ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

জারি গানে বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৬ জুন ২০২৩  
জারি গানে বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ

‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই' গানের তালে নেচে বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্করা। এসময় তাদের কারও মাথায় কুলা, হাতে বোতল ছিল। পানিতে ভেজা শরীরে গান গেয়ে বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানাতে জারি গান গান তারা।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দিনব্যাপী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বৃষ্টির জন্য এভাবে গান গাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা কুলা, ডালা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে গানের সঙ্গে নেচে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। বাড়ি উঠানে গেলেই বাড়ির মালিক পানি দিয়ে তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছেন। পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ঢোল বাজাতে দেখা গেছে বাদ্য শিল্পীদের। প্লাস্টিকের বোতল, সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে গান গেয়েছেন সবাই। 

জারি গানে অংশ নেওয়া কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘আমরা ছোটকালে দেখতাম কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টি না হলে বাপ-চাচারা এলাকার শিশু, তরুণদের নিয়ে সন্ধ্যা হলেই বেড়িয়ে পড়তেন জারিগান গাইতে। আশপাশের কয়েকটি পাড়া মহল্লার ঘুরে জারিগান শেষে বাড়িতে ফিরতেন তারা চাল-ডালসহ নানা ধরনের সবজি নিয়ে। এরপর এগুলো দিয়ে পরের দিন রাতে সবাই মিলে বনভোজন করতাম।
তিনি আরো বলেন, বহুদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তাই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে মেঘের জারিগান করলাম। বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহকে ডাকলে তিনি শোনেন। ইনশাআল্লাহ বৃষ্টির দেখা পাবো।’

কলেজ শিক্ষার্থী সজিব আকন্দ বলেন, পরিবেশে পরিবর্তন হচ্ছে বৃষ্টি না হওয়াতে। পূর্ব পুরুষের দেখানো পথে হাঁটার মতো আজ বৃষ্টির জন্য জারিগান করলাম। যা মেঘের জারি নামে পরিচিত। গ্রামে আগে অনেক বেশি হতো এই জিনিসটি। মেঘের জারি গান গেয়ে ৩ মণ চাল উঠেছে। চালগুলো খুশি হয়ে পাড়ার লোকেরা দিয়েছেন। এগুলো দিয়ে রাতে বনভোজন করবো সবাই মিলে। 

বৃষ্টির জন্য জারিতে অংশ নেন লিমন, আদিত্য, তন্ময় মোল্লা শরিফ, ইমরান আল নাঈম, বাউল শিল্পী খোকন, রুকনুজ্জামান রাজিব, ফারুক, আক্তার হোসেন, নুরল ইসলাম, শফিকুল ইসলামসহ গ্রামের কয়েকজন শিশুও।

তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল্লাহ বলেন, মেঘের জন্য জারি গান এটি গ্রাম বাংলার একটি চিরাচরিত ব্যবস্থা। কিন্তু গত কয়েক বছর এটি কোথাও চোখে পড়েনি। এত দিন গ্রামের মানুষ এটা মনে রেখেছে, এটা আমার কাছে ভালো লাগছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা তাদের পূর্ব পুরুষেদের কর্ম মনে রেখেছে।

রফিক/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়