ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মা-হারা সেই শিশু আরেক মায়ের কোলে হাসি-কান্নায় দিন কাটাচ্ছে 

শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৮, ২২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:৪৬, ২৩ অক্টোবর ২০২০
মা-হারা সেই শিশু আরেক মায়ের কোলে হাসি-কান্নায় দিন কাটাচ্ছে 

সাতক্ষীরায় স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে হত‌্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়া এখন অন‌্য এক মায়ের কোলে দিন কাটাচ্ছে। গর্ভধারিণী মায়ের কোলহারা সাড়ে চার মাসের শিশুটি এখন আরেক মায়ের মুখের দিকে সবসময় তাকিয়ে থাকে। সে কখনও হাসছে, আবার কখনও কাঁদছে। মানুষ বড় ব্যথা পেলে যেমন কাতরায় ঠিক তেমনি গত ৮ দিন ধরে রাতে বড় মানুষের মতো কাতরাচ্ছে। 

‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে কান্নাকাটি করেছে। তার শরীরটা গরম, এখন মারিয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি কলারোয়া ইউএনও ম্যাডামকে জানিয়েছি।’

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে কলারোয়া উপজেলা হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী সদস্য ও শিশু মারিয়ার নতুন মা নাসিমা খাতুন রাইজিংবিডি’র এ প্রতিবেদকে এভাবেই কথাগুলো বলেন।

তিনি আরও বলেন, শিশু মারিয়া তার আশেপাশে কেউ কথা বললে সে আবার সব কথা কান পেতে শুনছে। মারিয়া ছোট-ছোট শিশুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকছে মাঝে মধ্যে। মারিয়া শুধু জানে না, তার কে কে হারিয়ে গেছে। দুই ভাই-বোন আর বাবা-মাকে হারিয়ে সে সর্বস্বান্ত। 

গেল বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের জীবিত একমাত্র সাড়ে চার মাসের মেয়ের শিশুর দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।

কলারোয়া উপজেলা হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় নারী সদস্য ও শিশু মারিয়ার নতুন মা নাসিমা খাতুন জানান, ‘শিশুটিকে পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা,আমি এত খুশি তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। মারিয়াকে পেয়ে আমার পরিবারও খুব খুশি হয়েছে। মারিয়া আমার কাছে হাঁসছে, মাঝে মধ্যে ডুকরে কেঁদে উঠছে। মারিয়া সুস্থ থাকুক, আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী জেরিন কান্তা বলেন, ‘শিশুটিকে ইউপি সদস্যের হেফাজতে রেখে দেখভাল করছি। তার জন্য খাদ্য ও পোশাক কিনে দিয়েছি। তার স্বাস্থ্যসেবারও ব্যবস্থা করেছি। শিশু মারিয়ার সবসময় খোঁজ-খবর রাখছি।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) আনিচুর রহমান জানান, ‘আমরা আইনগত বিষয়টি দেখছি। পাশাপাশি শিশুটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাকে দেখভাল করার দায়িত্ব আমারও রয়েছে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, শিশুটির মুখের দিকে তাকাতেই আমার মনে ভেসে উঠছে চারখুনের নৃশংসতা। শিশুটি যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, আমি সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর ভোর রাতে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে মৎস্য হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী ও মেয়ে তাসনিম সুলতানাকে জবাই করে হত‌্যা করা হয়। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের চার মাসের শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম, খলসি গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (২৮), আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৫) ও একই গ্রামের আসাদুল ইসলামকে (২৭) আটক করা হয়।  

এদিকে, বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে নিহত শাহিনুর রহমানের ভাই রায়হানুলের স্বীকারোক্তিতে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়। রায়হানুল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে আদালতে। বড়ভাই শাহিনুল রহমারসহ পরিবারের চার সদস্যকে চাপাতি দিয়ে একাই হত্যা করেছে বলে জানায় অভিযুক্ত রায়হানুল।

সাতক্ষীরা/সাজেদ/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়