‘বৈসাবি’ উৎসব পালনে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক প্রস্তুতি
খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন সাজসাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণকে সামনে রেখে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে। আগামী ১২ এপ্রিল নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে উৎসব শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান পর্যাক্রমে আনন্দ র্যালির আয়োজন করছে। মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টটিভ্যাল বা পানি উৎসব ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় গড়িয়া নৃত্য’র আয়োজন করা হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে এবার উৎসব মখুর পরিবেশে বৈসাবি পালিত হবে এমনি প্রত্যাশা পাহাড়ি জনগোষ্ঠির।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন করে আসছেন। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ত্রিপুরা ভাষায় ‘বৈসুক’, মারমা ভাষায় ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমা ভাষায় ‘বিজু’ নামে এ উৎসব পালন করে থাকেন। এই তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১১ এপ্রিল বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে পুরাতন বছর বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হবে।
ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে তঙ্চঙ্গ্যা,বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো,খুমি,আসাম, চাক ও রাখাইনসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্র্যময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে। বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরো সু-দৃঢ় হোক এমটাই প্রত্যাশা সবার।
ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সভাপতি সুশীল বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকাশে উৎসবের আয়োজন করেছি। প্রতিটি ঘরে ঘরে বৈসু (বৈসাবি) পালন করা হবে।’
লেখক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, ‘বৈসু উদযাপনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম নিজেদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সর্ম্পকে ধারণা পাবে। কারণ নতুন প্রজন্ম সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি-নীতি ভুলতে বসেছে। এ ধরনের উৎসব তাদের মধ্যে নতুন চেতনা উন্মোচন করবে।’
আজাদ/ মাসুদ
আরো পড়ুন