ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু, বাঁচাতে বাবা-মায়ের আকুতি

নূর আহমদ, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৬ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ০৯:৩১, ১৬ মার্চ ২০২৩
বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু, বাঁচাতে বাবা-মায়ের আকুতি

মায়ের কোলে শিশু আয়াত

আয়াত হক। বয়স ৮ মাস। বিরল রোগে আক্রান্ত আয়াত যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে। এসএমএ (স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি) রোগে আক্রান্ত আয়াতের চিকিৎসা দেশে নেই।  বিদেশে নিয়ে গেলেও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আয়াতকে ঘিরে পরিবারজুড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার।

আরও পড়ুন: এসএমএ: শিশুর বিরল রোগে নিরুপায় অভিভাবক

সিলেট নগরীর মেজরটিলা ইসলামপুরের বাসিন্দা জুনেদ হক ও ফারজানা আক্তার আয়াতের বাবা ও মা। বাবা জুনেদ আহমদ ও মা ব্যাংক কর্মকর্তা ফারজানা জানান, আয়াতের জন্ম ২০২২ সালের ২০ জুন। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান। জন্মের তিন মাস পর আয়াতের হাত—পা ও ঘাড় স্বাভাবিক নড়চড়া না করলে তাদের মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করে। তারা সিলেটে একাধিক শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ‘মেডেস্ক’ নামে বেসরকারি হাসপাতালের ডা. মিজানুর রহমানের কাছে আয়াতকে নিয়ে যান। আয়াতকে প্রাথমিকভাবে চেকআপ করে ডা. মিজান জানান, শিশুটি এসএমএ (স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি) রোগে আক্রান্ত। রক্তের পরীক্ষার জন্য নমুনা বিদেশে পাঠানো হয়। ওই রোগের কোনো পরীক্ষাই দেশে হয় না। পরে রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যায় আয়াত ‘এসএমএ’ রোগে আক্রান্ত।

পরবর্তীতে ‘এসএমএ’ রোগ বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজির চিকিৎসক ডা. জোবায়দা পারভিনের কাছে তারা আয়াতকে নিয়ে যান। পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের এই কনসালটেন্ট জুনেদ ও ফারজানাকে পরামর্শ দেন—বিদেশি ওষুধ কোম্পানি ‘নোভার্টিস’ বরাবরে একটি আবেদন করার জন্য। কোম্পানিটি প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে বিশ্বের ‘এসএমএ’ আক্রান্ত দুই শিশুকে ২২ কোটি টাকা দামের ‘জোলগেনসমা’ নামের ইনজেকশনটি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে।

আয়াতের মা ব্যাংক কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ডা. জোবায়দা পারভিনের এ পরামর্শের পর আমরা নোভার্টিস এর কাছে আবেদন করেই। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবেদনকারীদের মধ্য থেকে তারা লটারির মাধ্যমে দুই শিশু নির্বাচিত করে। এখন লটারিতে আয়াতের নাম উঠবে কি না সেটা তো বলা যায় না। যদি না উঠে তবে কি চোখের সামনেই আমাদের সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে? মা—বাবা হয়ে সে দৃশ্য আমরা সহ্য করবো কীভাবে? আমার আয়াত যখন শ্বাসকষ্টে ভোগে তখন কষ্টে আমাদের বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেক সময় ৩—৪ মিনিট পর্যন্ত সে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না। আয়াত নিজে নড়াচড়া করতে পারেনা। মা—বাবা তাকে যে পাশে ফেরাবেন, সেই পাশেই আয়াত পড়ে রয়। ঘাড় ফেরানোর শক্তি নেই। হাত—পাসহ পুরো শরীর তুলতুলে। বলা যায় নিস্তেজ শরীরটাই শুধু আয়াতের।’

অপরদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অন্যান্য রোগের মতো এই রোগ নয়। আয়াতের যে রোগ ধরা পড়েছে সেটি হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে বিরল একটি রোগ যার নাম এসএমএ (স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি)’। যে রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন ২২ কোটি টাকা।

চিকিৎকরা জানিয়েছেন, পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী—টাইপ ওয়ান থেকে ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ রোগ। বাংলাদেশে এর কোনো চিকিৎসা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি কোম্পানি কয়েক মাস আগে এর ওষুধ বাজারে নিয়ে আসলেও তা কেনা সাধারণ মানুষের সাধ্যাতীত। বর্তমানে এসএমএ প্রতিরোধক ইনজেকশনের দাম ২২ কোটি টাকা।

এছাড়া এ রোগ নিরাময়ে ‘রিসডিপ্লাম’ নামের মুখে খাওয়ার ওষুধ রয়েছে। এটি এক ধরনের জিন থেরাপি। তবে প্রতি মাসে খাওয়াতে হয় ১০ লাখ টাকার ওষধু। আর খাওয়াতে হয় মৃত্যু পর্যন্ত। ফলে ওষুধ বা চিকিৎসা না পেয়ে আক্রান্ত শিশুদের স্বজনরা হয়ে পড়েন দিশেহারা।

আয়াতের মা ফারজানা আক্তার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।  তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস—একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যদি উদ্যোগ নেন তবেই বিরল রোগে আক্রান্ত আমার আয়াতকে চিকিৎসার মাধ্যমে বাঁচানো যেতে পারে।

আয়াতের বাবা জুনেদ হক বলেন, আমার দুটি কিডনি বিক্রি করে যদি মেয়েটির চিকিৎসা করা যেতো তবে আমি তাই করতাম। সহায়—সম্পত্তি যা আছে সবকিছু বিক্রি করলেও যদি মেয়েটি সুস্থ হত। তবে আমি তা করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, আর কারো সন্তানে যন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় এবং দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালুর জন্যও তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়