ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

হুমকির মুখে সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১২ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হুমকির মুখে সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লী

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়িতে টিলা ধসে হুমকির মুখে পড়েছে ত্রিপুরা পল্লী। টিলা রক্ষায় বরাদ্দের জন‌্য প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন পল্লীবাসী।

টিলা ধসে ক্ষতি এড়াতে ইতোমধ্যে এখান থেকে কয়েকটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, টিলাতে বাস করা অন‌্য পরিবারগুলোর মধ‌্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিষয়টি জানিয়েছেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক শ্রেণির অসাধু চক্র দীর্ঘদিন থেকে টিলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া থেকে নানা সময়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। যার ফলে ক্রমশ দুর্বল আর আলগা হয়ে গেছে টিলার মাটি। এরপর গত কয়েক বছরে বর্ষায় টিলাগুলোতে অল্প অল্প করে ধস শুরু হয়। এবছর বর্ষায় ছড়ার পাশে থাকা টিলার অনেকাংশ ধসে পড়েছে। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ২২ পরিবারের লোকজন সেখানে বসবাস করছেন। ক্ষতি এড়াতে কিছু পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এই মানুষগুলোর জন্ম এই পাহাড়ে। পাহাড়ের নিবিড় যত্নে লালিত হওয়া এই অসহায় মানুষগুলো পাহাড়কে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু তারা এখানেই ত‌্যাগ করতে চান। তাই পাহাড়ের এমন রুগ্ন দশায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করা এই পল্লীবাসীদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘এই পাহাড়ে আমাদের জন্ম। মৃত্যুও যেন এখানেই হয়। এ স্থানটা আমাদের কাছে প্রিয়। পাহাড় রক্ষা করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। আমরা কখনোও টিলা কাটি না। টিলা রক্ষায় সর্বদা কাজ করি। তবে টিলা কাটা চক্রের কাছে আমরা অসহায়। জন্মের পর ছড়াগুলো দেখলাম ছোট, এখন দিন দিন বড় হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে কী হবে তা জানি না।’

চিত্তরঞ্জন দেববর্মা আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর সরকারি সিদ্ধান্তে বনবিভাগ আমাদেরকে বনের এক পাশে অবস্থিত সড়ক পথের কাছের টিলায় বসবাসের অনুমতি দেয়। সেই থেকে এখানে আমরা বসবাস করছি। কিন্তু এই টিলার পাশের ছড়া থেকে বিভিন্ন চক্র বালু উত্তোলন করছে যার ফলে টিলাগুলো ধসে যাচ্ছে। এতে আমাদের বসবাসও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।’

টিলা ধসের আক্ষেপ নিয়ে হেডম‌্যান জানান, এর আগে বৃষ্টিপাতের কারণে ২০১৭ সালে পল্লীর টিলা ধসে যায়। সে মৌসুমেও তিন আদিবাসী পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। এবার আরও ২ পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হলো। বর্তমানে পুরো টিলাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। টিলাগুলো সংরক্ষণ করা না গেলে এখানে বাস করা মানুষগুলো বাড়ি ছাড়া হয়ে যাবে। তাছাড়া, টিলাগুলো জীববৈচিত্র রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। টিলা ধসে গেলে তা পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই টিলা রক্ষায় আশু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়। তাই পাহাড় রক্ষায় তারা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানান তিনি।

সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন ও সাতছড়ি বিট কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন জানান, ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ উদ‌্যানটি বেশ প্রিয়। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে এ পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীসহ বিভিন্ন টিলা ধসে পড়ছে। উদ্যানের অন্যান্য ছড়ায়ও টিলা ধসে পড়ছে। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ছে গাছপালা। তাই পরিবেশের ভারসাম‌্য রক্ষায় টিলাগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। এজন‌্য টিলা রক্ষায় দ্রুত প্রাচীর নির্মাণ করা দরকার। আর তাতে প্রয়োজন বড় আকারের বাজেট।

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ত্রিপুরা পল্লী রক্ষায় টিলা মেরামতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসামাত্র দ্রুত টিলা মেরামত করা হবে। এছাড়া, উপজেলা প্রশাসন থেকে পল্লীর বাসিন্দাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে থাকে। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাদের পাশে আছে উপজেলা প্রশাসন।

মামুন/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