ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হ‌ুমায়ূন আহমেদ কেন জনপ্রিয়

কেএম রাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২০ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হ‌ুমায়ূন আহমেদ কেন জনপ্রিয়

আমি জানি, এই শিরোনাম হাস্যকর ধরনের উচ্চাভিলাষী! মনে হতে পারে, কীভাবে, কোন উপায়ে হ‌ুমায়ূন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হয়ে উঠলো তার রহস্যভেদ রেসিপিসমেত আমি হাজির করতে যাচ্ছি। যদি হ‌ুমায়ূনের জনপ্রিয়তার কারণ রেসিপির মতো বের করা যেত, আমি নিজেই চাকরি-বাকরি ছেড়ে এতোদিনে হ‌ুমায়ূনের মতো লেখা শুরু করতাম। ব্যাপারটা তেমন নয়। আমার এই শিরোনামের উদ্দেশ্য হ‌ুমায়ূনের জনপ্রিয়তার বিষয়ে কিছু অনুমান হাজির করা। তার আগে বলে নেই- কেন আমি অনুমানগুলো হাজির করতে চাচ্ছি?

নামি ব্র্যান্ড যেমন অনেক অনুকরণের জন্ম দেয়, প্রভাবশালী লেখকেরাও প্রচুর কপিক্যাট লেখকের জন্ম দেন। এক্ষেত্রে হ‌ুমায়ূন আহমেদ সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যে নামি ব্র্যান্ডের কাজ করছেন। এই সময়ের লেখকদের লেখা পড়তে গিয়ে আমার প্রায়ই মনে হয়:

‘এক হ‌ুমায়ূন লোকান্তরে,
লাখো হ‌ুমায়ূন ঘরে ঘরে।’

কারণ হ‌ুমায়ূনের স্টাইল, ভঙ্গি, শব্দচয়ন ও বাক্যগঠন সব দৃষ্টিকটু লেভেলের কপি করছেন অনেক তরুণ লেখক। তারা হ‌ুমায়ূনের এমনই কপি করেন যে, মাঝেমধ্যে মনে হয় এসব লেখকেরা কি হ‌ুমায়ূনের চশমায় জগত দেখছেন?

কিছু এক্সপ্রেশনের পুনরাবৃত্তি হ‌ুমায়ূনে প্রচুর দেখা যায়। যেমন: ‘অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো’, ‘রাজ্যের বিস্ময়’, ‘প্রকৃতি বড়ই রহস্যম’, ‘জগতের হিসাব-নিকাশ বড়ই জটিল’, ‘কে জানে!’ এক্সপ্রেশনগুলো এই লেখকদের লেখায় দৃষ্টিকটু রকমের হ‌ুমায়ূনীয়। এমন না যে এই শব্দ বা পদগুলো অন্য লেখকেরা লিখতে পারবেন না। দৃষ্টিকটু লাগে হ‌ুমায়ূনের জগতকে দেখার মতো, হ‌ুমায়ূনের মতোই একই সেন্টিমেন্ট নিয়ে হাজির হলে। একজন লেখকের পৃথিবী, সমাজ, জীবন দেখার ও প্রকাশভঙ্গি হবে শুধু তার মতোই।

এ প্রসঙ্গে একজন বেস্টসেলার রাইটারের কথা বলি। এথিক্যাল কারণে তার নামটা আমি বলবো না। কেবল এটুকু বলি যে, এই সময়ের জনপ্রিয়তম লেখকদের একজন তিনি। তো, তার উপন্যাস পড়তে গিয়ে দেখলাম- উপন্যাসটি পুরোটাই হ‌ুমায়ূনীয়। আমি সম্পূর্ণ বই থেকে হ‌ুমায়ূন আহমেদের কমন এক্সপ্রেশনগুলো মার্ক করতে শুরু করলাম। একটা উদাহরণ দেই। বইটির ১৮০-২০০ অর্থাৎ মাত্র বিশ পৃষ্ঠার মধ্যে ‘অবাক হয়ে’ লক্ষ করলো/দেখলো টাইপ কথা পেলাম ১৪ বার!

এটি শুধু এই লেখক নন, এই সময়ের অনেক জনপ্রিয় লেখকের মধ্যেই এমন অনুকরণ সর্বস্বতা দেখি। অথচ এদের লেখা প্রচুর পাঠক-পাঠিকা পড়ছেন। এরাও জেনেশুনেই এমন লিখছে। তখন মনে হলো, হ‌ুমায়ূনের মধ্যে কী এমন ম্যাজিক আছে যা কপি করলেও বড় ধরনের পাঠকগোষ্ঠী নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়? কেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ এতো জনপ্রিয়?

