ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’ দেখে মুগ্ধ হাজারো দর্শক

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১০:৪৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’ দেখে মুগ্ধ হাজারো দর্শক

মাঠের মাঝখানে পুঁতে রাখা হয়েছে একটি কলাগাছ। গোড়ায় পানিভর্তি মাটির ঘটি। চারপাশ চুন দিয়ে বৃত্তাকারে ঘিরে রাখা হয়েছে। খেলার মাঠটিও বৃত্তাকারে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে মাঠের বিভিন্ন পাশে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রাখতেই শুরু হয় মন্ত্রপড়া। এই খেলাটির নাম তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা।’

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের ভূল্লী আজিজনগর ফরেস্টডাঙ্গায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। 

আরো পড়ুন:

স্থানীয় যুবকদের আয়োজনে দীর্ঘদিন পর এই খেলা দেখতে মাঠে হাজির হন আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এসময় সেখানে এক উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খেলায় ১৩ জন ওঝা বা তান্ত্রিক এবং হাত খেলা বা পাতা হিসেবে ছিলেন ৪ জন।

খেলায় অংশ নিতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচটি তান্ত্রিক দল আসে। নিজ নিজ মন্ত্র দিয়ে পাতারূপী মানুষকে মাঠের মাঝখান থেকে নিজের দিকে টানার প্রতিযোগিতা করেন তারা। যে দল তাদের তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ নামের পাতাকে নিজের দিকে টানতে পারবে, সেই দলই পয়েন্ট পাবে। পরে পয়েন্ট হিসেব বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

তন্ত্রমন্ত্রের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বিজয়ী হন কালিমহন মেম্বার দল ও রানারআপ হন অখিন চন্দ্র দল। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী দলকে ১০ হাজার ও দ্বিতীয় হওয়া দলকে ৬ হাজার টাকার প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

খেলা দেখতে আসা ইশিতা বলেন, ‘পাতা খেলা নামে যে কোনো খেলা ছিল তা জানা ছিল না। এই খেলা আগে কখনো দেখিনি। খেলাটি খুবই মজার।’

কামাল হোসেন নামের অপর এক দর্শক বলেন, ‘আমাদের গ্রামগঞ্জে কখনোই পাতা খেলা হয়নি। তাই এই প্রথম দেখতে এসেছি। মন্ত্রের মধ্য দিয়ে পাতারূপি মানুষকে তান্ত্রিকরা নিজেদের দিকে টানছিলেন, এটা একটা অদ্ভুত খেলা।’

জহিরুল ইসলাম নামের অপর একজন বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখনকার ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ছিল পাতা খেলা। আগে এই খেলা বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ কোথাও দেখা যায় না। তাই অনেক দিন পর এমন খেলার কথা শুনে আর লোভ সামলাতে পারিনি। খেলাটি উপভোগ করলাম। খুব ভালো লাগলো।’

খেলা পরিচালনাকারী আলী হোসেন নুরু বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই খেলার নাম শুনে এসেছি, কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। আগে বিভিন্ন এলাকায় খেলাটি হতো বলে শুনেছি। দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন না করায় ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই খেলাটি ধরে রাখতে ও পুনরুদ্ধারে এই আয়োজন। স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে মানুষকে আনন্দ দিতে প্রতিবছর এমন আয়োজন করা হবে।’

খেলা শেষ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ জুলফিকার আলী।

এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিশু মোহাম্মদ,  সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রওশনুল হক তুষার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ জুলফিকার আলী, ভূল্লী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম আতিকুর রহমান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, জেলা যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এস এম সাওন চৌধুরী, বাহার আলী সরকার, সদর উপজেলা যুবলীগের নূরে আলম প্রমুখ।

মঈনুদ্দীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়