ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:০১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১
কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু: ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা

প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। 

কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার সেকশন অফিসার মো. রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিকেলে তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, সদস্য অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) শাহাবুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক ভাইস-চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

৪৮ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে ১৩টি সংযুক্তি রয়েছে- উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে কী আছে- সেটি বলতে পারেননি রবিউল ইসলাম। তবে, প্রতিবেদনে ঘটনার আদ্যপান্ত সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরে বেশ কিছু সুপারিশ বা প্রস্তাব করা হয়েছে- বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ধারণা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। কেউ দোষী সার্বস্ত হলে পরে সিন্ডিকেট সভায় তা উত্থাপন করে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কুয়েটের প্রফেসর ড. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তদন্ত রিপোর্ট বিশ্ববিবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করা হয়েছে। 

ফজলুল হক হলের আসাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচিত করার জন্য ৩০ নভেম্বর ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ আছে, সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত ছাত্ররা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায়, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। পরে দুপুর ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন।

শিক্ষকের মৃত্যুর দিন রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। দুজন সদস্য ছিলেন অধ্যাপক আতাউর রহমান ও অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদার। তাদের মধ্যে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে এবং মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরে ৫ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় গত ৪ নভেম্বর ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। 

গত ১৫ ডিসেম্বর ড. সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ বাঁশগ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়। 

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে ৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বন্ধের মেয়াদ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়, কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, শিক্ষকের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। সময় লাগবে। মামলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা আসেনি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা স্যারের মৃত্যুর পর ৫টি দাবি করেছিলাম। তার মধ্যে প্রথম দাবি ছিল সন্দেহজনকভাবে জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এরপর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সকল দায়-দেনার বাইরে শিক্ষকের পরিবারকে ১ কোটি টাকার আর্থিক সহযোগিতা করা; ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শনাক্তপূর্বক ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা, পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে;  ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এবং সর্বশেষ দাবি ছিল শিক্ষক মৃত্যুর বিষয়টি আইনিভাবে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা।
 

নূরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়