সাময়িকপত্রে রবীন্দ্রনাথের লেখালেখি
হাবিবুর রহমান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হাবিবুর রহমান স্বপন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সাপ্তাহিক ‘হিতবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক। ১২৯৮ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম প্রকাশকালে সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণকমল। হিতবাদীতে রবীন্দ্রনাথের ৭টি ছোটগল্প মুদ্রিত হয়েছিল। সম্পাদক কৃষ্ণকমল একদিন রবীন্দ্রনাথকে ডেকে বললেন, গল্পগুলি সাধারণ পাঠকের জন্য সহজবোধ্য বা আরও একটু লঘু করা প্রয়োজন।
এই কথার পর রবীন্দ্রনাথ সাপ্তাহিক হিতবাদীতে লেখা বন্ধ তো করলেনই সেই সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন এবং একই বছর (১২৯৮ বঙ্গাব্দ) অগ্রহায়ন মাসে নতুন পত্রিকা ‘সাধনা’ প্রকাশ করলেন। পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্বও তিনি নিজেই পালন করেন। তবে প্রথম বছর নিজের নাম প্রকাশ না করে ভাতিজা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ছাপলেন সম্পাদক রূপে। শেষ চার বছর রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং সম্পাদক ছিলেন।
যদিও সম্পাদক কৃষ্ণকমলের সঙ্গে মতভেদের কারণে তিনি তাঁর লেখার ঢং বা স্টাইল বা বাক্যের ব্যবহার পরিবর্তন করেননি। তিনি বলেছেন বহু কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ। এককথায় বলা যায় রবীন্দ্রসাহিত্যকে এমন প্রাচুর্যম-িত করে তোলার পিছনে শুধু তার নিজের অসাম্যন্যতা নয়, সেই সঙ্গে সাময়িকপত্র ও পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা অবদান ছিল।
বাংলা সাময়িকপত্রের সঙ্গে রবীন্দ্রসাহিত্যের স্ফুরণ লক্ষ্য করার মত। রবীন্দ্রনাথ সমগ্র জীবনে নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। নতুন পত্রিকায় তার প্রচুর রচনা প্রকাশিত হয়েছে। উচ্ছ্বসিত ও স্রোতস্বিনী লেখার মাধ্যমে তার মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রসাহিত্যকে আমরা আজ যেভাবে এবং যে রূপে পেয়েছি তা পাওয়া সম্ভব হতো না যদি ওই সময় ভারতী, বালক, সবুজপত্র, বিচিত্রা ইত্যাদি পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত না হতো।
বঙ্কিমচন্দ্রের কাগজ বঙ্গদর্শনে যেভাবে কবিতা প্রকাশিত হযেছে (১২৮২ বঙ্গাব্দ) তার তুলনায় সে সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতারমান অনেক ভাল বা উঁচু ছিল। এর পরেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বঙ্কিমচন্দ্রের আনুকূল্য পাননি। রবি পূর্ব গগণে আলো ছড়াতে শুরু করলেও বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে স্বাগত জানতে পারেননি। তখনকার সেরা কবি নবীনচন্দ্র সেন, গোপালকৃষ্ণ, নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পাশে নতুন কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা ছাপতে দ্বিধা ছিল বলেই হয়তো ‘বঙ্গদর্শন’ কর্তৃপক্ষ তা ছাপেননি।
রবীন্দ্রনাথ যখন ১২৮২ বঙ্গাব্দে জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্বে ( সাহিত্যপত্র) ‘প্রলাপ’ ‘বনফুল’ রচনা করছেন তখন বঙ্গদর্শনের চতুর্থ বর্ষ চলছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বঙ্গদর্শন রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলো ছাপেনি। তখনকার তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথ হয়তোবা বঙ্গদর্শনে কোনো লেখা পাঠাতে সংকোচ বা দ্বিধা বোধ করতেন। অথবা তখনকার দিনের সেরা সাহিত্য পত্রিকা বঙ্গদর্শন তা ছাপার অনুপোযোগী মনে করতো। তখন দ্বিজেন্দ্রনাথের কবিতা বঙ্গ দর্শনে ছাপা হয়েছিল। এখানে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হতেই পারে। আমরা সেই আলোচনা বা তর্কে নাই বা গেলাম।
