ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

তীব্র শীত উপেক্ষা করেই গুড় উৎপাদনে আখ চাষিরা 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪  
তীব্র শীত উপেক্ষা করেই গুড় উৎপাদনে আখ চাষিরা 

তীব্র শীত উপেক্ষা করেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার আখ চাষিরা। মেশিনের মাধ্যমে জমি থেকে কেটে আনা আখের রস সংগ্রহ করে আগুনে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ও জুনিয়াদহ ইউনিয়নের চর এলাকায় ও মেঘনাপাড়া গ্রামের মাঠে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। 

সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের নারী-পুরষ, কিশোর-কিশোরীরা খেত থেকে সংগ্রহ করা আখ থেকে পাতা ও আগা আলাদা করে রাখছেন। স্থানীয় লোকজনরা এসে আখের পাতা ও আগার অংশটুকু বাড়িতে নিয়ে যান গৃহপালিত গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে। পরে গুড় প্রস্তুতকারীরা আখ থেকে একটি মেশিনের মাধ্যমে রস বের করেন। পাশেই একটি উনুনে চাপানো বিশাল লোহার কড়াইতে আখের রস জ্বাল দিতে দেখা যায় তাদের। rপরে ঠান্ডা হলে শক্ত গুড় হাতের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট আকার দেন তারা। এভাবেই তৈরি হচ্ছে আখের রসের গুড়।

স্থানীয় আখচাষিরা জানান, এখানকার গুড় নির্ভেজাল ও খাঁটি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রচুর  চাহিদা রয়েছে। আখ চাষে খরচ কম ও তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে ভেড়ামারা উপজেলায় আখ ও গুড়ের উৎপাদন বাড়বে। 

আখের গুড় প্রস্তুতকারী মো. মনসের আলী বলেন, আমি নাটোর লালপুর থেকে এখানে গুড় তৈরির কাজ করতে এসেছি। আমি ১৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই আমরা মহাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আখের রস থেকে গুড় বানানোর কাজ করি। আখ কাটা থেকে শুরু করে গুড় তৈরি পর্যন্ত প্রায় এক মাস এখানে থাকতে হয়। এরপর আবার অন্য এলাকায় আখ থেকে গুড় তৈরির জন্য যাবো। এভাবেই শীতের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করতে হয়।  

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৩ কড়াই গুড় তৈরি করি। পারিশ্রমিক হিসেবে কড়াই প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা পাই। মোটামুটি ভালোভাবেই বেঁচে আছি।

আখ চাষি খবির উদ্দীন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষে খরচ হয় মাত্র ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি আখের গুড় পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রি করা যায় ১৫০ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গুড় সরবরাহ করা হয় ভেড়ামারা থেকে। সরকারি প্রণোদনা পেলে আরও ব্যাপকভাবে আখের গুড় উৎপাদন বাড়াতে পারবেন বলে জানান এই কৃষক।

এলাকাবাসী জানান, তাদের বাড়িতে থাকা গৃহপালিত পশুর জন্য প্রচুর পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হয়। এই শীত মৌসুমে আমরা কেটে ফেলা আখ থেকে পাতা ও আগার অংশ নিয়ে আসি। এতে আখ চাষিদেরও লাভ হয় এবং আমরা গরু-ছাগলের জন্য খাদ্য পেয়ে যাই।

আখ মাড়াই কাজে যারা নিয়োজিত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখের রস জ্বাল দেওয়ার পর তা ঘন হয়ে উঠলে টিনের তৈরি ড্রামের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। উত্তাপ কমে এলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে গুড় জমাট বাঁধে। এছাড়া, আখের রশিও (তরল গুড়) বাজারে বিক্রি হয়। তরল গুড় আলাদা বোতলে সংরক্ষণ করা হয় বাজারজাতের উদ্দেশ্যে। আখের মান ভালো হলে প্রতি খোলা (গুড় জ্বাল দেওয়ার কড়াই) থেকে ৪০-৫০ কেজির মতো গুড় পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার-পাঁচটি গুড়ের খোলা ওঠানো সম্ভব হয়।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের অফিসার মাহমুদা সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে ভেড়ামারা উপজেলার ৮ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। আখ চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দ না থাকায় আমরা তাদের শুধু পরামর্শ দিয়ে থাকি।

কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়