ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ৬ মে ২০২৩  
তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি

অনাবৃষ্টিতে নদীগুলোতে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানিও। গ্রীষ্ম মৌসুমে এমন খড়ার কারণে পানি নেমে গেছে মাটির গভীরে। এতে করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কয়েকটি গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। ফলে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।

উপজেলা সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়াল জোত, ডাঙ্গীবস্তি, সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা উচু এলাকা হওয়ায় চলতি মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে অচল হয়ে পড়েছে হস্তচালিত নলকূপ। ফলে সঙ্কট দেখা দেয়- খাবারসহ পারিবারিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত পানির। 

দর্জিপাড়া এলাকার ফিরোজা আক্তার, সিদ্দিক নগরের নুরজাহান, মনোয়ারাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, দুই মাস ধরে ঠিকমত টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও পানি মিলছে না। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা পানি পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুত খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। বাড়িতে ব্যবহৃত কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যে পানি দরকার তা মিলছে না। এক বালতি পানি টিউবওয়েল চেপে তুলতে সময় লাগছে অনেক।

নলকূপ মিস্ত্রি ওয়াজেদ আলী বলেন, পঞ্চগড় জেলার মধ্যে তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকায় এ সময়টাতে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। টিউবওয়েলে পানি থাকে না। আমরা সর্বোচ্চ এখানে ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ স্থাপন করে থাকি। তারপরেও জানুয়ারি থেকেই পানির লেয়ার নামতে শুরু করে। ৬০ ফুট পর্যন্ত লেয়ার নেমে গেছে। এ কারণে এখানকার টিউবওয়েলগুলোয় পানি উঠছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। অসহায়-গরিবদের খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি কম উঠছে। ৮-১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে শ্যালো মেশিন বসানো হচ্ছে। ইঞ্জিন গর্তে বসানোর পরেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে না। কম পানি উঠছে। এতে বোরো আবাদসহ অন্যান্য ফসল আবাদে সেচ খরচ অনেকগুণে বেড়েছে।

তেঁতুলিয়ার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, সদর ইউনিয়নের কিছু গ্রামে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। আমরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিভাবে এ সমস্যা উত্তোরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম তখন পানির প্রথম লেয়ার ৩২ ফুট নিচে নেমে যেতে দেখেছিলাম। বিশেষ করে বরেন্দ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণ হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। এতে খাবার পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী বলেন, এই সময়ে মাটির গভীরে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় কিছুটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ওই সব এলাকার আশেপাশে গভীর নলকূপের কারণে সেচে পানি টানছে। যার কারণে নলকূপে পানি কম মিলছে। তাবে যাই হোক, আমাদের উপজেলা প্রকৌশলীকে ওইসব এলাকায় পাঠাবো। তারা ওয়াটার লেভেলসহ যাবতীয় পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট ও বরাদ্দ দিলে সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়