বঙ্কিমের জীবদ্দশায় বঙ্গদর্শনে রবীন্দ্র্রনাথের কোন লেখা প্রকাশিত না হলেও বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ‘প্রচার’ পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথকে আশির্বাদ জানিয়ে লিখেছিলেন “রবীন্দ্রবাবু প্রতিভাশালী, সুশিক্ষিত, সুলেখক, মহৎ স্বভাব এবং আমার বিশেষ প্রীতি যত্ন এবং প্রশংসার পাত্র। তিনি এত অল্প বয়সেও বাঙ্গালার উজ্জ্বল রত্ন আশীর্বাদ করি দীর্ঘজীবী হইয়া আপনার প্রতিভার উপযুক্ত পরিমাণে দেশের সাধনা করুন।’’
বঙ্কিমচন্দ্র যখন বঙ্গদর্শনের সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর (১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ)। দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা ও মৃণালিনী তখন পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথ যখন বঙ্গদর্শনের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তখন তাঁর বয়স ৪০ বছর (১৯০১ খ্রিস্টাব্দে)। তখন তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০।
১২৮৪ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ থেকে চৈত্র এই নয় মাসে বঙ্গদর্শনে রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ধারাবাহিক উপন্যাস করুণা, ভিখারিনীর গল্প, ধারাবাহিক আখ্যানকাব্য কবি-কাহিনী, ছোট ছোট গীতিকবিতা, ভানুসিংহের পদাবলি ছাড়াও অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সম্পাদনার কাজে ব্যয় করেন মোট ১৩ বছর তিন মাস। তিনি সম্পাদনা করেন পাঁচটি পত্রিকা : সাধনা, ভারতী, বঙ্গদর্শন (নবপর্যায়), ভাণ্ডার ও তত্ত্ববোধনী। বঙ্গদর্শন বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদনা করেন চার বছর এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পাদনা করেন পাঁচ বছর।
যদিও এর আগে রবীন্দ্রনাথের লেখা তত্ত্ববোধনী, বান্ধব, অমৃতবাজার, জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্বে প্রকাশিত হয়েছিল। তবুও একথা বলতেই হয় রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠার সুযোগ অকৃপণভাবে দিয়েছিল ভারতী-ই। একজন লেখককে উৎকৃষ্ট মানে এবং উঁচুতে ওঠাতে হলে উৎকৃষ্ট সাময়িকপত্র ও তার উপযুক্ত সম্পাদকের উদার আনুকূল্যের প্রয়োজন তর্কাতিত। ১২৮৪ বঙ্গাব্দে ভারতীর আত্মপ্রকাশ না ঘটলে রবীন্দ্রনাথ হয়তো গদ্য রচনায় অগ্রসর হতেন না। এমন মন্তব্য করেছেন তৎকালীন সাহিত্যবোদ্ধারা।
রবীন্দ্রনাথ দুই বছর বিলাতে বা ইংল্যান্ডে অবস্থান করার কারনে (১২৮৫-৮৬ বঙ্গাব্দ) ভারতী পত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশ পায়নি। ১২৮৭ বঙ্গাব্দে সামান্য কিছু রচনা প্রকাশ পায়। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য রচনা ভগ্নহৃদয়। ১২৮৮ বঙ্গাব্দে তাঁর প্রচুর গদ্য-পদ্য প্রকাশিত হয়। এসময় বাল্মিকী প্রতিভা গীতিনাট্য প্রকাশিত হয় পুস্তকাকারে। ভারতীতে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয় উপন্যাস বৌঠাকুরানীর হাট। এরপর ক’বছর রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত চর্চায় বেশি মনোযোগী হন। এতে ভারতীতে লেখার পরিমাণ হ্রাস পায়।
