ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে পেটালেন যুবলীগ নেতা (ভিডিও)

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে পেটালেন যুবলীগ নেতা (ভিডিও)

নুরুল আলম, বয়স ৭২। একজন যুবক তাকে চড় থাপ্পড় মারছেন। পরনের লুঙ্গি, গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে ফেলছেন। কয়েকজন যুবক সেই দৃশ‌্য মোবাইলে ধারণ করছেন। তবে তাদের কেউ ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।

মঙ্গলবার (২ জুন) বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নজরে আসে সবার। গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে।

বর্বর নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার মৃত আলী মিয়ার ছেলে। তাকে যিনি মারধর করছিলেন, তিনি ওই এলাকার যুবলীগ নেতা আনছুর আলম (৩৫)। আনছুর চার নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি। তিনি ওই এলাকার মৃত মনির উল্লাহর ছেলে।

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দির কছির বলেন, ‘দলে ঢুকে সুযোগ নেওয়ার জন্য নানা উপায়ে দলে ঢোকে আনছুর। বিষয়টি এতদিন জানা যায়নি। তবে এ ঘটনার পর আনছার আলম একজন ডাকাত ও বিভিন্ন মামলার আসামি বলে শুনেছি। তাই চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সভাপতির পদসহ সংগঠন থেকে তাকে আজীবন বহিষ্কার করার জন্য ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এ ঘটনার পর গত ৩১ মে রাতে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদি হয়ে চকরিয়া থানা একটি এজাহার দায়ের করেন। তবে, এজাহারটি এখনও তদন্তাধীন বলে জানা গেছে।

ওই এজাহারে আসামি করা হয়েছে মৃত মনির উল্লাহর ছেলে বদিউল আলম (৫৫), আনছুর আলম (৩৫), শাহ আলম (৫২), শাহ আলমের স্ত্রী আরেজ খাতুন (৪৮), বদিউল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), আবদুল জাব্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৩২), জয়নাল আবেদিন (৩০) এবং মনজুর আলমের ছেলে মো. রুবেলকে (২৮)।

এজাহারে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে বাদি আশরাফ হোসাইন দাবি করেন, ‘‘গত ২৪ এপ্রিল আমার বয়োবৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম ঈদের বাজার করে ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে টমটম গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টমটম থেকে আমার বাবাকে নামিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তার পরনের লুঙ্গি খুলে ফেলেন ও গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলেন। পাশাপাশি মারধর ও গালিগালাজ করেন।

‘কয়েকজন যুবক এসব ঘটনার দৃশ‌্য মোবাইলের ক্যামেরায় ধারণ করেন। এসময় আমার বাবা নিজেকে বাঁচানোর জন‌্য চিৎকার করেন। পরে ঘটনাটি শোনার পর আমার ছোট ভাই সিএনজি চালক সালাহউদ্দিন স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।”

মামলার বাদি আশরাফ হোসাইন এজাহারে আরও দাবি করেন, ‘ঘটনার সময় আমার বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট ও পকেটে থাকা নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেন তারা।’

আশরাফ হোসাইন বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে আমার বাবার উপর অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে সন্ত্রাসী আনছুর আলম। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা সে করে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, ‘তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে এমন অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বয়স্ক নুরুল আলমের সাথে। তিনি এই এলাকার বয়োবৃদ্ধ। সবাই ওনাকে খুব সম্মান করে। এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় এজাহার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে আনছুর আলমের মোবাইলে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এরপর ভুক্তভোগীর ছেলে আশরাফ হোসাইন একটি এজাহারও দিয়েছে। এখন এ ঘটনায় জড়িত মূল ব্যক্তিকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। আশা করছি, সহসাই তাকে আটক করা সম্ভব হবে। তারপরই এ ঘটনার সাথে অন্য কারা কারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’




সুজাউদ্দিন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়