ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

খুলনার ১৪ জেলায় জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ, দাবি আদায়ে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
খুলনার ১৪ জেলায় জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ, দাবি আদায়ে সমাবেশ

তিন দফা দাবিতে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্বালানি ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন খুলনার জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। ফলে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী ১৪টি জেলায় জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমাবেশ করেছেন ধর্মঘট আহ্বানকারীরা।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি, খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ট্যাংকলরী শ্রমিক কল্যাণ সমিতি এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আনুপাতিক হারে জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না।’

অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৩ ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ৪ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন বৃদ্ধিসহ ৩ দফা দাবি পূরণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সরকার দাবি পূরণ না করায় রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তেল সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকায় শনিবার রাত থেকেই খুলনার পাম্পগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। কয়েকটি পাম্প ঘুরে দেখা যায় ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে তেলের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন অনেকেই। খুলনার নতুন রাস্তার মোড়ের এলেনা পেট্রোল পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউস মোড় এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের পেট্রোল পাম্পেও দীর্ঘ লাইন ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত।

এদিকে, রোববার সকালে খালিশপুর, দৌলতপুর, বয়রা, ফুলবাড়ী গেটের কয়েকটি পেট্রোল পাম্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। খালিশপুরের ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা যমুনা থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। সেখানে কয়েক শ' ট্যাংক-লরি দাঁড়িয়ে আছে।

অপরদিকে, ৩ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত রোববার থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ কর্মসূচীর প্রথম দিন সকাল ৮ থেকে খুলনায় শুর হয়ে সারাদিন খুলনাস্থ তিন জ্বালানি ডিপো থেকে কোন ডিলার/এজেন্ট তেল উত্তোলন করেনি।

অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষিত কর্মসূচি চলাকালীন দুপুরে খুলনাস্থ খালিশপুরের ট্যাংকলরী ভবনের সামনে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশন সমিতির খুলনা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল গফফার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আর বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জ্বালানীতেল পরিবেশক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোড়ল আব্দুস সোবহান, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন, বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম মাহবুব আলম, খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মীর মোকছেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আলী আজিম, কোষাধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান মিজু, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ট্যাংকলরী শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম কালু, সংগঠনের নেতা শেখ জাহঙ্গীর হোসেন, আব্দুল মান্নান খান, মো. কামাল হোসেন, কাজী রফিকুল ইসলাম নান্টু, শেখ জামিরুল ইসলাম, মো. মুরাদজ্জামান, শেখ আশিকুজ্জামান প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৯ সাল থেকে একই দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে আমাদের। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উপ-সচিব, বিপিসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার আমাদের দাবিসমূহ যৌক্তিক বলেছেন এবং প্রতিবারই নির্দিষ্ট করে সময় দিয়েছেন। উক্ত সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জনগণের ভোগান্তি ও সরকারকে বিপদে ফেলা যেহেতু আমাদের কাম্য নয়, সেহেতু প্রতিবারই আমাদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এবং দাবিসমূহ বাস্তবায়নে বারবার ব্যার্থ হয়েছেন।

বর্তমান বাজারদর ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের মূল্যে বারবার বৃদ্ধি করা হয়েছে, কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি করতে হয়েছে, সব ক্ষেত্রে ব্যয় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর কমিশন বৃদ্ধি করা হয়নি। যেখানে ১৩০ টাকা ১ লিটার অকটেন/পেট্রোলে বিক্রয়ে ৪ শতাংশ কমিশন দেওয়া হয়, সেখানে ৫২ টাকা ১ লিটার এলপি গ্যাস বিক্রয় ৮ টাকা অর্থাৎ ১৬ শতাংশ কমিশন দেওয়া হচ্ছে। ফলে জ্বালানী ব্যবসায়ীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।

বক্তারা ঘোষণা করেন, আর প্রতিশ্রুতি নয় আমাদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে বাস্তবায় না করা পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ফিলিং স্টেশন সমূহ আমরা বন্ধ রাখিনি, তবে যেহেতু তেল উত্তোলন বন্ধ সেহেতু যেকোন সময় তেল না থাকার কারণে ফিলিং স্টেশন সমূহ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন জনগণ চরম ভোগান্তির স্বীকার হবে।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের তিন দফা দাবি হচ্ছে- জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির অর্থনৈতিক জীবনকাল ৫০ বছর করা, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের ওপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করা।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট খুলনার নিউমার্কেট এলাকায় আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন বাড়ানোসহ ৩ দফা দাবি পূরণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।

নূরুজ্জামান/ মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়