১২৯২ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজ বউ ঠাকুরাণী জ্ঞানন্দা নন্দিনী দেবী ঠাকুরবাড়ির বালকদের জন্য মাসিক ‘বালক’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই নতুন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ কিছু রচনাও মুদ্রিত হয়। যদিও এক বছর মাত্র পত্রিকাটির আয়ুষ্কাল ছিল তবে এর চেয়ে সাধনা পত্রিকায় তাঁর বেশি রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। এক বছরে বালক পত্রিকায় যতগুলো লেখা প্রকাশিত হয় তার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিল রবীন্দ্রনাথের রচনা। বালক পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় কড়ি ও কোমলের কবিতা, শিশু’র কবিতা, মুকুট, হাস্যকৌতুক, বিচিত্র প্রবন্ধ, ইতিহাস বিষয়ক নিবন্ধ, ব্যঙ্গ কৌতুক, চিঠিপত্র, রাজর্ষি, শব্দতত্ত্ব বিষয়ক লেখা ইত্যাদি। বালকের পর ১২৯৩ থেকে ১২৯৭Ñ এই পর্বে সাময়িকপত্রের পাতায় রবীন্দ্রনাথের রচনা প্রকাশের পরিমাণ যথেষ্ট কম।
‘বালক’ বন্ধ হওয়ার পর প্রকাশিত হয় ‘হিতবাদী’ ও ‘সাধনা’। ১২৯৮ বঙ্গাব্দে হিতবাদী প্রকাশ হয়, এর ছয় মাস পর রবীন্দ্রনাথের নিজের কাগজ ‘সাধনা’ বের হয় মাসিক পত্রিকা হিসাবে। এ সময় এসব নতুন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের লেখার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন তিনি অবিশ্রাম গতিতে পূর্ণ যৌবনের দিনগুলোতে ‘সাধনা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখা চালিয়ে যান। মাত্র চার বছরে সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ৩৬টি ছোট গল্প প্রকাশিত হয়। প্রথম বছরে ১২টি, দ্বিতীয় বছরে ১১টি, তৃতীয় বছরে তিনটি এবং চতুর্থ বছরে ১০টি গল্প প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ এসব রচনা সম্পর্কে নিজে এভাবে লিখেছেন, “যদিও আমার এমন অনেক লেখা বেরোয় যা তুচ্ছ, যা কেবলমাত্র সাধনার স্থান পোরাবার জন্য লিখি, তবে তার মধ্যেও আমি যথাসাধ্য এবং যথাসম্ভব যত্ন প্রয়োগ করে থাকি। লেখার মধ্যে আমার ভিতরকার সত্য যথোচিত শ্রদ্ধার ও অকৃত্তিমতার সঙ্গে প্রকাশ করবার চেষ্টা করি আমার সরস্বতীকে আমি কোন অবস্থাতেই অবহেলা করতে পারিনে।” গল্পগুচ্ছ ছাড়াও সোনার তরী, চিত্রা, কথা ও কাহিনী, সাহিত্য, লোকসাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য, শব্দতত্ত্ব সমাজ, রাজা-প্রজা, পঞ্চভূত, শিক্ষা, ব্যঙ্গকৌতুক, য়ুরোপের ডায়েরি ইত্যাদি সমৃদ্ধ লেখাসমূহ মুদ্রিত হয় সাধনায়।
সাধনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ সম্পাদিত ভারতী প্রকাশিত হতে থাকে। যখনই নতুন কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে তখনই অন্যান্য যে কোন লেখকের তুলনায় রবীন্দ্রনাথের লেখার পরিমান বেড়েছে। ১৩০৮ বঙ্গাব্দে বঙ্গদর্শন নতুন করে প্রকাশিত হয়। আবারও তাঁর লেখা অজস্র ধারায় প্রকাশিত হতে থাকে সাময়িক পত্রিকাটিতে। এই পত্রিকারও সম্পাদক নিযুক্ত হন তিনি।
১৩০৮ থেকে ১৩১২ বঙ্গাব্দ এই সময়কালে বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়: চোখের বালি, নৈবেদ্য, সমাজ, আধুনিক সাহিত্য, শব্দতত্ত্ব, ভারতবর্ষ, স্বদেশ, উৎসর্গ, সাহিত্য, বিচিত্র প্রবন্ধ, আত্মশক্তি, ব্যঙ্গকৌতুক, প্রাচীন সাহিত্য, ধর্ম, রাজাপ্রজা, স্মরণ, গল্পগুচ্ছ, নৌকাডুবি, শিশু, গীতবিতান শিক্ষা, খেয়া ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথ একাধারে সম্পাদক, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ফিচার রাইটার এবং সাময়িক সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। বঙ্গদর্শন এবং প্রবাসী পত্রিকা একই সময় প্রকাশিত হয়। প্রবাসির সম্পাদক ছিলেন, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের ‘প্রবাসী’ কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাস থেকে প্রবাসী পত্রিকায় বৃহত্তম উপন্যাস ‘গোরা’ প্রকাশিত হতে শুরু করে। দীর্ঘ আড়াই বছর ‘গোরা’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। গোরা উপন্যাসটি সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
