আ.লীগ গুপ্তহত্যা ও সহিংসতার রাজনীতি চালাচ্ছে: সাকি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন জোনায়েদ সাকি।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতা হারানোর পর দলটি দেশ ছেড়ে গেলেও এখনো গুপ্তহত্যা ও সহিংসতার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশজুড়ে দমন-পীড়ন ও সহিংসতা চালিয়েছে। এখন ক্ষমতা না থাকলেও তারা পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ব্যাহত করতে চাইছে।”
এরপর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাকি আরো বলেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি কিলার বাহিনী ব্যবহার করে দেশে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। হাদির ওপর হামলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এই শক্তি আরো রাজনৈতিক নেতা ও প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে।”
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো নিজেদের দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই সহিংসতা। একদিকে পতিত আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে কিছু মহল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর। অথচ জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অবাধ নির্বাচন অপরিহার্য এটাই এখন দেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ।”
তিনি আরো বলেন, “কেউ কেউ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করাতে চাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই ধারাবাহিকতা। এই দুই সময়কে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা জনগণ মেনে নেবে না।”
নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা দেখা দিচ্ছে: সাইফুল হক
একই কর্মসূচিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান হলেও দেশে নতুন ধরনের জবরদস্তিমূলক ও ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যা বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থার জন্য হুমকি।”
তিনি বলেন, “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের স্বপ্ন নিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরও দেশে বৈষম্যভিত্তিক দুই সমাজ ও দুই অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।”
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সেই অসম্পূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই ঘটেছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, “অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া অনেকেই সেই চেতনা ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বৈরতন্ত্র বিদায় নিলেও ধর্ম বা মতাদর্শের নামে নতুনভাবে জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে মতপার্থক্যের মধ্যেও ঐক্য ধরে রেখে সাম্য ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা/এএএম/এস