এই প্রশ্নের উত্তর আমার নিজের মতো করে দেওয়ার আগে একজন লেখককে স্মরণ করতে চাই। তিনি মোহাম্মদ আজম। হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনামূলক লেখা লিখেছেন তিনি। তাঁর মতে, হ‌ুমায়ূনের জনপ্রিয়তার কারণ:

‘কাহিনীকার হিসেবে তিনি কাহিনীর অনুসরণে কোনো বাধা তো তৈরি করেনই না, বরং কাহিনী অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে প্রলুব্ধ করেন।... প্লট ইমেজ বা চিন্তায় মনোনিবেশ না করেই হ‌ুমায়ূনের রচনা আরামে পড়া যায়। এর সাথে আরও দুটি বৈশিষ্ট্য যোগ করা যাক। এক. জাতীয়তাবাদ, পশ্চিমা দর্শন, আধুনিকতা, মার্ক্সবাদ, নারীবাদ, গরিব মানুষের উন্নয়নের ম্যানুয়াল ইত্যাদি ‘আগে থেকে বা নিজেই গুরুত্বপূর্ণ’ ভাবের কারবার হ‌ুমায়ূন প্রায় কখনোই করেননি। উপনিবেশিত মনস্তত্ত্বের কারণে আমাদের শিক্ষিত পাঠককুল সাহিত্যে বা সন্দর্ভে নিজের সুরত দেখার চেয়ে এসব বা এ ধরনের ‘উঁচু’ভাব দেখতেই সাধারণত পছন্দ করেন। এগুলো নেই একন টেক্সটকে 'সিরিয়াস' পাঠের আনা তাই খুব সহজ নয়।দু

ই. ফর্ম বা ভাষার কারসাজি, যা রচনার দিকে আলাদা করে নজর ফেরাতে সাহায্য করে, তা হ‌ুমায়ূনের রচনায় নাই বললেই চলে।’ 

মোহাম্মদ আজমের সঙ্গে আমার খুব একটা দ্বিমত নাই। কিন্তু আরও বেশ কিছু কথা যুক্ত বা যোজন-বিয়োজন করবো। আমিও পাঠকপ্রিয়তার ব্যাখ্যা করতে সম্ভাব্য কারণসমূহকে মোটামুটি দুই ভাগ করতে চাই।

এক. এই দিকটা টেকনিক্যাল। অর্থাৎ ভাষা আর স্টোরিটেলিং।
দুই. বাংলার পাঠক অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে বুঝতে পারা।

ভাষা ও স্টোরিটেলিং নিয়ে আগে বলি। হ‌ুমায়ূন আহমেদের গদ্য যারপরনাই সরল। সরল লেখাকে আবার সোজা ভেবে বসবেন না যেন! হ‌ুমায়ূন আহমেদের গদ্য পড়তে ডিকশনারি দেখতে হয় না। ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও অনায়াসে পড়তে পারে। আমি ‘অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি’ হ‌ুমায়ূনের গদ্যে যুক্তাক্ষর অন্য যেকোনো তথাকথিত ‘সিরিয়াস’ লেখকের চাইতে কম। যুক্তাক্ষর ব্যবহার করলেও তার উদ্দেশ্য মজা করা। যেমন: ইনি একজন ভদ্রলোক। বিশিষ্ট ভদ্রলোক। এখানে ‘বিশিষ্ট’ শব্দটির উদ্দেশ্য হাস্যরস আনা।

হ‌ুমায়ূনের গদ্যে বাক্য সাধারণত পাঁচ-ছয় শব্দের বেশি হয় না। মনে করুন, একটি বাক্য এমন: ‘মধ্যবয়স্ক, ভুড়িওয়ালা, চেক শার্ট পরা, লম্বা ও ফর্সা এক লোক পার্কের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে আছে।’

হ‌ুমায়ূন আহমেদ কখনও এমন বাক্য লিখতেন না। হয়তো লিখতেন এভাবে: ‘লোকটি পার্কে বসে আছে। সিমেন্টের বেঞ্চে। বয়স ৪০ এর কাছে। ভুড়ি আছে। বেশ লম্বা। পরনে চেক শার্ট। গায়ের রং সাদা। ধবধবে সাদা।’
এরকম বাক্য প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদেরও পড়তে কষ্ট হওয়ার কথা না। ফলে তার পাঠকসংখ্যা বেড়েছে।

