাই যদি কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে চান, তাহলে কাগজের ওপর চিন্তা করার অভ‌্যাস গড়ে তুলুন। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হলে কাজের সূচি লিখে রাখার অভ‌্যাস করুন। কাজের সূচি তৈরি করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমেই কম সময়ে বেশি ফলাফল পাওয়া সম্ভব। কাজগুলো কীভাবে করবেন তা পয়েন্ট আকারে কাগজে লিখে রাখুন। চাইলে কাগজটি পকেটেও রেখে দিতে পারেন। একটি করে পয়েন্ট শেষ করবেন, সেই কাজটির পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখবেন। এরপর নতুন উদ‌্যমে পরের কাজটির দিকে এগিয়ে যাবেন।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আপনার খুব বেশি সময়ও লাগবে না। অভ‌্যাস হয়ে গেলে তো আরও সহজ হয়ে যাবে। এই সামান‌্য সময়ের বদৌলতে হয়তো আপনার জীবনের গল্পই বদলে যাবে।

লেখক : সেলস অ‌্যাডভাইজার, ভিভো মোবাইল, বাংলাদেশ

সনি/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়