মাগুরায় সংক্রমণ বাড়ছে, অক্সিজেন সঙ্কটের আশঙ্কা
মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মাগুরায় হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এতে যে কোনো সময় অক্সিজেন সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে মাগুরা ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৬ জন। হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য বেড রয়েছে ৫০টি। সেখানে ভর্তি আছে ৪৫ জন।
তবে রোগীর সংখ্যা বাড়ার বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।
মাগুরার বাকি তিনটি উপজেলা মহম্মদপুর, শালিখা ও শ্রীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীর জন্য বেড রয়েছে ৫টি করে।
সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। অনেকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে শেষ-মুহূর্তে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। এ রোগীরাই বেশি মারা যাচ্ছে।
মাগুরা পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাদিকুর রহমান বলেন, চলতি মাসের ১ তারিখে তার বাবা করোনা পজেটিভ হয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভতি হন। এখানে চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। বর্তমানে বাবা কিছুটা সুস্থ রয়েছেন। এখানে করোনা ওয়ার্ডে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন রোগীরা।
শ্রীপুর উপজেলা মস্তোজাপুর গ্রামের আব্দুল রশিদ মোল্ল্যা জ্বর, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১২ দিন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার অবস্থার আরও অবনতি হলে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে করোনা ওয়ার্ডে ভতির কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
মাগুরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বিকাশ কুমার শিকদার বলেন, মাগুরা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। এই হাসাপাতালে এখন সাধারণ রোগীর চেয়ে করোনা উপসর্গের রোগী বেশি ভতি রয়েছে। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন থাকলেও সেটা শুধু নতুন ভবন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। পুরনো ভবনে অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। ওখানে শুধু বোতলজাত অক্সিজেন দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে অক্সিজেনের ছোট বোতল রয়েছে ৬০টি। আর বড় বোতল ৩২টি। আর করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে ৪৫ জন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগী রয়েছে ৪৬ জন। এই সীমিত বোতলজাত অক্সিজেন দিয়ে করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সেবা দিয়ে আসছি।’
তবে যে কোনো সময় অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে জানান আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিকাশ কুমার শিকদার।
মাগুরা জেলা সিভিল সাজন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, মাগুরা জেলায় করোনা সংক্রমণ অন্য জেলার চেয়ে এখনও কম। মৃত্যুও কম। তবে তা বাড়ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকরা করোনা রোগীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে পরামর্শ দিচ্ছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, বর্তমানে টেলিমেডিসন চালু রয়েছে। সেখানেও করোনা রোগীর চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীকে আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আগের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা বেশি হচ্ছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, করোনা ওয়ার্ডে স্বজনদের অবাধে চলাফেরার কারণে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। করোনা ওয়ার্ডে তিনজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স দিয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে বলে জানান তিনি।
জেলায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৬২ জনের। শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ জনের। মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। বর্তমানে ৩৪১ জন হোম আইসোলেশনে এবং ৪৫ জন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
শাহীন/বকুল