নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁর ভাইকে অপহরণ

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।

সিংড়া থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ৮ মের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবীব। রোববার (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আজ সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার নাটোর স্টেশন এলাকার কম্পিউটারের দোকানে আসেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সী ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। তাঁরা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে এলে কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন যুবক তাঁদের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁদের জোর করে ওই মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় দেলোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনা জানান। তবে বেলা ৩টা ৩২ মিনিটে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম ফোনে একজন সাংবাদিককে জানান, নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে মাইক্রোবাসে করে তাঁদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি তাঁর মোবাইল ফোনে অপহৃত আলাউদ্দিন মুন্সীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।

এ সময় আলাউদ্দিন মুন্সী সাংবাদিককে জানান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম তাদের নাটোর থেকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে আছেন।

বিকেল পৌনে ৪টার দিকে দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাঁর অপর ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে। বিকেল ৪টার কিছু পরপরই একই মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান।

এ সময় সেখানে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিক কামাল হোসেন জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে মোহন আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ‘৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকালের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। অপহৃত দু্ই জনকে মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হচ্ছে। আমরা তাঁদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। পরের ঘটনা আমার থানা এলাকার বাইরে। তাই এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকালের ঘটনা আমি জানতাম না। বিকেলের ঘটনার কথা শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে পুলিশ দুর্বৃত্তদের আটক করার জন্য ও অপহৃত দেলোয়ারকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।’

জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা বলেন, ‘আমি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে ওই প্রার্থীকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’