গল্পবাজ বাঙালি গল্প শুনতে ভালোবাসে। কিন্তু সম্পূর্ণ গল্প না, গল্পের মজার, চমকপ্রদ অংশটি। তাছাড়া হ‌ুমায়ূনের গল্প বলাটা সরলরৈখিক না। দেখা যায় এক গল্পের মধ্যে অনেক গল্প বলেন। আপনি হয়তো কোথাও গেলেন, সেখানে আপনাকে চা দিলো। নানান ঘটনা ঘটলো। সেগুলো একে একে হয়তো কাউকে বলছেন। হ‌ুমায়ূন আহমেদ ঘটনার ব্যাখ্যা করবেন এভাবে: ‘যুথিদের বাসায় চা দিলো। মতি মিয়া আশপাশে ঘুরঘুর করছে। চায়ে চুমুক দিতে নিলেই ইশারায় না খেতে বলছে। একটু পরে বাইরে নিয়ে গিয়ে বললো, ভাইজান, চা খাইয়া উত্তম কাজ করেছেন। পাত্রপক্ষ আসছে, যুথি আপারে দেখতে। যুথি আপা তো রাজি না। আমি তাই চায়ে অ্যাকশন দিয়া দিছি। মতি মিয়ার মাইর, এইবার বুঝবো ঠেলা!

অথবা চরিত্র হয়তো বাথরুমে গোসল করতে করতেই ভাবছে। এই ভাবনার মধ্যেও দেখা যাবে হয়তো কয়েকটা মজার গল্প। হ‌ুমায়ূন আহমেদের লেখায় এরকম গল্প প্রতি পৃষ্ঠায় অন্তত তিনটি থাকে। তাছাড়া পাঠককে ক্রমাগত চমক দিতেন হুমায়ূন। পাঠককে অনবরত চমকানোর, আগ্রহ ধরে রাখার অসামান্য ক্ষমতা। একটা ইন্টারভিউ-এ হ‌ুমায়ূন নিজেই স্বীকার করেছেন যে, এই উদ্দেশ্যে কাহিনীতে প্রায়ই তিনি সচেতনভাবে ধাঁধা বা শ্লোক রাখতেন।

আমাদের বেশিরভাগ উপন্যাসে থাকে বিশদ প্রকৃতির বর্ণনা। এই ধরনের বর্ণনাকে পশ্চিমের সম্পাদকেরা হোমারের ‘অডিসি’র বিখ্যাত লাইন থেকে ধার করে বলেন ‘রোজি ফিঙ্গারস অব ডন’। এবং কমার্শিয়াল লেখকদের এই ধরনের বর্ণনা লিখতে অনুৎসাহিত করা হয়। জর্জ কার্লিনকে প্রায়শ উদ্ধৃত করা হয়: সাহিত্যে প্রকৃতির বিস্তারিত বর্ণনা শুধু একবারই ঠিক ছিলো, সেটি হলো নূহ নবীর বন্যার কাহিনীতে!

হ‌ুমায়ূন আহমেদ আমেরিকায় দীর্ঘদিন ছিলেন, ক্রয়েটিভ রাইটিং কোর্সও করেছিলেন। লেখার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ব্যাপারে তার পরিষ্কার ধারণা ছিলো বলেই মনে হয়। কেউ যেন আবার না ভাবেন যে, বাণিজ্যিক দিকটিতে সচেতন থাকলেই লেখক খারাপ লেখক হয়ে যান।

কারণ যাই হোক, হ‌ুমায়ূনের গদ্যে বিশদ বর্ণনা নেই বললেই চলে। হ‌ুমায়ূনের লেখার শৈলী শুরু থেকেই সংলাপধর্মী। চরিত্রের বর্ণনা না করে সংলাপ ও চরিত্রের আচরণের মাধ্যমেই চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। আবার সেই ডায়ালগ বা সংলাপও খুব চমকপ্রদ! পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে, কৌতূহলী করে তুলতে এমন ডায়ালগ কাজে আসে।  উদাহরণের জন্যে আমি হ‌ুমায়ূন স্টাইলে সংলাপ লিখে দেখানোর চেষ্টা করছি: 

: আচ্ছা আপনার কি নাক বোচা?
: কি!
: আপনার নাক, নৌজ বা নাসিকা বলে যাকে, সেই নাকটা কি বোচা?
: কি আশ্চর্য! আমার  নাক বোচা হতে যাবে  কেন? মানে কী?
: তাবাচ্ছুম না আপনার নাম? তাবাসসুম নামের মেয়েদের নাক সাধারণত বোচা হয়? আপনার নাক কি বোচা?
: ফাইজলামি করেন?

