ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ইটভাটা কেড়ে নিচ্ছে আবাদি জমি

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:২৬, ২০ নভেম্বর ২০২০
ইটভাটা কেড়ে নিচ্ছে আবাদি জমি

কিশোরগঞ্জে ইটভাটা তৈরি ও ব‌্যবহারে সঠিক নিয়ম মানা হচ্ছে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে শতশত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। ভাটার আগুনে পুড়ছে উর্বর মাটি। আবাদি জমি কমছে। ধ্বংস হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, সরকারি হিসেবে জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১০৪টি। যার মধ‌্যে বৈধভাবে ৮০টি ইটভাটা লাইসেন্স নিয়ে কাজ করছে। তবে এ হিসেবের বাইরেও বাস্তবে প্রায় দেড়শ’র মতো ইটভাটা চোখে পড়বে। এরকম অবৈধ লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা বন্ধের জন‌্য জেলা প্রশাসন থেকে তদন্তের মাধ‌্যমে বন্ধের ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অবৈধ অনেক ইটভাটার ব‌্যাপারে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। 

কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও এলাকার কান্দালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত পাঁচ বছর আগে ‘এসবিকে ব্রিক ফিল্ড’ নামে একটি ইটভাটা গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই ধূলা-বালি আর কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগে ভূগছে এলাকাবাসী। 

তারা আরও জানান, এসবিকে ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন সময় অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. খালেকুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশের দিক দিয়ে অন্যতম এবং প্রধান যা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জরিপে প্রমাণিত। কিশোরগঞ্জে দেড় শতাধিক ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে আমাদের ৯০% এর অধিক প্রতিষ্ঠান শতভাগ পরিবেশ বান্ধব। তবে বেশকিছু ইটভাটার ছাড়পত্র নেই।’

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চ (পরম) এর সসদ‌্য সচিব বাধঁন রায় বলেন, ‘নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা তৈরি করায় কৃষিতে এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভাটা তৈরির ফলে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। আবার এর আশপাশের জমিগুলোতেও ফসল উৎপাদন কম হচ্ছে। অন্যদিকে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরি করাসহ অধিক কার্বন নিঃস্বরণের ফলে ফলজ গাছে ফলন কম হচ্ছে। বিশেষ করে নীতিমালায় কয়লা নিয়ে ইটভাটার জ্বালানী দেওয়ার কথা থাকলেও গাছপালার লাকড়ি দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন এ ব‌্যাপারে কঠোর ব‌্যবস্থা না নিলে এর ফল ভবিষ‌্যতে সকবারই পোহাতে হবে।’

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট (অফিস প্রধান) কাজী সুমন জানান, ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও থেকে একটি অভিযোগ পেয়ে সে মোতাবেক তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া পুরো জেলার ইটভাটার একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে, যা আগে ছিল না। সেখানে প্রত‌্যেকটি ইটভাটার বিস্তারিত তথ‌্য তুলে ধরা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই এবং পরিবেশের ক্ষতির কারণ, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জ/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়