ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনায় বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ৪৮শ হেক্টর আমন বীজতলা

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৩:২১, ১ আগস্ট ২০২১
খুলনায় বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ৪৮শ হেক্টর আমন বীজতলা

খুলনার কয়রায় পানিতে নিমজ্জিত আমন বীজতলা

টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৭ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি ডুবে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চার হাজার ৮শ’ হেক্টর জমির আমন বীজতলা।

এদিকে, খুলনা আবহাওয়া অফিস নিম্নচাপের কারণে গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান রোববার (১ আগস্ট) জানান, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে খুলনায় এক হাজার ৮১৫ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা ডুবে গেছে। এর মধ্যে কয়রায় এক হাজার ১৫ হেক্টর জমি রয়েছে। কয়রার সুইস গেটের কপাট খুলে যাওয়ায় পানি আটকানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কয়রার বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দাকোপের ৭০০ হেক্টর জমির বীজতলা ডুবে গেছে।

উপ-পরিচালক আরও জানান, খুলনায় এ বছর পাঁচ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরি হয়েছে। বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি। বৃষ্টির কারণে ৩১৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি জমি ডুবে গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস থাকায় আউশ ধানের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া, টিপনা রুদাঘরা খলশী, চুকনগর, মাগুরাঘোনা গোলনা মাদার তলা, চ্যাংমারী, শাহাপুর, সাহস রাজাপুর, সরাফপুর, শোভনা মাগুরখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলে জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আমন ধানের চারাগাছ, শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে ঘের তলিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। কৃষক ও মাছ চাষিদের মাথায় হাত উঠে গেছে। করোনার কারণে এবার বীজ ও পোনা অধিক দামে কিনে চাষাবাদ করেছিলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, ভারী বর্ষণে ৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ৭ হেক্টর সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।  আগামীতে সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরি করে পূনর্বাসন করা হবে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক জানান, অতিবর্ষণ  ও জোয়ারের পানিতে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৯০৮ হেক্টর আয়তনের ২৬৫০টি ঘের ও ১৯.৫ হেক্টর আয়তনের ২৩০টি পুকুর গলদা-বাগদা রেনু ও সাদা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। পুকুর ও ঘেরের অবকাঠামো ক্ষতি ১০ লক্ষাধিক টাকা সহ মৎস্য খাতে প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ঘের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করা হবে। এবং যে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, সেই সব এলাকার পানি দ্রুত নিস্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম জানান, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার এক হাজার ৭০০ হেক্টর আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পাশাপাশি ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন জমি ও ৫০০ হেক্টর সবজি ডুবে গেছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাটে এক হাজার ২৮৭ হেক্টর জমির আমন বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ জেলায় পাঁচ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছিল। রোপা আমনের ১৫ হেক্টর জমি ডুবে গেছে।

উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম আরও জানান, জেলায় ২৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়। আউশ ধানের ৯৫০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত। আউশ চাষ হয় পাঁচ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমিতে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হয় ছয় হাজার ৩০৫ হেক্টর। এর মধ্যে ২০৯ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। জেলার মধ্যে শরণখোলায় সবচেয়ে বেশি জমি ডুবে গেছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ রোববার এ প্রতিবেদককে জানান, গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে  ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে, এখন আর নিম্নচাপ নেই। মোংলা বন্দরের ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতও তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন স্বাভাবিক আবহাওয়া চলছে।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়