ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে নিখোঁজ, বাড়ি ফিরলেন ১৪ বছর পর

ফেনী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০০, ১ জুন ২০২৪   আপডেট: ২০:১৫, ১ জুন ২০২৪
বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে নিখোঁজ, বাড়ি ফিরলেন ১৪ বছর পর

চাচাতো ভাই নূর নবী ও বোন রহিমা নাজমার মাঝখানে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত উদ্ধার হওয়া খোকা

নিজের বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে ২০১০ সালে নিখোঁজ হন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান খোকা। থানায় জিডি ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েও তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। ছেলে ফিরে আসবে এমন ধারণা থেকে প্রতিদিন তার শোবার ঘর গুছিয়ে রাখতেন মা নুরজাহান বেগম (৭০)। অবশেষে ১৪ বছর পর রাঙামাটি জেলার তবলছড়ি এলাকায় মিলেছে খোকার সন্ধান। গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে ৪৪ বছর বয়সী খোকাকে বাড়িতে ফেরিয়ে নিয়ে আসেন।

খোকা সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের জালাল মেম্বারবাড়ির মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে।

আরো পড়ুন:

স্বজনরা জানান, ২০১০ সালে বিয়ের ঠিক দুই দিন আগে নিখোঁজ হন খোকা। সেসময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। এরপর নানাভাবে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি তার। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এমনকি যে নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তিনিও প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করেন খোকার জন্য। পরে তিনি অন্যত্র বিয়ে করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর খোকাকে ফেরত পেয়ে খুশি স্বজনরা। তবে, পরিবারে সদস্যদের কাউকেই চিনতে পারছেন না তিনি। স্বজনদের কথায় আস্থা রেখে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে দেখা গেছে তাকে। পরিবারের শঙ্কা, বিয়ের কেনাকাটা করতে যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে খোকার মানুষ না চেনার সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু সুফিয়ান বলেন, গত মাস দুয়েক আগে খোকার ভাগ্নে আকাশ কাজের সুবাদে রাঙামাটির তবলছড়িতে যান। সেখানে তিনি খোকাকে কয়েকবার দেখতে পান। বিষয়টি তিনি পরিবারের সদস্যদের জানান। গত ২৫ মে সেখানকার একটি চায়ের দোকানে আবারও খোকাকে দেখতে পান তিনি। পরে তিনি ভিডিও করে পরিবারের লোকজনের কাছে পাঠান। ওই ভিডিও দেখে খোকার মা, ভাই-বোনেরা খোকাকে শনাক্ত করেন। পরে তারা খোকাকে আনতে যান। সঙ্গে করে নিখোঁজ হওয়ার আগের কিছু ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, খোকাকে আনতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজের পর থেকে খোকা রাঙামাটি উপজেলার তবলছড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে থাকতেন। সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। খোকা যে ঘরে থাকতেন সেখান থেকে তার জমানো ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। ওই টাকা পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খোকার বোন রহিমা নাজমা বলেন, আমার ভাই তার বিয়ে ও গায়ে হলুদের বাজার করার জন্য ফেনীতে যান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তখন থেকে সব জায়গায় খোঁজ করেছি। থানায় সাধারণ ডায়েরি করছি। ভাই আমাদের কাউকে চিনতে পারছেন না। তবুও ১৪ বছর পর ভাইকে পেয়ে আমার পরিবারের সবাই খুশি।

খোকার মা নুরজাহান বেগম বলেন, ১৪টি বছর। দীর্ঘ এই সময় আমি আমার কলিজার সন্তানের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, সে একদিন ফিরে আসবে। প্রতিদিন রাতে তার থাকার ঘরের বিছানা গুছিয়ে রাখতাম। আমি ভাবতাম, সে অনেক কষ্টে আছে। রাঙামাটির লোকজনের কাছে আমার খোকা খুব আদরে ছিল।

সাহাব/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়