ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর কথা বলে শিশু হত্যার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১১:৪১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর কথা বলে শিশু হত্যার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

মাদারীপুরে শিবচরে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর কথা বলে এক শিশু হত্যা ও আরও এক শিশুকে হত‌্যাচেষ্টার অভিযোগে কায়েস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়কের কাছে এই ঘটনা ঘটে।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাদারীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিছুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন।

নিহত রতন (৮) শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের তাহের আকনের চর কান্দী গ্রামের জসিম মোল্লার ছেলে। আহত সোহান (৯) একই গ্রামের নাসির শিককদারের ছেলে।

এসময় মেহেদী হাচান কায়েস (১৯) নামে এক কিশোরকে আটক করা হয়। তিনি শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের কাচাই মাতবরের কান্দি গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়ার ছেলে।

নিহত রতনের মা জরিনা বেগম বলেন, ‘বিকেলে ৫টার দিকে দেখলাম রতন ও সোহান আমাদের বাড়ির পাশে নাচতেছে আর কায়েস সোহানের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছে। এসময় আমি ওখানে গেলে ওরা অন্যত্র চলে যায়। পরে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও রতন ও সোহানকে না পেয়ে দুই পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে সোহানের নানা বাড়ি ফোন দিলে ঘটনা শুনতে পাই। আমার রতনকে কায়েস মেরে ফেলছে। এ ঘটনায় আমি ওর বিচার চাই,ফাঁসি চাই।’

আহত সোহানের মামা ইউসুফ মাদবর বলেন, ‘বিকেলে আমার মেঝ বোনের ছেলে সোহানের মোবাইল নিয়ে সে ও তার বন্ধু রতন খেলছিলো। এসময় ওদের দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইলে খেলার কথা বলে দূরে নিয়ে যায় কায়েস। সেখানে নিয়ে আমার ভাগিনাকে একশ টাকা হাতে দিয়ে বলে, তুই একটি বিস্কুট ও এক বোতল পানি কিনে নিয়ে আয়। তখন সে বিস্কুট ও পানি আনতে গেলে, তখন রতনকে মেরে ফেলে কায়েস। পরে সোহান তার বন্ধু রতনের কথা জিজ্ঞাসা করলে, কায়েস বলে ওকে ৫০ টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে আমার ভাগিনাটাকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে ওর গলায় তার পেঁচিয়ে মারার জন্য চেষ্টা করে। এসময় ওর চিৎকারে ওই কায়েস দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন ওখানে থাকা ইমরান ও জাকির নামে আমার এলাকার দুই ছোট ভাই আমার ভাগিনাকে উদ্ধার করে আমাগো বাড়ি নিয়ে আসে। পরে আমরা সব কিছু জানতে পারি।এঘটনায় আমি ঘাতকের ফাঁসি চাই।’

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জানান,  মঙ্গলবার বিকেলে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর কথা বলে রতন ও সোহানকে ফুসলিয়ে কাঁঠালবাড়ীর পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়কের কাছে নিয়ে আসেন মেহেদী হাসান কায়েস। এরপর সোহানকে খাবার আনার কথা বলে দূরে রেখে রতনকে রাস্তার ধারে একটি শিশু গাছের নিচে নিয়ে যান। সেখানে রতনের কোমরে থাকা প্যান্টের বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। কিছুক্ষণ পরে সোহানকে নিয়ে কায়েস কাঁঠালবাড়ি ঘাট সংলগ্ন বালুর মাঠে নিয়ে গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালান। এসময় সোহান চিৎকার করলে কায়েস পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন সোহানকে উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ি এলাকায় তার নানা বাড়ি নিয়ে যায়। পরে তার আত্মীয় স্বজনরা শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিবচর থানায় নিয়ে যান।পরে সোহানের দেওয়া তথ্য মতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিবচর থানা পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কায়েসকে তার নানা বাড়ি এলাকা থেকে আটক করে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে রতনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাত ১২টার দিকে রতনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

প্রাথমিকভাবে একটি মোবাইল চুরির উদ্দেশ্যে এই হত‌্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বেলাল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়