ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রোগী পরিবহন না করেই অকেজো উপহারের অ্যাম্বুলেন্স

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৬ মে ২০২৩   আপডেট: ২২:০৬, ২৬ মে ২০২৩
রোগী পরিবহন না করেই অকেজো উপহারের অ্যাম্বুলেন্স

অকেজো হয়ে যাওয়া একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দুটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রোগী পরিবহন না করেই এখন এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। ইতোমধ্যেই একটি অ্যাম্বুলেন্স পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে এই অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে উপজেলার মেঘাই নৌ-ঘাটে। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কখনও জনসাধারণের সেবায় আসেনি অ্যাম্বুলেন্সগুলো। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দাবি, তেল বরাদ্দ না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মধ্যে ছয়টি যমুনা নদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত। লোক সংখ্যা বিবেচনায় অর্ধেক মানুষ চরে বসবাস করেন। চরাঞ্চলে দুটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও প্রতি ইউনিয়নে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও অপ্রতুল লোকবল এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশীরা যাতায়াত করেন।

প্রথম অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক কবে কাজিপুরের আনা হয়েছিলো তার কোনো তথ্য না থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় ৭ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আউটসোর্সিং থেকে একজন চালকও রয়েছেন। তবে কাজ না থাকলেও তিনি সব সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন ঠিকভাবেই।

কাজীপুর সদর ইউনিয়নের খুদবান্ধি গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলের বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী দুইটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছেন সেটি আমাদের জানা  ছিল না। জরুরি স্বাস্থ্যসেবার কাজে কখনও অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার হতে দেখিনি।

উপজেলার রেহাইশুড়িবেড় গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, চরাঞ্চলের বসবাসরত মানুষের জরুরী স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে ভাড়া নৌকা একমাত্র ভরসা। সেক্ষেত্রে শিশু, প্রবীণ ও প্রসূতিদের ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সরকার আমাদের জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা রাখলেও আমারা এতোদিন তা জানতামই না। 

চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা সদরে যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্রুত গতি সম্পন্ন আধুনিক নৌ অ্যাম্বুলেন্স এ অঞ্চলের জন্য খুবই প্রয়োজন।

নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল কবির বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে নৌকায় পারাপারে সময় সুস্থ্য মানুষ অনেক সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাহলে রোগীদের কোন পর্যায়ের দুর্ভোগ হয়। একটি ভালো মানের নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলে সঠিক সময়ে উন্নত স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হতো।

কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোমেনা পারভিন পারুল বলেন, প্রথম নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। দ্বিতীয় অ্যাম্বুলেন্সটি এখনো সচল আছে। গত ৭/৮ মাস আগে সেটি সংস্কার করা হয়েছে। সরবরাহকৃত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ধীর গতির হওয়ায় জনপ্রিয়তা পায়নি। এছাড়াও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তেল অথবা সমপরিমাণ অর্থ সরকারি ভাবে বরাদ্দ না থাকায় সেবা দিতে পাড়ছে না। বিষয়টি লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়