ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

ভারতীয় পণ্য বর্জনের উদ্দেশ্য বাজার অস্থিতিশীল করা : ড. হাছান  

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৩ মার্চ ২০২৪  
ভারতীয় পণ্য বর্জনের উদ্দেশ্য বাজার অস্থিতিশীল করা : ড. হাছান  

বক্তব্য রাখছেন ড. হাছান মাহমুদ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আসলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ানো বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। এতে দেশে যাতে জনগণের ভোগান্তি হয় এবং পণ্যের মূল্য বাড়ে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। কয়েক দিন আগে বিএনপির নেতা রুহুল কবীর রিজভী নিজের গায়ের শাল পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরিধান করবেন, আপনাদের নেত্রী যারা মাঠে গলা ফাটান, তারাও আবার ভারতীয় শাড়ি পরবেন, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে আপনারা ইফতার করবেন, সেহেরি খাবেন, কদিন আগে তাদের নেতা ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবারও আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবেন; এগুলো হিপোক্রেসি (ভণ্ডামি) ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ 

শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক সম্পর্কে সাংবাদিকরা সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এ সব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের যারা ডাক দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে শামিল হয়ে রিজভী সাহেব নিজের শালও জ্বালিয়ে দিলেন। আসলে শালটি ভারত থেকে কিনেছেন, নাকি বঙ্গবাজার থেকে; আমি জানি না।’

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে জিম্মি বাংলাদেশের জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা রাখা হচ্ছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়, তাদের মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখন যতদ্রুত সম্ভব তাদের মুক্ত করার চেষ্টা আমরা করছি। এখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে ক্ষতি না হয়; সেভাবে আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’ 

তিনি বলেন, ‘জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে। কয়লা দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না, যাতে করে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি। যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, তারা ইতোমধ্যে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছে। আপনারা নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন, তারাও অনেকটা আশস্ত। আশা করছি, আমরা সহসা নাবিকদের উদ্ধার করতে পারব।’

চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং প্রকল্পের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হতে আরও আড়াই বছর বাকি আছে। এই আড়াই বছরের মধ্যে জনগণের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একইসঙ্গে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর যাতে নিয়মিতভাবে মেনটেইনেন্স করা হয়, সেটিকেও গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আজকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বে-টার্মিনালের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচশত একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন। আরও তিনশত একরের বেশি জায়গা তারা পাবে, সেটির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। ইতোমধ্যে ডিপি ওর্য়াল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে তিনটি ভাগে কাজ হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও সেখানে যুক্ত হচ্ছে। এটা বড় অগ্রগতি।’  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বে-টার্মিনাল হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরও বড় একটি নতুন বন্দর হবে। যেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্পদ হবে এবং একইসঙ্গে এই বে-টার্মিনাল দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পণ্য সরবরাহ আমরা করতে পারব।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, এমএ ছালাম, এমএ মোতালেব, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, পুলিশের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
 

রেজাউল/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়