ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পটচিত্রে নিবেদিত নিখিলচন্দ্র দাস

মোহাম্মদ আসাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৪ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১১:২৪, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
পটচিত্রে নিবেদিত নিখিলচন্দ্র দাস

পটুয়া নিখিলচন্দ্র দাস। তিনি পটের রসদ সংগ্রহ করেছেন তারই জন্মস্থান নড়াইলের গ্রাম-গঞ্জ থেকে। তার কাজে পাওয়া যায় আদি পটের নির্যাস। সুধি সমাজে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার পটচিত্র। 

নিখিলচন্দ্র দাসের সঙ্গে পটচিত্রের সংযোগ শৈশব থেকেই। চারুকলায় পড়ার সময় ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি পট আঁকায় মনোযোগী হন। তার বাবাও পটচিত্র আঁকতেন। কৈশোরে তিনি দেখেছেন আশপাশের  গ্রামের পালরা পট আঁকছেন যত্ন নিয়ে। নড়াইলের প্রতিটি গ্রামেই সৌখিন পটুয়া ছিল। তাদের পটের গানের দল ছিল। সেসব পটের গান হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু সেগুলো আবার প্রাণ পেয়েছে নিখিলচন্দ্রের হাতে। 

নিখিলচন্দ্র পটচিত্রে নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে পটের গান সংগ্রহ করেছেন। তিনি সরস পটের গান সংগ্রহ করেছেন প্রায় দুই হাজারেরও উপরে। এগুলোই তার পটচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে। এছাড়াও আছে রামায়ণ, মহাভারতের পট, রূপকথার পট। নড়াইল অঞ্চলে এগুলো পটচিত্রের জনপ্রিয় ধারা। 

এর বাইরেও নিখিলচন্দ্রের নিজস্ব সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধের পট, সামাজিক পটসহ আরও অনেক বিষয়। তার পটের চরিত্রগুলো গতিময়। প্রতিটি চরিত্রেরই মুখের এক পাশ দেখা যায়। দেখা যায় কেউ সামনাসামনি বসে আছে। কিন্তু তার মুখ এক পাশ হয়ে আছে। রঙ ঝলমলে নিখিল চন্দ্রের পটচিত্র শিল্পরসিকের নজর কেড়েছে। সমাদৃত হয়েছে দেশ-বিদেশে। সম্প্রতি বাংশাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে দিয়ে পটচিত্র আঁকার কর্মশালা করিয়েছে। সেখানে অর্ধশত তরুণ শিল্পী ও চিত্রকলার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

নিখিলচন্দ্র দাসের পটের গানের একটি দল রয়েছে। নড়াইলের পুরনো শিল্পীদের নিয়ে দলটি গড়েছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামে গ্রামে গিয়ে তারা পটের গান পরিবেশন করছেন। রাজধানীতেও কয়েকটি প্রদর্শন করেছেন। পাঁচ-ছয় জনের দল নিয়ে নিখিলচন্দ্র পটের গান পরিবেশন করেন। তিনি মঞ্চে পট হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। এক নারী নেচে নেচে হাতে একটি লাঠি নিয়ে পটের গান পরিবেশন করেন। পটের গানের যে অংশটি শিল্পী পরিবেশন করেন। নিখিলচন্দ্র দাস পটের সেই অংশটি খুলে দর্শকের দিকে ধরেন। পিছনে আরও তিন-চার জন ঢোল, হারমোনিয়াম, মন্দিরা বাজায়। যন্ত্রীরা দোহারের কাজ করেন। 

নিখিলচন্দ্র দাসের জন্ম ১৯৬১ সালর ২৬ অক্টোবর, নড়াইলে। কৈশোরে ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পেয়েছেন বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের। সুলতানের কাছে ছবি আঁকা শিখেছেন ১৯৭৮-৮০ সাল পর্যন্ত। বরেণ্য এই শিল্পীর নির্দেশে ভর্তি হন ঢাকা চারুকলায় (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ)। এখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি নেন ১৯৮৭ সালে। স্নাতকোত্তর পড়ার সময় ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিল্পকলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দেড় বছর চাকরি করার পর শিল্পী এস এম সুলতানের পরামর্শে নড়াইল চলে যান। সেখানে শিল্পকলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। দীর্ঘ জীবন কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিল্পকলা শিক্ষা দেওয়ার পর ২০২০ সালে অবসর নেন তিনি। 

নিখিলচন্দ্র দীর্ঘ জীবন নিয়মিত ছবি এঁকেছেন। তার পটে বিষয় হয়ে এসেছে আমাদের টেপা পুতুলের আদলে ফিগার। তিনি পট নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে নিজস্ব শিল্পভাষা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। করছেন পটের গান নিয়ে গবেষণা। এর মধ্যে তিনটি একক প্রদর্শনী করেছেন ঢাকায়। কিন্তু নীরবে-নিভৃতে ছবি আঁকছেন নড়াইলে বসে। চারুকলায় পড়ার সময় শ্রেষ্ঠ মাধ্যম পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৮৫ ও ৮৬ সালে। ভারত থেকেও সম্প্রতি তিনি পটচিত্রের জন্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। 
এস এম সুলতানের কাছে দীক্ষা নেওয়া শিল্পীদের মধ্যে সুলতানের মতোই শহরের মোহ তাদের টানেনি। ঢাকা চারুকলা থেকে পাস করে শিল্পকলা শিক্ষা দিচ্ছেন, শিল্পচর্চা করছেন জন্মস্থানে ফিরে গিয়ে। যে কারণে নিখিলচন্দ্রের ক্যানভাসে আমরা দেখতে পাই ভিন্ন উপাদানের সমাহার।  

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়