ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রবাস মানেই শুধু ‘না না না’-এর দেশ

জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রবাস মানেই শুধু ‘না না না’-এর দেশ

প্রবাস এমন জায়গা যেখানে মনের মত চলা যায় না। নিয়মের মধ্যে বন্দী থাকতে হয় সবসময়। মন খারাপ থাকলে কারো কাছে বলা যায় না। কে শুনবে কার কথা! সবাই যার যার মত ব্যস্ত। বাঙালি যারা তারা তো এমনিতেই দুঃখি। ফলে মনের কষ্ট মনের কুঠুরিতে জমা থাকে। কেউ জানে না। দেশে কল দিলে সবাই কথা বলে। কে কেমন আছে জানায়। সুখ-দুঃখের কথা বলে। তাদের সুখ-দুঃখ শুনতে শুনতে নিজের কথা বলে হয়ে ওঠে না। আর কেউ ‘কেমন আছেন’ কথার বাইরে তেমন কিছু জানতেও চায় না।

এক কথায় যদি বলি, তাহলে বলতে হয় প্রবাসে জীবিকা ছাড়া কিছু নেই। কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য প্রবাস। আর কিছু না। পুরো পরিবার তো দেশে থাকে। প্রায় সব বাংলাদেশির পরিবারই দেশে থাকে। কেবল আর্থিক সচ্ছলতার জন্য প্রবাসে পড়ে থাকে মানুষ। আমরাও তেমনি। পছন্দের খাবার খেতে চাইলে পাওয়া যায় না। নির্ঘুম থেকে ওভারটাইম করতে হয়। চাইলেই অফিসের ফাঁকে পরিবারের সাথে কথা বলা যায় না। প্রবাস কেবল না না না-এর দেশ।

প্রবাসীদের লক্ষ্য একটাই। পরিবারকে সুখে রাখা। নিজে সুখে না দুঃখে থাকে সেটা দেখার বিষয় না। নিজের কষ্টকে প্রবাসীরা কষ্ট মনে করে না। মাসশেষে উপার্জনের বেশিরভাগ টাকা দেশে পাঠাতে পারলেই আনন্দ। ওই টাকা থেকে কারো সন্তানের স্কুলের বেতন, কারো মায়ের ওষুধ কেনা হয়। কারো বাড়ি মেরামত হয়, কেউ জামাকাপড় কিনে। প্রবাসীর টাকায় পরিবার সচ্ছলতা খুঁজে পায়। আমি অনেক প্রবাসী ভাইকে চিনি, যারা নিজেরা ঠিকমত খায় না। ভালো কিছু কিনে না। শরীরের ওপর ধকল গেলেও ওভার টাইম করে। নিজে অসহায়ের মত থেকে মাসে মাসে পরিবারকে টাকা পাঠায়। এমন অনেক প্রবাসী আছেন।

মাঝে মাঝে ভাবি প্রবাসে না এসে ঢাকা বা কোথাও চাকরি নিতে পারতাম। অথবা ব্যবসা করতে পারতাম। না-হয় একটু কম খেতাম, কম পরতাম। কিন্তু পরিবার নিয়ে তো থাকতে পারতাম। সুখে-দুখে তাদের পাশে পেতাম। আমার সুখ-দুঃখ তারা শুনতো। হাসতে হলে একসাথে হাসতাম, কাঁদলে গলা ধরে কাঁদতাম। প্রবাস এমন জায়গা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। কে দেখবে কাকে? কেউ কাজে না গেলে তার বেতন কাটা পড়বে। অসুস্থ প্রবাসী সেবা ছাড়াই ভালো হয়। পরিবারের সেবা-যত্ন তাদের ভাগ্যে জোটে না। অসুস্থ হলে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। বারবার মনে হয় দেশে ফিরে যাই।

আমরা বাংলাদেশে একটা পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। ঈদ পেয়েছি, বৈশাখী মেলা পেয়েছি। শিল্পকলায় উৎসব পেয়েছি। সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছি। প্রবাসে ঈদ পেলেও স্বজনরা থাকে না। তাই প্রবাসের ঈদ হয় এতিমের মত। অন্য সবকিছু তেমন নেই। অনেকসময় অর্থ থাকে, কিন্তু সময় ও সুযোগ থাকে না। প্রবাসে চাইলেই ছুটি নেয়া যায় না। তাই বিনোদন বলতে বছরে এক-আধবার ছুটি পাওয়া। সান্ত্বনা একটাই। আমার কারণে আমার পরিবার-পরিজন ভালো আছে। এজন্য যখন যেভাবে থাকি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। পরিবারকে সুখে রাখার ভাগ্য কয়জনের হয়!

লেখক: রিয়াদ, সৌদিআরব প্রবাসী।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়