ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শুকিয়ে গেছে কাপ্তাই লেক

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ২৭ মে ২০২৩   আপডেট: ১৬:৪৩, ২৭ মে ২০২৩
শুকিয়ে গেছে কাপ্তাই লেক

কাপ্তাই লেকের যে এলাকাগুলোতে এক বছর আগেও জেলেরা জাল ফেলে মাছ শিকার করেছেন, যে পথে ধোঁয়া উড়িয়ে শব্দ করে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে গেছে ইঞ্জিনচালিত নৌযান- এখন সেসব এলাকা সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠ। যে দীর্ঘ সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতো অথৈ পানি সেই সেতুর নিচে এখন শিশু-কিশোর ফুটবল খেলে। এই দৃশ্য এখন দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম লেক হিসেবে পরিচিত কাপ্তাই লেকের। 

অনাবৃষ্টির ফলে কাপ্তাই লেকের পানি শুকিয়ে একেবারে তলানীতে পৌঁছেছে। লেকের পানির ওপর উৎপাদন নির্ভরশীল কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

কাপ্তাইয়ের বিলাইছড়ি এলাকার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কাপ্তাই লেকের পানি এখন স্মরণকালের সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। বিলাইছড়ি, ফারুয়া, রাঙ্গামাটি, জুড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’ 

উচিংথোয়াই মারমা নামের বিলাইছড়ির স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘কাপ্তাই লেকের ইতিহাসে পানি এতোটা কমে যেতে দেখিনি। দেশে কখনো এতো দীর্ঘ সময় অনাবৃষ্টি ছিলো না। এখন কাপ্তাই লেকের উপর দিয়ে নৌযান চলাচলের পরিবর্তে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি যেতে আগে যেখানে ১ থেকে দেড়ঘণ্টা সময় লাগতো এখন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে। কাপ্তাই লেকে পানি না থাকায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিলাইছড়িতে সব পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।’ 

রাঙ্গামাটির আসামবস্তি এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসামবস্তি এলাকায় কাপ্তাই লেক শুকিয়ে এখন খোলা সবুজ মাঠ। যেখানে এক বছর আগেও জাল ফেলে জেলেরা মাছ শিকার করতেন। এখন ওই স্থানটিতে ফুটবল খেলে শিশু-কিশোররা। আসামবস্তির দীর্ঘ সেতুর নিচ দিয়ে যেখানে লেকের পানি প্রবাহিত হতো, সেই সেতুটি এখন ফ্লাইওভারে পরিণত হয়েছে। সেতুর নিচে কোনো পানি নেই।’ 

সরজমিনে কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লেকের বিভিন্নস্থানে যে নৌযানগুলো পানিতে ভেসে থাকার কথা সেগুলো এখন শুকনো মাটিতে আটকে আছে। যেখানে জেলেরা মাছ শিকার করার কথা সেখানে কিশোররা ফুটবল খেলছে। 

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের বলেন, ‘দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন প্রায় বন্ধের পর্যায়ে রয়েছে। মূলত লেক থেকে কর্ণফুলী নদীতে পানি প্রবাহের মাধ্যমেই এই কেন্দ্রের পাঁচটি  ইউনিটে দৈনিক ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এখন লেকে পানি না থাকায় পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট চালু রাখলেও পিক আওয়ারে ওই ইউনিট থেকে দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।’ 

কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী ২৫ মে) পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ১০ ফুট মিন সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু লেকে এখন পানি রয়েছে ৭৩ এমএসএল। অনাবৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এবং লেকের পানির স্তর আর মাত্র ৩ এমএসএল কমে গেলেই কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়