এই কয়েকটা বাক্যের মধ্যেই টেনশন লক্ষ্য করেছেন? এই ধরনের আগ্রহ ধরে রাখা সংলাপ হ‌ুমায়ূন আহমেদের সব রচনায় থাকে৷ এছাড়া হ‌ুমায়ূনের চরিত্রদের উদ্ভট কাণ্ড পাঠককে প্রতিনিয়ত চমকায়। তার কাহিনী হয়ে ওঠে নেশা ধরানো। না পড়ে থাকা যায় না। হ‌ুমায়ূনের সব রচনাই তাই ইংরেজিতে যাকে বলে- পেইজ টার্নার বা আনপুট ডাউনেবল।

ধর্ম, রাজনীতি আর সেক্স- এই তিন জিনিস জনপ্রিয়তার সহজ ও মোটামুটি প্রমাণিত উপাদান। মজার ব্যাপার হলো, এই তিনটির একটাও হ‌ুমায়ূনে নেই। সেক্স আছে না থাকার মতোই। ছোটবোন হয়তো বড় বোনকে জিজ্ঞেস করবে- আপা, চুমু খেলে কি বাচ্চা হয়? ব্যস এটুকুই।

ধর্ম, রাজনীতি ও সেক্স ছাড়াই হ‌ুমায়ূন তাঁর অসামান্য ভাষা ও  গল্প বলার গুণে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

এগুলো তো টেকনিকের আলাপ। টেকনিক দিয়েই যদি সবকিছু সম্ভব হতো তাহলে অনেকেই এতোদিনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার লেখক হয়ে যেতেন। কিন্তু টেকনিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সব নয়। হ‌ুমায়ূনের ‘হ‌ুমায়ূন’ হয়ে ওঠার পেছনে বড় একটা কারণ হলো, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের মনস্তত্ত্ব গভীরভাবে বুঝতে পারা। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের সাহিত্য পাঠকদের শ্রেণি মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। দেশের মধ্যবিত্তের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, অসহায়ত্ব এবং  আপোসকামীতা হ‌ুমায়ূনের চেয়ে কেউ ভালো বুঝেছিলেন বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয়, আহমদ ছফার চেয়েও বাঙালি মুসলমানের মন হ‌ুমায়ূন অনেক গভীরভাবে বুঝেছিলেন। হ‌ুমায়ূন ফিকশন লেখক বলে ছফার মতো জাতির জনমনস্তত্ত্ব বিষয়ে থিসিস দাঁড় করাতে আগ্রহী ছিলেন না। করলে দারুণ কিছু হতো বলেই আমার বিশ্বাস। হ‌ুমায়ূন গণবুদ্ধিজীবীতার রাস্তায় আদৌ হাঁটতে চাননি, যেমনটি চেয়েছেন ছফা। হ‌ুমায়ূন বরং পছন্দ করেছেন রহস্যময়তা। কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাননি। না চাইলেও মধ্যবিত্ত মনন তিনি যে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ করেছিলেন, বুঝতে চেয়েছিলেন, সেই প্রমাণ তাঁর বিশাল রচনাবলির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

তবে এখানে আরেকটি পয়েন্ট উল্লেখ করা দরকার। মধ্যবিত্ত স্বভাবের নির্দয় ক্রিটিক হ‌ুমায়ূন করেন না, যেমনটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, ইলিয়াস করেছেন। মধ্যবিত্তের জীবনযাপনের যে সংগ্রাম আর সেটি পূরণ করতে মধ্যবিত্তের যে ভণ্ডামি, নষ্টামি ও মর্ষকামিতা এগুলোকে হ‌ুমায়ূন আহমেদ কখনই সরাসরি আক্রমণ করেননি (সত্যজিৎ রায় মারাত্মকভাবে করেছেন তাঁর সিনেমায়)। বরং একটা সহানুভূতিশীল দৃষ্টিতে সেইসব স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষার কথা বলে গেছেন। একইসঙ্গে সংসারও চায়, আবার সন্যাসও চায়- এমন মধ্যবিত্তের কনফ্লিক্ট হ‌ুমায়ূন বলতে পেরেছেন গভীর মমতায়। এমন না যে মধ্যবিত্তের ভণ্ডামি, অপারগতা, আপোষকামিতা বা মর্ষকাম, হ‌ুমায়ূনের কাহিনীগুলিতে একদমই উঠে আসেনি। এসেছে, তবে তা এসেছে হাস্যকৌতুকের ছলে। রসবোধের ছোঁয়ায় তা মৃদু হয়ে গেছে, যা তার বাস্তব জীবনের মতো ক্লেদাক্ত লাগে না।

মধ্যবিত্তের অসহ্য বাস্তব জীবনের একটা এস্কেপ রুট কেবল নয়, তার অনুক্ত কামনা-বাসনা, মর্ষকামিতা ও ফ্যান্টাসির হাস্যরসাত্মক রূপায়ন হ‌ুমায়ূনের সাহিত্যে ঘটে বলে মধ্যবিত্ত পাঠক তুলনারহিত তৃপ্তি ও আনন্দে ডুবতে পারেন। দক্ষ ম্যাজিশিয়ানের মতো এই অমূল্য আনন্দের যোগান দিতে পারাই হ‌ুমায়ূনের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।

 

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