ঈশ্বরদী স্টেশনে অকেজো সিসিটিভি, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম
দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট স্টেশনের সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা বলে অভিযোগ রয়েছে
হরতাল-অবরোধে পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। আর সেই শঙ্কায় পারদ ঢেলেছে সম্প্রতি দুইবার ট্রেন লক্ষ্য করে নাশকতার চেষ্টার ঘটনা। এতে জানমালের ক্ষতি না হলেও, প্রশ্ন উঠেছে কতটুকু নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণ।
গত ১ নভেম্বর ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপ এবং ৩ নভেম্বর এই স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বগির নিচ থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও, এখনো জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট স্টেশনের সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ককটেল নিক্ষেপ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্যতম বড় রেল স্টেশন পাবনার ঈশ্বরদী জংশন। এখান থেকে ট্রেনে করে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন হাজারো যাত্রী। চলমান হরতাল-অবরোধে হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন এলাকা।
ঈশ্বরদী জংশন থেকে ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে আশিকু রহমান ও মহব্বত হোসেন নামের দুই যাত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে এমনিতেই ভয় ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকি। তারপর যখন শুনলাম ঈশ্বরদী রেল স্টেশন থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে তখন একটু ভয় পেয়েছি। ট্রেন আসলেই উঠে পড়বো। গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত মনের ভেতর ভয় কাজ করবে।
আরও পড়ুন: ঈশ্বরদী স্টেশনে বোমা সদৃশ বস্তু
একই ট্রেনের যাত্রী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ট্রেনে বা রেল স্টেশনে নিরাপত্তার অভাব আছে। পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নেই। স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরার সব নাকি বন্ধ। তাহলে প্রশ্ন ওঠে কর্তৃপক্ষ কিভাবে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করবে? নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই দুইবার দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জংশনে নাশকতার চেষ্টা করার সাহস দেখিয়েছে দুর্বৃত্তরা।’
শুধু যাত্রী নয়, ট্রেনের কর্মচারীদের মাঝেও বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারাও। ঈশ্বরদী রেলওয়ের টিটিই আব্দুল আলীম মিঠু বলেন, ‘এমনিতেই বিভিন্ন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে অহরহ। অনেক যাত্রী আহত হন। এর মধ্যে ট্রেনে নাশকতার চেষ্টা নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। স্টেশন ও ট্রেনগুলোতে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করি।’
আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে ট্রেনের নিচে পাওয়া বস্তুটি বোমা, নিষ্ক্রিয় করেছে র্যাব
সামাজিক সংগঠন সবুজ পৃথিবী ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি সেলিম সরদার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে অপরাধগুলো হচ্ছে। ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে হামলা, ট্রেনের নিচে ‘বোমা’ রেখে যাওয়া এগুলো নিরাপত্তার ঘাটতির জন্যই হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা ও নিরাপত্তা বাড়ানো গেলে নাশকতা এড়ানো যাবে।’
এদিকে, স্টেশনের ১৭টি সিসিটিভির ক্যামেরা অকেজো দীর্ঘদিন ধরে। যে কারণে নাশকতাকারী কাউকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, দু’টি ঘটনায় মামলা হলেও, জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঈশ্বরদীর পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘নাশকতা প্রতিরোধে স্টেশন ও ইয়ার্ড এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের সশস্ত্র টহল পার্টি সার্বক্ষনিক স্টেশন এলাকায় নজরদারিতে রয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’
ঈশ্বরদী জংশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন সুপারিন্টেনডেন্ট মহিউল ইসলাম বলেন ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমরাও সজাগ আছি। আর কোনো নাশকতা যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। স্টেশনের সিসিটিভির ক্যামেরাগুলো নষ্ট। নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো দরকার।’
ঈশ্বরদী রেলওয়ের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ইতোপূর্বে মৈত্রী এক্সপ্রেসের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আর ট্রেনের নিচে বোমা রাখার ঘটনায় জিডি হয়েছে। এসব ঘটনা তদন্ত চলছে। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, পাকশী বিভাগীয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াতাকারী যাত্রীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।
মাসুদ