ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শহরজুড়ে সন্ধ্যা মালতী

মরিয়ম জাহান নীরা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ১৮ জুলাই ২০২১  
শহরজুড়ে সন্ধ্যা মালতী

- দোস্ত, শোন।
- বল?
- একটা কাহিনি হয়েছে।
- কী হয়েছে?
- কথা আছে না, ওইযে আমাদের এক ব্যাচ জুনিয়র ছিল যে?
- হ্যাঁ, কী হয়েছে ওর? 
- ও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
- হ্যাঁ! আসলেই, নাকি চাপা মারছিস? 
- আরে না। এই যে দেখ চিঠি পাঠিয়েছে। 
একটা হলুদ কাগজ প্রত্যাশার হাতে তুলে দিলো অর্ণব। প্রত্যাশা অভিভূত হয়ে গেলো হলুদ কাগজে লাল কালির হাতের লেখার চারুতা দেখে- 

প্রিয়মুখ আমার,

রোজ ভোরে চা বানিয়ে এনে আপনার শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে, সুপ্রভাত বলে আপনার ঘুম ভাঙাব। প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, বিকেলে ধুম্রজাল উড়ানো চা, নৈশভোজ- আপনার জন্য রান্নাটা আমিই করব‌। রবীন্দ্রসংগীত ছেড়ে খেতে খেতে আপনার সাথে চোখাচোখি করব। অফিসে থাকাকালীন সময়ে হোয়াটসঅ্যাপে খানিকক্ষণ পরপর আপনাকে মেসেজ দিয়ে ভরে ফেলব। আপনি বাসায় ফিরলে আপনাকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানাব। 

সারাদিনের আদ্যোপান্ত ঘটনা আপনাকে শোনাব। আপনি অমনোযোগী শ্রোতা হয়ে উঠলে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকব। আপনি আপনার হৃদয় বিগলিত করা হাসি দিয়ে আমার অভিমান ভাঙাবেন, কেমন? ছুটির দিনগুলোতে উত্তরার রাস্তায় খালি পায়ে আপনার সাথে হাঁটব। কিংবা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে গল্প করব। কোনো এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় আচমকা বজ্রপাত হলে আপনাকে জাপটে ধরে গগনবিদারী চিৎকার দেব। আর যদি শিলাবৃষ্টি হয়, তবে বারান্দার গ্ৰিল দিয়ে হাত বাড়িয়ে আপনার সাথে শিল ধরব। 

প্রত্যহ রজনীতে আপনার জীবনের গল্প শুনতে শুনতে দু’চোখের পাতা এক করব। যদি দেখি জোৎস্না দিয়ে প্রকৃতি স্নান করছে, তাহলে মাঝ রাতে রাস্তায় হাঁটতে যাওয়ার বায়না ধরব। আপনাকে কিন্তু আমার বায়না রাখতেই হবে। তারপর পহেলা বৈশাখে আপনি আমার জন্য লাল চুড়ি কিনে না আনলে আমি কিন্তু গাল ফুলিয়ে বসে থাকব‌। আপনার হৃদয়ের উঠোনে শীতল পাটি বিছিয়ে তপস্যা করতে বসব। আপনাকে খুশি রাখার এই তপস্যা আমরণ চলবে। 

শবে মিরাজ, শবে বরাত, শবে কদর- আমার ঊর্ধ্বহস্ত প্রার্থনাজুড়ে থাকবেন কেবল আপনি। প্রতিজ্ঞা করছি আপনার প্রতি জন্মতিথিতে ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় আপনাকে চমকেই ছাড়ব। আমি আপনার অপছন্দের কাজগুলো পরিহার করে চলব। কারণ আপনি আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি রাগ করেন পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে রাখব যতক্ষণ না রাগ ভাঙছে। আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি প্রহর টুকে রাখব আমার ডায়েরিতে। যখন আমরা বুড়ো থুথ্থোড়ে হয়ে যাব, তখন স্মৃতিচারণ করে ফোকলা দাঁতে হাসব। আপনার হাতটি ধরে চিরদিন আপনার পাশে হাঁটব। এ আমার অঙ্গীকার। আপনি আমাকে আপনার সহধর্মিণী বানাবেন?

ইতি- কথা

- এত সুন্দর স্বীকারোক্তি। ভাই! কী করবি? রাজি হয়েছিস? 
- আরে নাহ।
- কেন? ভালোই তো মেয়ে।
- আরে দোস্ত মেয়ে সুন্দর না।
- সুন্দর না মানে?
 - চেহারা ভালো না ওর। আমি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করব।
- এগুলো কী বলছিস? এটা কোনো কথা? 
- কেন, কী হলো?
- কথা এত শিক্ষিত একটা মেয়ে। ভালো চাকরি করে। আচার-আচরণ, চালচলনের দিক দিয়ে পুরোই অন্যরকম। আর এমন মেয়েকে তুই ফিরিয়ে দিচ্ছিস? 
- চাকরি কেন লাগবে? আমি নিজেই তো চাকরি করি। সেটা দিয়েই সংসার ভালোভাবে চলবে। আমার শুধু একটা সুন্দর মেয়ে লাগবে। 
- অর্ণব, তুই আসলে কথার যোগ্য না। তোর মতো মূর্খকে কেন মেয়েটার পছন্দ হলো আল্লাহ মালুম। 
- মানে? কী বলিস তুই এগুলো?
- পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ বৃষ্টির পর সন্ধ্যার আকাশ যতটা সুন্দর দেখায়, ঠিক ততটাই সুন্দর। সেই সৌন্দর্য দেখার মতো সুন্দর মন তোর নেই। যেদিন তোর এই সংকীর্ণ মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারবি, সেদিন আমার সাথে কথা বলতে আসিস।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়