ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করলেন ইউক্রেনের জেলেনস্কি
জার্মানিতে মার্কিন দূতদের সঙ্গে বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার জন্য পশ্চিমা নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে ইউক্রেন ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের অবস্থানে একটি বড় পরিবর্তন। রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়াকে নিরাপত্তার প্রধান নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল এবং দেশটির সংবিধানেও এ ধরনের একটি আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইউক্রেনের নতুন এই সিদ্ধান্ত দেশটির বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের অন্যতম একটি লক্ষ্যও পূরণ করে। তবে কিয়েভ এখনও পর্যন্ত মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অটল রয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে এক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, “ ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য মিত্রদের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি পেতে চায় এবং এদেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চায়।”
তিনি বলেন, “শুরু থেকেই ইউক্রেনের চাওয়া ছিল ন্যাটোতে যোগদান করা, এগুলোই প্রকৃত নিরাপত্তা গ্যারান্টি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি মিত্র দেশ এই দিকটিকে সমর্থন করেনি।”
জেলেনস্কির ভাষ্য, “সুতরাং, এখন ইউক্রেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা গ্যারান্টি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ৫ নম্বর ধারার মতো গ্যারান্টি এবং ইউরোপীয় মিত্রদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ যেমন: কানাডা ও জাপানের নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার নতুন আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “এটি ইতিমধ্যেই আমাদের পক্ষ থেকে একটি সমঝোতা। নিরাপত্তা গ্যারান্টি অবশ্যই লিখিতভাবে হওয়া উচিত।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে বার্লিনে মার্কিন দূতদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতির সময় জেলেনস্কি ‘মর্যাদাপূর্ণ শান্তি’র আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তির মূল শর্ত হলো, রাশিয়া যেন ভবিষ্যতে আর ইউক্রেনে হামলা চালাতে না পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির আলোচনা চললেও জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, রাশিয়া শহরগুলোতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে এবং বিদ্যুৎ ও পানির অবকাঠামো ধ্বংস করে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।
যদিও রবিবার ও সোমবারের বৈঠকের সঠিক রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি, তবে একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য জার্মানি সফর করছেন।
মার্কিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার নেতৃত্বদানকারী উইটকফকে জার্মানিতে পাঠানোর বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রায় চার বছর পর ওয়াশিংটন কূটনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছে।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি ২০-দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি রয়েছে। তিনি বলে, মস্কোর সঙ্গে কিয়েভের সরাসরি কোনো আলোচনা নেই।
জেলেনস্কির মতে, বর্তমান ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধবিরতি একটি ন্যায্য বিকল্প হতে পারে। রাশিয়া কিয়েভকে পূর্ব দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি করেছে, ওই অঞ্চলগুলো এখনও ইউক্রেনের দখলে রয়েছে।
জেলেনস্কি এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে বলেছিলেন, “ইউক্রেনের মর্যাদাপূর্ণ শান্তির প্রয়োজন এবং আমরা যতটা সম্ভব গঠনমূলকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।”
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ আগামীকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দেশটির রাজধানীতে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছেন, যা ইউরোপ জুড়ে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রতি জনসমক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষতম।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি মার্কিন প্রস্তাবগুলোকে পরিমার্জনের কাজ করছে। গত মাসে প্রকাশিত মার্কিন খসড়া প্রস্তাবটিতে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের আরো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ইউরোপীয় মিত্ররা মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের পরিমার্জনকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন এবং হিমায়িত রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ব্যবহার করে কিয়েভের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগও বিবেচনায় রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