ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

চোর সন্দেহে দিনমজুরকে নির্যাতন: গ্রেপ্তার ৫ 

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ১৫ মার্চ ২০২৩  
চোর সন্দেহে দিনমজুরকে নির্যাতন: গ্রেপ্তার ৫ 

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে চোর সন্দেহে দিনমজুর শেখ মনিরুজ্জামানকে (৪২) নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোল্লাহাট থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। 

এর আগে নির্যাতনের শিকার শেখ মনিরুজ্জামানের বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আট জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা তিন থেকে চারজনকে আসামি করে মোল্লাহাট থানায় মামলা করেন।  

আরও পড়ুন: চোর সন্দেহে দিনমজুরকে নির্যাতন

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোল্লাহাট উপজেলার ঘোষগাতি এলাকার হেকমত শেখের ছেলে  আরিফুল শেখ (২৬), আব্দুল হালিম শেখের ছেলে  আব্দুল গনি শেখ (৩৫), আহমদ শেখের ছেলে  আলমাস শেখ (২৭), নগরকান্দি এলাকার সিদ্দিক শেখের ছেলে  মাহমুদ শেখ (২৮), লায়েক শেখের ছেলে আকাশ শেখ (২৭)। 

আহত মনিরুজ্জামান উপজেলার পূর্ব দারিয়ালা গ্রামের প্রয়াত ইসলাম শেখের ছেলে। ভূমিহীন হওয়ায় গাংনী মাতারচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারের দেওয়া একটি বাড়িতে থাকেন তিনি।  

মামলার এজাহারে জানা যায়, গত ১১ মার্চ মোল্লাহাট উপজেলা পশু হাসপাতালে ছাগলের চিকিৎসা করে বাড়ি ফিরছিলেন দিনমজুর মনিরুজ্জামান। ঘোষগাতি এলাকায় মোবারকের দোকানের সামনে পৌঁছালে মনিরুজ্জামানের পথ আটকে কিছু লোক তাকে মারধর করেন। লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেন হামলাকারীরা। মনিরুজ্জামান চিৎকার করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন হামলাকারীরা। নির্যাতনকারীরা মারধর ও মনিরুজ্জামানের চিৎকারের ভিডিও ধারণ করে।  পরবর্তীতে নির্যাতনের ভিডিও  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন তারা।  নির্যাতনের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুজ্জামানকে ভ্যান থেকে নামিয়ে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে একটি গামছা দিয়ে তার দুই হাত বাঁধছেন এক ব্যক্তি। এসময় আরও কয়েকজন এসে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করেন তাকে। বারবার চোর না বলে তাদের কাছে আকুতি করতে থাকেন মনিরুজ্জামান। কিন্তু নির্যাতনকারীরা তাকে মারতে থাকে। পরে কয়েকজন এসে তার পাও বেঁধে দেয়। 

অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাঁধা অবস্থায় হাত, পা ও পিঠে আঘাত করতে করতে একজন হাপিয়ে গেলে আরেক জন এসে মারছেন মনিরুজ্জামানকে। যারা মারছিলেন পাশে থাকা ব্যক্তিরা তাদের ‘উপুর করে, সোজা করে, পায়ে, তালুতে মার’ বলে নির্দেশনা দিতে শোনা যায় নির্যাতনকারীদের। মনিরুজ্জামানের জ্ঞান ফিরলে কয়েকজন জড়ো হয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।তখন ছাগল চুরির পাশাপাশি এলাকায় গরুর চুরির ঘটনাতেও তাকে অভিযুক্ত করতে শোনা যায়।   

আহত শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একটা ছাগলের বাচ্চা নিয়ে আমি আর আমার এক চাচা জাহিদ মোল্লাহাট পশু হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় ছাগলের মালিক জাহিদ চাচাকে রানিং (ভ্যান চলন্ত) অবস্থায় কে বা কারা লাঠি দিয়ে একটা আঘাত করে। ওই বাজারের ওখানে কয়েকজন আগে থেকে দাঁড়ানো ছিলেন। পরে আরও লোক হয়। আঘাত পেয়ে সে (জাহিদ) দৌঁড় দেয়। তখন তারা বলে সে চুরি করে নিয়ে পলাচ্ছে। পরে লোকজন জড়ো হলে আমারে মারধর করে। আমি কাজ করি। আমাকে মিথ্যা চুরির অভিযোগ দিয়ে প্রচুর মারিছে। মারতি মারতি অনেকগুলো লাঠি ভাঙিছে আমার গায়। আমি জ্ঞান হারায় ফেলে ছিলাম। সেখানে লোক ছিল প্রচুর, প্রায় ৪০-৫০ জন। কিন্তু মারছে তিন চারজনে। সবাইরে চিনি না। একজন ছিল ওয়ার্কশপে কাজ করে। তার নাম মাহামুদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারেবারে হাতে পায়ে ধরে বলছি, আমারে মারার আগে একটু যাচাই করে নেও। আমি চোর না, কেই কোন কথাই শুনিনি। আমি শুধু শুধু মারছে।’

মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নাহিদুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনির শিকার এক ব্যক্তিকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীর জুড়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে কোথাও ক্ষত নেই, সবই ব্লাংক হুইপেনের (লাঠিজাতীয় কিছু) আঘাত।উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সম্বনয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম  বলেন, দিনমজুরকে নির্যাতনের মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অভ্যাহত রয়েছে।

টুটুল/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়