ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

মানিকগঞ্জে নেই ভালো মানের বাস সার্ভিস, ভোগান্তিতে যাত্রীরা 

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ৪ মার্চ ২০২৪  
মানিকগঞ্জে নেই ভালো মানের বাস সার্ভিস, ভোগান্তিতে যাত্রীরা 

ঢাকা-মানিকগঞ্জ পথে চলাচলকারী বাসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, কয়েকটি পরিবহনের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। পুরাতন বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সিটিং সার্ভিস বললেও যেখানে-সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এর ফলে, এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। 

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসব বাসের এক-তৃতীয়াংশই মেরামতের জন্য পড়ে থাকে, বাকি দুই ভাগ বাসে যাত্রী পরিবহন করা হয়। অধিকাংশ বাস পুরাতন। অনেক বাসের ফিটনেসও নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন  বলেন, ‘আমাদের মতো প্রবীণ ব্যক্তিদের ভোগান্তি আরও বেশি। বাসের হেলপাররা পায়ে ধরে গাড়িতে ওঠায়, ঘাড় ধরে নামিয়ে দেয়। এখানে পরিবহন সেবার মান নেই বললেই চলে। যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছেন পরিবহনের মালিকরা। এই রুটে (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হলেও নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে ৮-১০টি স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করে। এছাড়া, ঘন ঘন আসন হওয়ায় যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। ভাড়াও বেশি।’

মানিকগঞ্জ শহর থেকে ঢাকায় যাত্রীদের যাতায়াতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি লিংক পরিবহনের ১০টি বাস নামানো হয়। তবে, বাসমালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দুই বছর পর এসব বাস বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সরকারি সংস্থা বিআরটিসির বাসও বন্ধ ৭ বছর ধরে।

বিআরটিসির মানিকগঞ্জের উথলী ডিপো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে উথলী ডিপোর জন্য ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বিআরটিসির ৪০টি নতুন দোতলা বাস দেওয়া হয়। ওই বছরের ৪ মে এসব বাস চালুর কথা থাকলেও পরিবহন মালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। এই রুটে বিআরটিসির ১৬টি বাস চলাচল করলেও এগুলো একেবারে লক্কড়-ঝক্কড় ছিল। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় প্রায় সাত বছর আগে বিআরটিসির এসব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এই ডিপোর অধীনে বিআরটিসির কোনো বাস নেই।

জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-অটো টেম্পো ওনার্স গ্রুপের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানিকগঞ্জে নতুন বাস নামানো যায়নি। তবে, বিআরটিসির বাসের জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পরিবহন ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটিসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ট্রেন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব বিমল রায় বলেন, ‘ঢাকার অতি নিকটে হওয়ার পরও আমরা মানসম্মত পরিবহন সেবায় পিছিয়ে। রেললাইন স্থাপন করা হলে ঢাকায় যাতায়াতে শুধু মানিকগঞ্জবাসীর নয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদেরও সুবিধা হবে।’

ব্যক্তিগত ও কলেজের কাজে মাঝেমধ্যে ঢাকায় যাতায়াত করেন মানিকগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ও একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ। গণপরিবহনের নাজুক অবস্থার জন্য জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়ী করে তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের অন্য জেলাগুলোতে বিআরটিসির উন্নত (এসি) বাস চলাচল করে। শুধু মানিকগঞ্জেই বিআরটিসির বাস নেই। এখানে যেসব পরিবহনের বাস চলে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের ও পুরাতন। অধিকাংশ পরিবহনের বাস পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে জেলা সদর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে। জেলা সদরের যাত্রীদের এসব বাসে প্রায় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। 

বিআরটিসির উথলী ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. নায়েব আলী  বলেন, সামনে বিআরটিসির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন বাস আসছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও এই বাস নামানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, উন্নত পরিবহন সেবায় এই জেলা পিছিয়ে। ১৪ মার্চ অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সভা করা হবে। কীভাবে উন্নত পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা যায়, সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়