এই উপন্যাস লেখার শুরুতে রবীন্দ্রনাথকে তিনশ টাকা আগাম সন্মানী প্রদান করেছিলেন সম্পাদক। রমানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “খেজুর গাছের রস যেমন বিনা খোঁচায় পাওয়া যায় না তেমনি রবীন্দ্রনাথকে খোঁচা না দিলে রস মেলে না।” রবীন্দ্রনাথও রসিকতায় কম যান না। তিনি এক চিঠিতে রমানন্দ বাবুকে লিখেছিলেন “আপনি যদি আমাকে তিন শত টাকা ঘুষ না দিতেন তা হলে ‘গোরা’ লেখা হতো না।”
রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ গদ্য রচনার কারনই হচ্ছে সম্পাদকের তাগিদ। সাময়িক পত্রিকাগুলো সমৃদ্ধ হতো রবীন্দ্রনাথের এসব লেখায়। পাঠকদের চাহিদা বা গ্রাহকের লেখককে অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রায় ২০ বছর পর ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে প্রবাসিতে কবির ধারাবাহিক রচনা শেষের কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়াও রক্তকরবী, মুক্তধারা নাটক প্রকাশিত হয়। রশিয়ার চিঠি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসীতেই। প্রবাসী ছিল বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পত্রিকা।
নতুন পত্রিকা রবীন্দ্রনাথকে আকর্ষণ করে। বিচিত্রা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে। বিচিত্রার পূর্বে প্রকাশিত হয় সবুজপত্র। ১৩২১ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে নন্দগোপাল সেনগুপ্তের সম্পাদনায় পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে। ‘চতুরঙ্গ’ ও ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস দু’টি প্রকাশিত হয় ধারাবাহিকভাবে। এই পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বলাকা’র বেশ কিছু কবিতা। অনেকগুলো ছোটগল্পও প্রকাশিত হয়। এর পর বিচিত্রায় ধারাবাহিক উপন্যাস ‘গোরা’ প্রকাশিত হয়। বিচিত্রা কর্তৃপক্ষ লেখার জন্য রবীন্দ্রনাথকে তিন হাজার টাকা সন্মানী দেন। বিচিত্রার উদ্বোধনী সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের নতুন কবিতা বিচিত্রার পা-ুলিপিচিত্র দিয়ে শুরু হয়। তাঁর লেখা নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা (নন্দলাল বসু চিত্রিত) প্রথম সংখ্যায় ৯ থেকে ৭০ পাতায় ছাপা হয়।
বিচিত্রায় যখন বেশি লেখা প্রকাশিত হচ্ছিল তখন প্রবাসীর সম্পাদক রমানন্দ বাবুর অভিমানের প্রকাশ ঘটে। প্রবাসীতে ১৩১৪ সালে ‘গোরা’ শুরু হয়েছিল এর দুই দশক পর ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে চিঠি পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবাসীর জন্য নতুন উপন্যাস লেখেন। এটিই সেই বিখ্যাত ‘শেষের কবিতা’। এই উপন্যাসের জন্য বিচিত্রা সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথকে এক হাজার টাকা সন্মানী দেন। প্রবাসী তাঁর দীর্ঘকালের সাথী হলেও অন্যান্য পত্রিকা সবুজপত্র, ভারতী, বঙ্গবাণী, মানসী, বঙ্গলক্ষ্মী, উত্তরা, প্রাচী, অলকা, নাচঘর, জয়শ্রী, শনিবারের চিঠি, পরিচয়, কবিতা, দেশ, আনন্দবাজার, মর্মবাণী ও বসুমতিতে লেখেন। বসুমতিতে প্রকাশিত হয় তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাটক শোধবোধ ও পরিত্রাণ।
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন এবং কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেছেন, সাময়িক পত্রিকাগুলো আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে। সম্পাদকদের তাগাদা এবং পাঠকদের চাওয়া আমাকে লিখতে উৎসাহিত করেছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ আগস্ট ২০১৪/নওশের
রাইজিংবিডি.কম